বিজ্ঞাপন

একা হয়ে পড়েছেন রওশন এরশাদ, রাজনীতি থেকেও দূরে!

February 8, 2021 | 10:47 am

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রওশন এরশাদ। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। কিন্তু গত প্রায় একবছরে তাকে দৃশ্যমান তেমন কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শোকবার্তা আর দেশের কোনো অর্জনে অভিনন্দন বার্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তার রাজনৈতিক কার্যক্রম। এমনকি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংকটকালেও কোনো সামাজিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাকে।

বিজ্ঞাপন

পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, দলের মধ্যে রওশন এরশাদ এখন অনেকটাই একা হয়ে পড়েছেন। দলের বেশকিছু শীর্ষ নেতা ছিলেন তার পাশে, যারা এখন তার তার কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন। ফলে রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়ে চুপচাপ নীরবতা বেছে নিয়েছেন রওশন এরশাদ।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলের নেতৃত্ব নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদকে দলটির শীর্ষ পদ প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে রাখা হয়। সাংগঠনিক কাঠামোতে পদটি দলের শীর্ষ পদ হলেও তার হাতে নেই কোনো সাংগঠনিক ক্ষমতা। চেয়ারম্যান পদে থেকে পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মূলত এরশাদের ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। অবশ্য সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্বটি পালন করে যাচ্ছেন রওশন।

জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র বলছে, এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থাতেই রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এরশাদের মৃত্যুর পর তিনি পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এরশাদ লিখিতভাবে জি এম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান মনোনীত করে যান। ফলে দলটির নেতাকর্মীরা জি এম কাদেরের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। শীর্ষ কিছু নেতা পক্ষে থাকলেও দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন রওশন।

বিজ্ঞাপন

নাম গোপন রাখার শর্তে জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ওই সময় দলটির নেতৃত্ব নিয়ে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। দলটির নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে এরশাদ পরিবারের মধ্যে দেখা দেয় মতানৈক্য। শেষ পর্যন্ত ‘প্রধান উপদেষ্টা’ পদ তৈরি করে রওশন এরশাদকে সেই পদে আসীন করা হয়। কিন্তু কার্যত তার হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। পার্টি চালাচ্ছেন জি এম কাদেরই। তাদের দু’জনের মধ্যেকার দ্বন্দ্বেরও অবসান হয়নি।

ওই জাপা নেতা আরও বলেন, রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব বরং এখন আরও প্রকট। তাদের দু’জনের মধ্যে বলতে গেলে কোনো যোগাযোগই নেই।

জানা গেছে, রওশন এরশাদ আলাদা জাতীয় পার্টি গঠনের প্রচেষ্টাও চালিয়েছেন। একটি কনভেনশনের মাধ্যমে জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছিলেন। তবে সে উদ্যোগ সফল হয়নি। বরং তার পাশের নেতাকর্মীরাই পরে ঝুঁকে গেছেন জি এম কাদেরের দিকে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, রেওয়াজ অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনের শেষ দিনে বিরোধী দলীয় নেতা সমাপনী বক্তব্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত বছরের প্রথম অধিবেশনে যোগই দেননি রওশন এরশাদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির একজন প্রভাবশালী নেতা সারাবাংলাকে জানান, রওশন এরশাদের বাসার একজন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে তিনি অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি। এছাড়া তার শরীরিক অবস্থাও ভালো না। বয়সের কারণে অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছেন। তার পক্ষে আগামী নির্বাচন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন দলটির অনেক নেতাকর্মী।

ঢাকা মহানগর শাখা জাতীয় পার্টির এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, নেতাকর্মীরা চাইলেও রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। টেলিফোন করলেও তিনি রিসিভ করেন না। এমনকি তার নির্বাচনি এলাকার লোকজন গেলেও সাক্ষাৎ দেন না।

ওই নেতা বলেন, মনে হতে পারে করোনার কারণে হয়তো কারও সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন না তিনি। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। করোনার আগেও তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে এমন আচরণই করতেন। ফলে এখন আর আমরা তার কাছে যাচ্ছি না।

বিজ্ঞাপন

এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে রওশন এরশাদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তার পরিবারেরও কেউও এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে রাজি না।

পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম অবশ্য রওশন এরশাদের নীরবতার পেছনে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রধান উপদেষ্টা। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিচ্ছেন না। তার মানে এই নয় যে তিনি সংগঠন থেকে দূরে সরে গেছেন। তিনি সবসময় দলের খোঁজখবর রাখছেন। জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গেও তার যোগাযোগ আছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি দৃশ্যমান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন