বিজ্ঞাপন

নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণ: আইজিপি-ডিজি হেলথকে কমিটি গঠনের নির্দেশ

February 1, 2021 | 1:56 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্যতার ব্যাখ্যা দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ (এসপি) ১১ জনের নামসহ তলবের লিখিত আদেশ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় দু’টি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি হেলথ) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩১ জানুয়ারি) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সইয়ের পর ১২ পৃষ্ঠার এ আদেশ প্রকাশ করা হয়।

আদেশে যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন— ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহ; পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান; নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আরিফুল হক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান; ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. একরামুল রেজা; ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য ডা. ফাহমিদা আক্তার, ডা. তোফায়েল হক ও ডা. ফরিদা ইয়াসমিন; এবং নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দ মো. শাহরিয়ার, ডা. তাসনিম তামান্না ও ডা. মো. শফিকুল ইসলাম। তাদের আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

আদেশে রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ওই ঘটনায় নাসিরনগর থানায় দায়ের করা মামলাটি তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই শিশু ও তার পরিবারের সদস্যদের কোনো রকম হয়রানি করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

আদালত এই মামলায় ভুক্তভোগীর (শিশুর) ডাক্তারি পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম, অবহেলা বা গাফিলতি হয়েছে কি না— তা উদঘাটনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে একমাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া মামলাটি তদন্তের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম, অবহেলা বা গাফিলতি হয়েছে কি না— তা উদঘাটনের জন্য পুলিশ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে একমাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে, ১৭ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের এক ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্যতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ ১২ জনকে তলব করেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

মামলার বিবরণে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেওয়া ছাড়পত্রে বলা হয়েছে— ৩ সেপ্টেম্বর শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। সেখান থেকে দেওয়া আরেক রিপোর্টে বলা হয়, শিশুটির বাহ্যিক কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সদর হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তাদেরই আরেকটি তথ্য বলছে, জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন হয়েছে।

মামলার এজাহার ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদালত বলেছেন, ৪ সেপ্টেম্বর শিশুটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ৬ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভুক্তভোগী শিশুটি নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। চার সদস্যের চিকিৎসকের মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতন হয়েছে, বিষয়টি প্রশ্নবোধক।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুটি (৭) ধর্ষণের শিকার হয়। প্রথমে শিশুটিকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা গত ১১ সেপ্টেম্বর নাসিরনগর থানায় এক শিশুর (১২) বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলায় শিশুটি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। জামিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত নভেম্বর শিশুটিকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। একইসঙ্গে তদন্তকাজ শেষে একমাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত।

এর ধারাবাহিকতায় তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলার সিডি (কেস ডকেট) আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এসবের ওপর শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

আদালতে আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুটির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহ পরান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম।

সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর

Tags: , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন