বিজ্ঞাপন

নৌকায় ভোট চাইলেন চসিক প্রশাসক, খতিয়ে দেখবে ইসি

January 22, 2021 | 7:31 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য নগরবাসীর কাছে ভোট চেয়েছেন। সুজনের এই কর্মকাণ্ডে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে কি না সেটা খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় সভায় সুজন রেজাউলের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। চসিকের প্রশাসক পদে থাকায় প্রকাশ্য প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে না পারলেও মতবিনিময় সভা ডেকে ভোট চাইলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

গত বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সেই নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের পাঁচবছর মেয়াদ শেষ হলে গত বছরের আগস্টে খোরশেদ আলম সুজনকে অতিরিক্ত সচিবের মর্যাদায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। ৬ আগস্ট তিনি প্রশাসকের দায়িত্বভার নেন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি সুজনের ছয় মাসের মেয়াদ শেষ হবে।

নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর দুই দিন আগে গত ৬ জানুয়ারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন খোরশেদ আলম সুজন। ২১ জানুয়ারি তার কোভিড নেগেটিভ ফল আসে। একদিন পরেই তিনি দলীয় মেয়র প্রার্থী রেজাউলের সমর্থনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আসেন।

বিজ্ঞাপন

খোরশেদ আলম সুজনের নিজেরও আশঙ্কা, ভোট চেয়ে তিনি আচরণবিধি ভাঙছেন। এজন্য মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘বিবেকের তাড়নায় এই বার্তা দিতে এসেছি। যদি দোষ হয়, ক্ষমা চাই। শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠুভাবে যেন ভোট হয়। আর ২৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত শেখ হাসিনার প্রার্থীকে জয়ী করে চট্টগ্রামকে এগিয়ে নিতে নেত্রীর যে প্রকল্প তাতে সহযোগিতা করুন।’

দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারা জীবনের ‘কঠিন সময়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রজীবনে সেই ১৯৭০ সাল থেকে সব নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ছিলাম। পরে স্থানীয় হোক, জাতীয় হোক মনোনয়ন চেয়েছি। না পেলেও ঘরে বসে থাকিনি। দলের সিদ্ধান্তই মুখ্য। যারা রাজনীতিতে বিশ্বাস করি তাদের দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। এবার প্রথম আমার জীবনে কঠিন সময়। কারণ দায়িত্বে থাকায় নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছি না। আমি একটা খাঁচার পাখির মতো, যেন বন্দিশালা। দেখছি সবাই মিছিল করছে মিটিং করছে। ভিতরের যে ছটফটানিটা কাউকে বলতে পারছি না। একজন রাজনৈতিক কর্মীর এ কষ্ট যারা রাজনীতি করেনি তারা ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না।’

চট্টগ্রামকে ঘিরে বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞের কথা তুলে ধরে সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রাম এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের অপেক্ষায় আছে। এই অবস্থায় আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শেখ হাসিনা যাকে প্রার্থী দিয়েছেন তাকেই জিতিয়ে আনতে হবে চট্টগ্রামের স্বার্থে। এই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জিতলে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তবে বিএনপির যেটা সুবিধা হচ্ছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছে। আমার মনে হচ্ছে, বিএনপিরও যারা সচেতন আছে- চট্টগ্রামের স্বার্থে, চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার প্রার্থীকে জয়যুক্ত করাটা তাদের বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে।’

বিজ্ঞাপন

নিজ দলের নেতাকর্মীদের সংঘাতে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের অনুরোধ করব কোথাও যেন আর সংঘাত-সংঘর্ষে না জড়ায়। ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে জয় করুন। শক্তি দিয়ে নয়। ভালোবাসার জয় চিরস্থায়ী হয়। নির্বাচন আসলে একটা উত্তাপ থাকে। উত্তাপ হলো নির্বাচনের প্রাণ। তবে এই উত্তাপটা যেন আত্মঘাতী না হয়। উত্তাপ যেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত না করে। সকলের কাছে করজোড়ে এ আহ্বান জানাব।’

‘এখন মিছিল মিটিং ছাড়াও ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে পারেন। কারো মুখ কারো দেখারও দরকার নেই। নিজের প্রচারণা ফেসবুক থেকেও করা যায়। নির্বাচনের পর সকল চট্টগ্রামবাসী যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে। টুকটাক যা হওয়ার হয়ে গেছে আর যেন না হয়। সবাই প্রশাসনকে সহায়তা করুন।’- বলেন চসিক প্রশাসক।

ভবিষ্যতের মেয়রের প্রতি সুজন বলেন, ‘যেই নির্বাচিত হন, একটাই অনুরোধ, দল থেকে নির্বাচিত হলেও নির্বাচিত হওয়ার পরে নগরপিতা মানে সব নগরবাসীর দায়িত্ব যেন নেন। আর পাবলিক প্রপার্টিকে যেন নিজের সম্পত্তি মনে না করেন। সকল মতের মানুষকে নিয়ে এই শহরকে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।’

সুজন বলেন, ‘আগামী পাঁচ-দশ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ যোগাযোগ কেন্দ্র। এটাকে উপলব্ধি করতে পেরেই প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করছেন। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে আলাদা জগৎ গড়ে উঠছে। মিরসরাই ইকোনমিক জোনে সারা পৃথিবীর বিনিয়োগকারীরা ছুটে আসছে।’

বিজ্ঞাপন

‘মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রথম নির্বাচনে ২৮ দফায় ছিল পতেঙ্গা থেকে ফেনী হাইওয়ে পর্যন্ত বাইপাস রোড করতে হবে। আজ আউটার রিং রোড হয়েছে। নেত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই সড়ক মিরসরাই ইকোনমিক জোন পর্যন্ত যাবে। এরপরই ফেনী হাইওয়ে। কর্ণফুলীর টানেলের কথা মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন। রাজনৈতিক স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন তিনি।’- বলেন সুজন।

প্রশাসক হিসেবে নিজের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সুজন বলেন, ‘ছয় মাসের মধ্যে দেড়মাসের মতই ছুটি ছিল। এর মধ্যে যতটুকু পেরেছি আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্বটাকে পালনের চেষ্টা করেছি। সাধ্যে যা কুলায়, অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, মেধা সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি। যে স্বপ্নের চট্টগ্রাম হৃদয়ে লালন করেছি তা গড়ে তোলার জন্য। চট্টগ্রামবাসী ও মিডিয়ার ভাইয়েরা অফুরন্ত সমর্থন আমাকে দিয়েছেন। মানুষ একমাস পরেই বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু কেউ তা করেনি। সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। যারা ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন তা সমাধানের চেষ্টা করেছি। সব সাফল্য চট্টগ্রামবাসীর।’

সদ্য করোনামুক্ত হওয়ায় শারীরিক দুর্বলতার কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি খোরশেদ আলম সুজন।

উল্লেখ্য, গত ১১ জানুয়ারি চসিক নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান মন্ত্রী-এমপি ও সরকারি সুবিধাভোগী ‍গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ নিয়ে একটি নির্দেশনা জারি করেন।

নির্দেশনায় বলা হয়, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ৮ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা, ২০১৬ এর ২২ অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাচন পূর্ব সময়ে কোনো ধরনের নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ভোটার হলে তিনি তার ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। কিন্তু উক্ত সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনি কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র, সরকারি যানবাহন, অন্য কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারিকে ব্যবহার করতে পারবেন না।

আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মানে প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পীকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি এবং সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়র।

চসিক প্রশাসকের মতবিনিময় সভা ও ভোট প্রার্থনার বিষয়ে জানতে চাইলে মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের মেয়র কারো পক্ষে ভোট চাইতে পারেন না। প্রশাসকের বিষয়ে বিধিতে কি বলা আছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি বিধি অনুযায়ী তিনি ভোট চাইতে না পারেন তাহলে তাকে এ বিষয়ে নিষেধ করা হবে।’

সারাবাংলা/এসএসএ

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন