বিজ্ঞাপন

চসিকে বিজয়ী রেজাউল ছাড়া ৬ মেয়র প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত!

January 29, 2021 | 12:27 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (চসিক) নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। এই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাকি ছয় প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনও।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো নির্বাচনে কাস্টিং ভোটের (যতগুলো ভোট পড়েছে) আট ভাগের একভাগ বা ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ শতাংশের কম ভোট পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সে হিসাবে সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ছয় জনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। মেয়র পদে মোট পড়েছে ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে সেটি ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯০ ভোট। একজন মেয়র প্রার্থী জামানত রক্ষা পেতে হলে কাস্টিং ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হবে। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র পদে জামানত ফেরত পেতে হলে মেয়র প্রার্থীকে ন্যূনতম ৫৪ হাজার ৪৩৬ ভোট প্রয়োজন ছিল।

নির্বাচনের ঘোষিত ফলে দেখা যায়, নির্বাচনে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।

বিজ্ঞাপন

বাকি প্রার্থীদের মধ্যে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৮০ ভোট, মোমবাতি প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন পেয়েছেন ২ হাজার ১২৬ ভোট, চেয়ার প্রতীক নিয়ে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ পেয়েছেন ১ হাজার ১০৯ ভোট, হাতি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে খোকন চৌধুরী পেয়েছেন ৮৮৫ ভোট এবং আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী আবুল মনজুর পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৫৩ ভোট।

নৌকা প্রতীকের রেজাউল করিম ছাড়া বাকি ছয় প্রার্থীর কেউই কাস্টিং ভোটের ৮ ভাগের একভাগ, অর্থাৎ ৫৪ হাজার ৪৩৬ ভোট বা তার বেশি পাননি। সে হিসাবে এই নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী রেজাউল বাদে বাকি সবার জামানতই বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা কেন হচ্ছে, সেটা দেখতে হবে। কোনো অনুমান করে এ নিয়ে কথা বলা আমার পদ থেকে শোভা পায় না।’

বিজ্ঞাপন

এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘যদি কোনো তথ্য উপাত্ত থাকত, তাহলে আমরা বলতে পারতাম। তবে একজন প্রার্থীর সঙ্গে বাকিদের ভোটের বিপুল ব্যবধানের বিষয়টি আমাদেরও নজরে আসছে। কেউ যদি অনুসন্ধান করে আমাদের জানায়, তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। কেউ না জানালে আমরা নিজেরা অনুসন্ধান করতে পারি না।’

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সঠিক ভোট হওয়ার পর যদি ভোটের এমন ব্যবধান হয়, তাহলে আমাদের চিন্তার কারণ আছে। আর যদি সঠিক ভোট না হয়, তাহলে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার ব্যাপক কারণ আছে।’

তিনি বলেন, ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট হওয়ার কারণে পুনর্গণনা করারও কোনে সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন যা বলে, সেটাই আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। আর নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা শূন্যের কোটায়। ফলে এই ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দারুণ প্রশ্ন রয়েছে।’

সুজন সম্পাদক আরও বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্যে ছিল নির্বাচনে কারচুপি রোধ করা এবং দ্রুত ফলাফল দেওয়া। বর্তমানে সব নির্বাচনে ইভিএমে ভোট নিয়ে গণনা করতে ব্যালটের মাধ্যমে নেওয়া ভোট গণনার চেয়েও সময় বেশি লাগছে। এ ক্ষেত্রে ইভিএমে ডিজিটাল টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে ভোট কারচুপি হচ্ছে কি না, সেটি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে সবার মনে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে, নির্বাচনে ভোটের হার কম হওয়া প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের ভোট না দেওয়ার মনসিকতা দেখা দিয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন