বিজ্ঞাপন

নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে আ.লীগ নেতাদের কাছে বিএনপির মেয়র প্রার্থী

January 26, 2021 | 10:29 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী এ জেড এম মঈনুল হক চৌধুরী খোকন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন জমা দিয়েই তিনি চলে যান আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে দেখা করতে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে খোকনের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, যা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। বিএনপির মধ্যেও এ ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে মঈনুল হক চৌধুরী খোকন সশরীরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। এরপর চট্টগ্রাম ক্লাবে গিয়ে তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় সেখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদও ছিলেন।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে মঈনুল হক চৌধুরী খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাতকানিয়া পৌরসভা নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। কিন্তু আমার দলের যারা মনোনয়ন পাননি তারা গত কয়েকদিন ধরে আমার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে, চরিত্র হনন করেছে। তারা আমাকে এলডিপি-আওয়ামী লীগের দালাল, ত্রাণচোর বলেছে। এমনিতেই নির্বাচনের পরিস্থিতি তো আপনারা সবাই জানেন। তারপরও দল যখন আমাকে সম্মান দিয়েছে, দল বাঁচানোর জন্য আমি নির্বাচনটা করতে চেয়েছিলাম।’

‘কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রতিপক্ষের চেয়ে আমার নিজ দলের মানুষরাই আমার চরিত্র হননে নেমে পড়েছে। নিজ দলের মানুষই যদি আমাকে এভাবে চোর-গুণ্ডা, বদমাশ, দালাল বলে আখ্যায়িত করে তাহলে আমি কিভাবে নির্বাচন করব ? এছাড়া আমার কাছে আরও কিছু ইনফরমেশন ছিল। ওরা আমাকে শারীরিকভাবে বা অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছিল। মানসম্মান নিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমার দলের কতগুলো দুষ্কৃতকারীর কুচক্রীর কারণে আমি নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

নিজেকে সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন জানিয়ে খোকন বলেন, ‘১৯৮০ সালে ছাত্রদল করেছি। ৯০-৯১ সালে বিএনপির সেক্রেটারি ছিলাম। ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিএনপির সভাপতি এবং আহবায়ক ছিলাম। নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী গণআন্দোলন করেছি আমি। নব্বইয়ে আমি উপজেলা নির্বাচন করেছি। ৪০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। আমার দলের কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছে।’

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওদের সঙ্গে আমার অনেক আগের সম্পর্ক। তারা দুজন (নওফেল ও বিপ্লব) আইনজীবী। আমি নিজেও আইনজীবী। ওরা আমার কলিগ। ওদের সঙ্গে আমার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখাসাক্ষাত হয়। তারা আমাকে বড় ভাই সম্বোধন করে। আর নওফেল তো মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। আমি তাকে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী হিসেবে দেখি না। মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে আমার হৃদ্যতা ছিল। আমাদের পারিবারিক সব অনুষ্ঠানে তিনি এসেছিলেন। সে হিসেবে নওফেলের সঙ্গেও আমার একটা সম্পর্ক আছে। তাকে আমি মন্ত্রী মনে করি না। নওফেল-বিপ্লব দুজনই আমাকে খুব সম্মান করে। আমার সামনে নওফেল কখনও আগে চেয়ারে বসে না। প্রথমে আমি বসি, তারপর সে বসে।’

একই ছবিতে অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উনাদের সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় ছিল না। ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে অনেকের সঙ্গেই তো দেখাসাক্ষাত হয়। সামাজিক একটা সৌজন্যবোধ তো আছে।’

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। গত ৪০ বছর তো যোগ দিইনি। এখন কেন দেব ? আমার তো এমপি-মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নেই। আমার বয়স এখন ৬০। আল্লাহর রাস্তায় যেতে চাই। কবরে যেতে পারলেই শান্তি।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।

সাতকানিয়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনে মেয়র পদে দু’জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। একজন মোহাম্মদ জোবায়ের, আরেকজন মঈনুল হক চৌধুরী। আজ (মঙ্গলবার) প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন ছিল। মঈনুল হক চৌধুরী প্রত্যাহার করেছেন। জোবায়ের একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন