বিজ্ঞাপন

দেশপ্রিয়র বাড়ি দখলমুক্ত: ২৯ জানুয়ারি আনন্দ শোভাযাত্রার ডাক

January 25, 2021 | 5:34 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ‍ব্যুরো: জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সরিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষা করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আবুল মোমেন। একইসঙ্গে ২৯ জানুয়ারি বিকেলে নগরীতে আনন্দ শোভাযাত্রার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিক সমাজ’ এর পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান চট্টগ্রাম ইতিহাস-সংস্কৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্রের সভাপতি আলীউর রহমান।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে যুববিদ্রোহের মাধ্যমে চট্টগ্রামে স্বাধীনতার ঘোষণা করা হয়েছিল, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত। তারও আগে এ জনপদে আন্দোলনরত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ সরকারের অন্যায় ও দুঃশাসনের মোকাবিলা করেছিলেন বরমা গ্রামের কৃতি সন্তান ব্যারিস্টার দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত। চট্টগ্রাম বহু কৃতি মানুষের জন্মস্থান ও স্মৃতিধন্য পূণ্যভূমি। দুর্ভাগ্যের বিষয় পাকিস্তান আমলে বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম ও কৃতি ব্যক্তিদের কোনো স্মৃতিরক্ষা হয়নি, যথাযথ সম্মানও তারা পাননি। আবার মুক্তিযুদ্ধে বন্দরনগরীর বিশেষ ভূমিকা সত্ত্বেও সেই স্মৃতি সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা হয়নি।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সচেতনতার অভাব এবং একশ্রেণির মানুষের চরম লোভের শিকার হয়ে ইতিহাসের স্মৃতি; এমন সম্পদ বেদখল হয়েছে, লুণ্ঠিত হয়েছে এবং ধ্বংস হচ্ছে। এরকম দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি হতে যাচ্ছিল দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন ও নেলী সেনগুপ্তের বাসভবনটি। সাংবাদিক ও সচেতন জনগণের ঐকান্তিক সহযোগিতায় ভবনটি দখল ও ভেঙে ফেলার চক্রান্ত ঠেকাতে সক্ষম হয়েছি। আবারও প্রমাণিত হল গণমাধ্যম ও জনগণের শক্তি বিপুল। এই শক্তির সক্রিয় ভূমিকা নাগরিক সমাজকে অনেক ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়নে সফল করে তুলতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই বাড়িটি রক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়ায়। জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ধন্যবাদ জানাই।

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আমরা যতীন্দ্রমোহন সেনের দুই নাতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছি। তারা নিউজিল্যান্ডে বসবাস করেন। এই জাদুঘরে স্থাপনে তাদের সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্মৃতি চিহ্ন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। একটি ভালো জাদুঘর করতে সেসব সংগ্রহ করে আধুনিকভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য আমরা সরকারের সব ধরনের সহযোগিতা কামনা করছি। সেই সাথে এরকম দুর্লভ কোনো স্মৃতিচিহ্ন, তথ্য থাকলে তা চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক সমাজকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় এ ভবনটি রক্ষা হয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। একটি যাদুঘর করতে যেসব বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রয়োজন আমরা তাদের সাথে ইতোমধ্যেই কথা বলা শুরু করেছি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এখন সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষু, পরিবেশবিদ ইদ্রিস আলী, বাকবিশিস নেতা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, উদীচী সংগঠক প্রবাল দে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতা তাপস হোড় ও শ্যামল কুমার পালিত, ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, আইনজীবী রুবেল পাল।

উল্লেখ্য, নগরীর রহমতগঞ্জে ঐতিহাসিক বাড়িটি আঠারো শতকের খ্যাতিমান বাঙালি আইনজীবী যাত্রামোহন সেনগুপ্তের। তাঁর ছেলে দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৩৩ সালে কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান। তাঁর স্ত্রী কংগ্রেসনেত্রী নেলী সেনগুপ্ত ১৯৭০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে চিকিৎসার জন্য দিল্লী যান। দেশে ফিরে তিনি দেখেন, তার বাড়িটি দখল হয়ে গেছে। পরে ভারতে চলে যান তিনি। ১৯৭৩ সালে নেলী সেনগুপ্ত মারা যান। তাদের বাড়িসহ সব সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।

সেই বাড়ি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেন শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি। সেখানে প্রথমে বাংলা কলেজ এবং ১৯৭৫ সালের পর শিশুবাগ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। শামসুদ্দিনের মৃত্যুর পর তার ছেলেরা স্কুলটি পরিচালনা করছিলেন। তবে সেখানে যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি তারা অক্ষত রেখেছিলেন।

গত ৪ জানুয়ারি এম ফরিদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি বাড়িটি কিনেছেন দাবি করে কিছু লোকজন সেটি দখল করতে যান। সন্ত্রাসী কায়দায় প্রথমে শিশুবাগ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয়। এরপর বুলডোজার দিয়ে ঐতিহাসিক বাড়িটির সামনের অংশ ভাঙা শুরু করে। খবর পেয়ে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত স্থানীয়দের নিয়ে বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করেন। পরে জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। তিনি নথিপত্র পর্যালোচনা করে ভবনটি না ভাঙার নির্দেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

৬ জানুয়ারি একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বাড়ির দখল ও অবস্থানের উপর স্থিতাবস্থা জারি করে হাইকোর্ট। জেলা প্রশাসনের আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত থেকেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে আদালতের আদেশের পরও ওই জায়গায় দখলদার এম ফরিদ চৌধুরীর লোকজন সার্বক্ষণিক অবস্থান শুরু করেন।

চট্টগ্রামের প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের ধারাবাহিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত ২৩ জানুয়ারি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বের করে দিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সেই বাড়ির সামনে টানানো হয়েছে ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখা সাইনবোর্ড।

সারাবাংলা/আরডি/এএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন