বিজ্ঞাপন

বরিশালের জেলখালে ফের দখলের থাবা

February 7, 2021 | 9:27 am

ডিস্ট্রক্ট করেসপন্ডেন্ট

বরিশাল: জেলা নগরীর মধ্যদিয়ে প্রবাহমান ঐতিহ্যবাহী জেলখালের উৎসস্থল হচ্ছে হাটখোলা সেতু সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদী। সেখান থেকে খালটি বাজার রোড থেকে নগরীর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে এর শাখা-প্রশাখা বিভিন্ন দিকে বয়ে গেছে। দখল ও নাব্যতা হারিয়ে এক সময়ের খরস্রোতা এ খালে এখন জোয়ার-ভাটাও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে কীর্তনখোলার নদীর খালের প্রবেশমুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন জোয়ারের পানিও প্রবেশ করছে না।

বিজ্ঞাপন

সীমানা পিলার স্থাপন, দখলদার চিহ্নিতকরণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সর্বশেষ ময়লা আবর্জনা অপসারণ করা হলেও প্রাণ ফিরে পায়নি খালটি। মূলত খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা খালটিকে ময়লার ভাগাড় বানিয়ে রেখেছেন। কোথাও আবার খালপাড় পুনরায় দখল করে স্থাপনা গড়ে তুলছেন অনেকে।

তবে নগরবাসী মনে করেন, খণ্ড খণ্ড পরিকল্পনা বাদ দিয়ে কেবলমাত্র স্থায়ী ও টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে যৌবন ফিরে পেতে পারে জেলখালসহ নগরীর ২২টি খাল।

সূত্রমতে, ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে তৎকালীন সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার জেলখাল উদ্ধারে অভিযান চালান। ২০০১ সালে তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ হয়ে এসে ফের অবৈধ উচ্ছেদ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চালান। এরপর তিনিই বরিশালের সিটি মেয়র হয়ে আবারও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সেনাবাহিনী ফের উদ্ধার ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে তৎকালীন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরণ অবৈধ উচ্ছেদ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চালানোর লক্ষ্যে নৌ শোভাযাত্রা করে কার্যক্রম শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে জরিপকার্য পরিচালনা করে ৩১১ জন দখলদার চিহ্নিত করা হয়। তবে এরপর তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

বিজ্ঞাপন

২০১৭ সালে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের অনুদানে জেলখাল পুনর্খননের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান। তখন নগরীর নথুল্লাবাদ থেকে কীর্তনখোলা নদী পর্যন্ত ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার জেলখাল যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় খননে অর্থায়ন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। এর আগে ২০১৬ সালে জেলখাল অপদখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করেন তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পরে ২০১৮ সালেও জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বরিশাল নগরের ঐতিহ্যবাহী জেলখাল পুনরায় সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস।

সর্বশেষ বরিশাল জেলখাল উদ্ধার, পুনঃসংস্কার, পাড় সংস্কার নিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠান। যদিও এখন পর্যন্ত সেই প্রকল্প পাস হয়নি। তারপরও সিটি কর্পোরেশন নিজ উদ্যোগে ৮ দিন ধরে এ খালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায়। ওই অভিযানে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য পরিচ্ছন্নতা কাজে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ ট্রাক ময়লা বা বর্জ্য অপসারণ করা হয়। তবে প্রকল্প পাস না হওয়ায় খালের পুনঃখনন বা সংস্কার কোনটিই করা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েক দফা অভিযান চালালেও দৃশ্যত কোন উন্নয়ন কর্মসূচি না হওয়ায় সম্প্রতি জেলখালসহ নগরীর ২২টি খালের পাড়েই পুনরায় গড়ে উঠছে ছোট বড় স্থাপনা। আর খালের মধ্যে ফের ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমা হয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন জানান, সিএস ও আরএস মানচিত্র অনুযায়ী জেলাখালের দুই পাড়ের অনেকাংশ দখলদারদের কবলে চলে গেছে। জেলখালসহ নগরীর ২২টি খাল পুনঃখনন বা সংস্কারে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে সকল অভিযানই বৃথা যাবে। এছাড়া খালপাড়ের বাসিন্দারা সচেতন না হলে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটানোও সম্ভব নয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন