বিজ্ঞাপন

‘আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল পদ একে অপরের পরিপূরক’

January 19, 2021 | 5:45 pm

তিন দশক ধরে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করে আসা এ এম আমিন উদ্দিন ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর মৌলভীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর রাজধানীর সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে ১৯৮২ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এএম আমিন উদ্দিন ১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৮৯ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০০৩ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবীর তালিকায় আসেন। ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। আমিন উদ্দিন ২০১৯-২০২০ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। এবার পুনর্নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার আগে তিনি সমিতির সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে ২০০০ থেকে ২০০১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আগে চার বছর তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ পান এ এম আমিন উদ্দিন

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি তিনি সারাবাংলার সাপ্তাহিক আইনি পরামর্শবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘লিগ্যাল চেম্বারস’ ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ‘অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব ও সীমাবদ্ধতা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এতে সঞ্চালক ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন। এছাড়া আলোচনা ও প্রশ্নোত্তরে অংশ নেন অ্যাডভোকেট এম সাঈদ আহমদ রাজা, ব্যারিস্টার আলিফ আসিফ খান, ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ শেখ নিপ্পন। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে অতিথিদের প্রশ্নোত্তর পর্বটি গত বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টায় সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচার হয়। ওই অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর ও কথোপকথন সারাবাংলার পাঠকদের জন্য অনুলিখন করে প্রকাশ করা হলো—

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে আইনজীবীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এখন আপনি আমাদের দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল। কীভাবে এ দুটো দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করেছেন?

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন: আসলে দুটো দায়িত্ব হচ্ছে- একটি অপরটির পরিপূরক। এটি কিন্তু সাংঘর্ষিক নয়। ফলে দায়িত্ব পালন আমার জন্য খুবই সহজ। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে আমার দায়িত্ব হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সুযোগ-সুবিধা ও ভালো-মন্দ বিষয়গুলো দেখা। এটি আমার মূল দায়িত্ব। পাশাপাশি আদালত অঙ্গনের পরিবেশটা বজায় রাখা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আমার ওপর বর্তায়। এছাড়া আইনজীবী হিসেবে মামলাগুলো দেখা, রাষ্টপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা, সেইসঙ্গে বারের আইনজীবীরা যেন ঠিকমতো পারফর্ম করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। এই দুটো দায়িত্ব আমার মনে হয় সাংঘর্ষিক নয়, পরিপূরক। ফলে কোনো সমস্যা হয় না। আমার মনে হয়, আমি দুটো দায়িত্বই খুব ভালোভাবে চালাচ্ছি। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আরেকটা সুবিধা হচ্ছে- বারের উন্নয়নের জন্য সরকারি সাহায্য নিতে পারি। যেটা এখন হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

অ্যাডভোকেট এম সাঈদ আহমেদ রাজা: ভারতে যখন কোনো আদালত অবমাননার মামলা হয়, তখন অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ওই অফিসের ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। ঠিক সেরকমই আমাদের বাদীর পক্ষে কোনো মামলা বা আপিল করতে হলে সলিসিটর উইং থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। এজন্য আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলছি, পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন বিষয়ে আমাদের এখানে একটি জুরিডিকশন ভারতের মতো ডেভেলপ করে গেছে। ক্লাসিক যে পাঁচটি রিট আছে সেই রিটগুলোর বাইরেও পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়।

পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন বিষয়ে ক্লাসিক সমস্যা আছে। সেই সমস্যাগুলো হচ্ছে- যার বিরুদ্ধে নোটিশ যাচ্ছে, যার বিরুদ্ধে রুল যাচ্ছে, তাকেই এসে প্রমাণ করতে হচ্ছে ওনারা এ কাজগুলো করেনি। ভারডেন অব প্রুফ চেঞ্জ হয়ে যায়। এটা কিন্তু আমাদের লিগ্যাল সিস্টেমটাকে সাপোর্ট করে না। শুধু পিআইয়ের (পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন) ক্ষেত্রে একসেপশনাল সারকামটেনসেস। এখানে যদি স্পেসিফিক নোটিশ দেওয়া হয় টু দ্য অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস, যেখানে আপনারা একটা স্পেশাল প্রয়োজনীয়তা মনে করবেন। যেখানে কোর্টগুলো ইন্টাফেয়ার করবে। এজন্য আমাদের মাসরুম গ্রোথ অব পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশনে আইনজীবীদের অনেককে কোর্ট থেকে বিভিন্ন সময়ে ফাইন করা হচ্ছে। এগুলো কীভাবে বন্ধ করা যায়?

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন: আমি আপনার সঙ্গে একমত। দেখুন, আমাদের দেশে কতগুলো পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কতগুলো সত্যিকারের পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন আর কতগুলো পাবলিসিটি পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন। আপনার কথার সূত্র ধরে বলতে চাই, এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এটা যেন সত্যিকারের পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন সার্ভ করা হয়। নদী ও ট্যানারি নিয়ে মামলাগুলো দেখেন- এগুলো পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন সার্ভ করছে। এছাড়া অনেক অসহায় মানুষের পক্ষে কিছু মামলা হয়েছে। পাবলিকের বড় একটা জনগোষ্ঠীর পক্ষে এটা কাজ করছে। কিন্তু এখন পত্রিকায় মাঝেমধ্যে দেখি, কার বিয়ে হলো না তার জন্য পিআইএল ফাইল করে দিচ্ছে। আমার মনে হয়, সময় এসেছে এইসব বিষয় শুধু রিজেক্ট করা নয়, ওদের বের করে দেওয়া উচিত। ওরা যেন দুই-তিন বছর মামলা না করতে পারে এ রকম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এভাবে যদি করা হয় তাহলে অপ্রয়োজনীয় পিআইএল ফাইল করা বন্ধ হবে।

বিজ্ঞাপন

আপনি দেখবেন অনেকে ফানি কতগুলো বিষয় নিয়ে আসে। তখন আইনজীবী হিসেবে আমার নিজের কাছে খারাপ লাগে। এগুলো কেন নিয়ে আসে? আমি একবার দেখেছিলাম। আজ থেকে বছর তিনেক আগে কোনো এক ফ্লিল্মস্টার তার ওয়াইফকে ডিভোর্স করে দিয়েছেন। উনি সেটা চ্যালেঞ্জ করতে কোর্টে চলে এসেছেন। কোর্ট বলেছেন কেন আসলেন? এটা কী কোর্টের মামলার বিষয়? কিন্তু উনি কোর্টকে বুঝাচ্ছিলেন। পরে কোর্ট বললেন ঠিক আছে, আপনারা অর্ডার নেন, আমি অর্ডার দেব। তখন তাড়াতাড়ি করে তারা নোট প্রেস করলেন। এই বিষয়গুলোয় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এখানে আমি আদালতের কাছে আবেদন রাখব, যারা পিআইএল ফাইল করছেন তাদের উদ্দেশ্যেটা দেখেন। এটি আসলে পাবলিকের জন্য করছে, না ব্যক্তিস্বার্থে করছে, সেটা যেন তারা বিবেচনায় রাখেন।

অ্যাডভোকেট এম সাঈদ আহমেদ রাজা: স্যার এজন্য আপনার কাছে রিকোয়েস্ট ছিল পিআইএল করলে কোর্টকে বলা এবং আপনাদের কাছে স্পেশাল নোটিশ দেওয়া। যেখানে আপনারা স্পেশালি এগুলো অনুমোদন দেবেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন: আমি কথা বলতে পারি কনসার্ন অথরিটির সঙ্গে। আমি দেখতে পারি, এতে কোনো ভুল আছে কিনা। যা আদালতে আসার আগে ঠিক করে নেওয়া যায়। আপনাদের সঙ্গে কথা বলে আমি চেষ্টা করব এ বিষয়ে কী করা যায়। সবাই মিলে দেখব। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিচারপতি মঈনুল ইসলাম একজন আইনজীবীকে পিআইএল করার জন্য জরিমানা করেছিলেন। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ওনাদের ওপর ফাইল করেছিলেন। এগুলো এখন কমে আসছে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে ওদের একটু নিবৃত করা যায়। যেন সত্যিকারের পিআইএল ফাইলগুলো হয়। অন্যগুলো যেন বাদ যায়।

ব্যারিস্টার আলী আসিফ খান: আজীবন আপনি পিটিশনারের আইনজীবী ছিলেন। সেটা ক্রিমিনাল হোক, রিট হোক বা অন্য যেকোনো মামলাতে হোক। ইউ আর পিটিশনার ওরিয়েনন্টেড ল’য়্যার। এখন আপনি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। এখন আপনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনজীবী হিসেবে মামলা লড়ছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- আপনি এতদিন যে মামলাগুলোয় পিটিশনারের পক্ষে লড়লেন এগুলো যখন আপিল ডিভিশনে যাচ্ছে তখন কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টেড বা একই মামলা দুই পক্ষের আইনজীবী হয়ে যাচ্ছে। আল্টিমেটলি আপিলে গিয়ে দেখা যাচ্ছে আপনি রাষ্ট্রপক্ষের, ইউ আর অবলিগেটেড রেসপন্ডেন্ট অব দ্য স্টেট। এই কনফ্লিক্টে আপনি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন?

বিজ্ঞাপন

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন: আমি যে মামলাগুলোয় সরাসরি জড়িত ছিলাম বা মামলার পক্ষে ছিলাম সেগুলো আর করি না। আমি সুপ্রিম কোর্টেও করি না। এটা আমাদের অন্য অফিসার (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) যারা আছেন, তারা করেন। কিন্তু কোনো এক লোকের পক্ষে আমি হয়তো আগে মামলা করেছি; তার বর্তমান মামলায় আমার কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। আমি সেটা করব সরকারের পক্ষে। কিন্তু তার যে মামলাটি আমি আগে করেছিলাম সে মামলায় আমি কোনোভাবে অ্যাপেয়ার করতে পারি না। কিন্তু নতুন কোনো মামলা হলে আমি অবশ্যই করছি সেটা।

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন: আপনাকে সবাই এত পছন্দ করে, যা বিরল দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে। দল-মত নির্বিশেষে সবাই আপনাকে ভীষণ পছন্দ করে। কী গুণাবলি আপনি অনুশীলন করেন আপনার জীবনে; যাতে মানুষ আপনাকে এত পছন্দ করে?

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন: দেখুন আমি যা বুঝি, প্রত্যেক মানুষকে সম্মান করতে হবে। আমাদের কাছে যারা আসবেন সবাইকে সম্মান করতে হবে। সিনিয়র-জুনিয়র যেই হোক তার কথাটা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। তারা কখনো যেন মনে না করেন- দাম্ভিকতা দেখালেন, ভাব দেখালেন। এই জিনিসটা যেন তার কখনো অনুভব না করেন। একজন তরুণ আইনজীবী যখন আমার কাছে আসে বা আমার সামনে দিয়ে যায়- তখন আমি যদি তার সাথে উৎসাহমূলক কথা বলি সে কিন্তু অনেক উৎসাহিত হয়। আমি যখন একজন সিনিয়রকে সম্মান করি এটা দেখে তিনিও কিন্তু অনেক ভালো ফিল করেন। আমি চেষ্টা করব আমার জুনিয়র যেন আমাকে সম্মান করে এবং আমি যখন একজন সিনিয়রকে সম্মান করি, আমার জুনিয়র তা দেখবে। সেক্ষেত্রে সবার সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো হয়। এখানে মামলা করতে গিয়ে একজন আরেকজনের বিরোধিতা করি। এ বিরোধিতা মামলার ক্ষেত্রে। মামলার পরে তো আমারা কারও শত্রু না। মামলার সময় কথা কাটাকাটি হতে পারে। রাগারাগি হতে পারে। কোর্ট থেকে বের হওয়ার পর আমরা একে অন্যের ভাই। আমাদের একজনের সমস্যায় আরেকজনকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরাই কোর্টেই থাকব। ক্লায়েন্টারা থাকবে না। আমি সবাইকে বলব, ব্যক্তি সম্পর্ক ধরে রাখবেন। কোনোভাবেই একজন আইনজীবী আরেকজনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন না। আমরা বিশেষ করে জুনিয়রদের উৎসাহিত করব। তারা যেন ভালো মামলা করে। তাদের কোনো ঘাটতি থাকলে পরামর্শ দেবো।

ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ শেখ নিপ্পন: দেশের পুরাতন আইনগুলো যুগোপযোগী করতে কোনো ধরনের পরিকল্পনা আছে কিনা এবং আপনার জায়গা থেকে কোনো সুযোগ আছে কিনা?

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন: যদি কোনো আইন যুগোপযোগী করার প্রয়োজন হয় তাহলে আমি অবশ্যই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব। যখন যেটা প্রয়োজন হয় আমি আইনমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করব।

ব্যারিস্টার আলী আসিফ খান: বিশাল সংখ্যক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের গেটের অপর পাশে বসে আছেন। তারা কবে গেটের ভেতরে ঢুকতে পারবেন? আপনি কি উদ্যোগ নেবেন? মন্ত্রণালয়গুলো যদি নিজেদের ল’য়ার প্যানেল তৈরি করে, সেখানে কিন্তু আইনজীবীরা সুযোগ পায়। এখানে যারা দক্ষ হয়ে উঠবেন ভবিষ্যতে তাদের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটনি জেনারেল হিসেবে নিতে পারবেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন: ইতোমধ্যে কয়েকটি মন্ত্রণালয় তারা নিজেদের আইনজীবী নিয়েছেন। আমরাও চাই, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের যেন নিজস্ব ল’য়ার উইং থাকে। তাহলে মামলাগুলো সহজে করতে পারবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি মন্ত্রণালয় করে নিয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা ফাইল করার কারণে বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট পরীক্ষা নিতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। এখন থেকে আমরা প্রতি বছর কমপক্ষে একবার পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করব। এক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন দায়িত্বশীল হয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এছাড়া আমরা নতুন আইনজীবীদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা নেব।

ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ শেখ নিপ্পন: অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আপনি তো রাষ্ট্রের সরকারি আইনজীবীদের প্রধান। সেই হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে যারা ডিএজি বা এএজি আছেন তাদের একটা সুপারভিশন এবং তত্ত্বাবধান আপনার মাধ্যমে হয়। বাংলাদেশে যত কোর্ট আছে সেই কোর্টগুলোতে পাবলিক প্রসিকিউটর বা যারা জিপি, এপিপি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত তাদেরকেও আপনার সুপারভাইজ করতে হয়। আপনি এত বড় বাল্কের কাজ কীভাবে সমন্বয় করেন?

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন: আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ডিএজি, এএজিদেরকে সমন্বয়ের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে বসে কাজ করি। তবে পাবলিক প্রসিকিউটর বা জিপি ও এপিপিদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। সেটা আইন মন্ত্রণালয় ও সলিসিটর উইং দেখে এবং নিয়ন্ত্রণ করে। ওনাদের জবাবদিহিতা আইন মন্ত্রণালয় ও সলিসিটর উইংয়ের কাছে। ডিএজি ও এএজিদের কাজের সমন্বয় করার দায়িত্ব আমাদের। কে, কীভাবে কাজ করবে সেসব বিষয়ে আমরা সহায়তা করি।

অ্যাডভোকেট মিতি ফারজানা: করোনাকালে ভার্চুয়াল কোর্টের সফলতা কতটুক বলে আপনি মনে করেন। এবং আমাদের সমগ্র বিচার কার্যক্রমের ডিজিটালাইজেশনের জন্য কী রকম অগ্রগতি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে কী ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন: এখন পর্যন্ত আপিল বিভাগ ভার্চুয়ালি প্রায় তিন হাজার মামলা নিষ্পত্তি করেছে। বিচারপ্রার্থী জনগণ তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার প্রয়োগ করতে পারছে। ভার্চুয়াল কোর্ট না করলে আমাদের ঘরেই বসে থাকতে হতো। অর্থাৎ ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় আমাদের দেশ অনেকখানি অগ্রসর হয়েছে। এটুআইয়ের মাধ্যমে আমরা জিজিটালাইজড হচ্ছি। আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সব ফাইল এটুআই ডিজিটালাইজড করে দেবে। অনেক ক্ষেত্রে এফআইআর এবং চার্জশিট জাল করে জমা দেওয়া হয়। ডিজিটালাইজড হওয়ার পরে ফাইল আপলোড করে দিলে বিচারক নিজেই দেখে নিতে পারবেন। এতে জালিয়াতি বন্ধ হয়ে যাবে।

অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা: আমাদের আইনজীবীদের মধ্যে যাদের অল্প সংখ্যক মামলা আছে। সেগুলোর জন্য রুল নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুনানি করা যাচ্ছে না। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আপনার পদক্ষেপ জানতে চাচ্ছি।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন: আমারও মনে হয়, মামলার নিষ্পত্তির হার বাড়াতে হবে। সেজন্য আইনমন্ত্রী মহোদয়কে বলব যেন আরও কিছু বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়। আমাদের দেশে ১৮ কোটি মানুষ। বর্তমানে বিচারক ১০০ জনের কম। বিচারকের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। বিচারক নিয়োগ হলে বেঞ্চের সংখ্যাও বাড়াতে পারব। মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা বলেছি। মামলার নিষ্পত্তি কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আলাপ করেছি। একই ক্যাটাগরির দুই-তিনশ মামলা- যেগুলোর একটি পড়েই বাকিগুলো শেষ করে দেওয়া যায়। এভাবেই চেষ্টা করছি। আশা করছি এ বছর আমরা অনেকটাই এগুতে পারব।

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন: অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আপনি নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চান। বিশেষ কোনো কর্ম পরিকল্পনা আছে কিনা? অথবা আইন-অঙ্গন নিয়ে আপনার কি বিশেষ কোনো স্বপ্ন আছে?

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন: আমি মনে করি, আমার ছেলে বা ভাই আইনজীবী হবে। কিংবা পরবর্তী প্রজন্ম আসবে। তারা যেন সব উন্নত দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে। তারা যেন পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় নিজেকে আইনজীবী হিসেবে প্রমাণ করতে পারে। এ জায়গাটায় বাংলাদেশের আইন-অঙ্গনকে দেখতে চাই।

আমি দেখতে চাই, আমাদের জাজমেন্ট পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় রেফার করা হচ্ছে। আমরা যেমন আজকে ভারতের জাজমেন্ট রেফার করি। আমি আশা করব, আমাদের জাজমেন্ট ভারত রেফার করবে। আমাদের অনেকগুলো জাজমেন্ট রয়েছে। সেই জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের তরুণদের এনক্লোজার অনেক বেশি। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার বিচরণ করছে। তারা যখন বিচারক হবে আমাদের বিচার ব্যবস্থা অনেক উন্নত হবে এবং আধুনিক হবে। আমার স্বপ্ন বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা একদিন পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন: সারাবাংলাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন