বিজ্ঞাপন

মানবতাবিরোধী অপরাধে ময়মনসিংহের ৩ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

February 11, 2021 | 12:16 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের তিনজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড, পাঁচজনের ২০ বছর করে জেল এবং একজনকে খালাস দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম, বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদারের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ এ রায় দেন।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে এ মামলাটি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর মো. সাহিদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, জেয়াদ আল মালুম, ঋষিকেশ সাহা, মোখলেছুর রহমান বাদল, সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী, রেজিয়া সুলতানা চমন, তাপস কান্তি বল। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান ও গাজী এম এইচ তামিম।

আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার নিগুয়ারী ইউনিয়নের সাধুয়া গ্রামের শামসুজ্জামান ওরফে আবুল কালাম, এ এফ এম ফায়জুল্লাহ, মো. আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল। এর মধ্যে ফায়জুল্লাহ এবং আব্দুর রাজ্জাক পলাতক রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

২০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন সাধুয়া গ্রামের মো. খলিলুর রহমান মীর (৬২), মো. রইছ উদ্দিন আজাদী ওরফে আক্কেল আলী (৭৪), মো. আব্দুল্লাহ (৬২), সিরাজুল ইসলাম, আলীম উদ্দিন খান। এর মধ্যে আলীম উদ্দিন পলাতক রয়েছেন। আর খালাস পেয়েছেন মো. আব্দুল লতিফ।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ২২৮ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন। রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি আমির হোসেন। সবশেষে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম সাজা ঘোষণা করেন।

২০১৮ সালের ৪ মার্চ চারটি অভিযোগে ময়মনসিংহের ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় ১১ জন আসামি ছিলেন। বিচার চলাকালীন দুই আসামি মারা যান।

বিজ্ঞাপন

আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার পাঁচজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আর বাকি চার আসামিকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে।

তবে রায় ঘোষণা চলাকালে আদালতের বাইরে থেকে নিজেকে পলাতক আসামি এ এফ এম ফায়জুল্লাহ পরিচয় দিয়ে আদালতে প্রবেশ করতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের প্রবেশমুখে নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে আটক করেন। পরে তাকে শাহবাগ থানার পরিদর্শক মাহাবুব (অপারেশন) সঙ্গীয় ফোর্সসহ আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় ওই ব্যক্তি পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় নিজেকে এ এফ এম ফায়জুল্লাহ বলে দাবি করেন। তিনি সকাল সাড়ে ৯টায় ওই স্থানে আসার কথাও জানান।

পরে শাহবাগ থানার ওসি (অপারেশন) মাহাবুব সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিজেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পলাতক আসামি পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তির পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে।’

দণ্ডিত আসামিরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে ময়মনসিংহের বিভিন্ন গ্রামে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যার মতো অপরাধে যুক্ত হন বলে এ মামলায় অভিযোগ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালে এ মামলায় মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেছিল ট্রাইব্যুনাল। পরে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত বছরের ২৬ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। পরে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দিন ঠিক করা হয়।

অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মো. আব্দুল মালেক আকন্দ ওরফে আবুল হোসেন ওরফে আবুল মেম্বার গ্রেফতার হওয়ার পর বিচার চলাকালে মারা যান। আর আসামি নুরুল আমিন শাজাহান মারা যান পলাতক অবস্থায়।

২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনে ট্রাইব্যুনাল ২৫ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের মতো অপরাধের তিনটি অভিযোগ এনে ২০১৮ সালের ৪ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।

অভিযোগ গঠনের পর ওই বছরের ১০ মে থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি শুরু হয়। মোট ১৮ জন সাক্ষী এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে শেষ হয়। পরে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষায় রাখা হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত রায় আসা ৪২টি মামলার ১১৪ জন আসামির মধ্যে আটজন বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মোট ১০৩ জনের সাজা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬৮ যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে এবং আজকের রায়ে (১১ ফেব্রুয়ারি) একজন আসামি খালাস পেয়েছেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এসএসএ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন