বিজ্ঞাপন

সংসদে ও মাঠে ‘বিরোধী দল’ হয়ে উঠতে চায় জাতীয় পার্টি

February 16, 2021 | 8:14 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অভিযোগ আছে, তারা সংসদে থেকেও যেন নেই। কথা বললেই যেন মনে হয়, সরকারের গুণগান করছে। তবে মাঝে-মধ্যে কণ্ঠ উচ্চকিত করলেও সরকারি দলের ওপর তেজ ঝারতে পারে না। এছাড়া মাঠের রাজনীতিতে তাদের সরকারের ‘বি টিম’ বলে মনে করেন অনেকেই। সেজন্য দলটির জনসমর্থন ভাটার দিকে। এবার সেই ভাটা থেকে উজানে ফিরতে চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। আর এ জন্য জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাপা এবার জনসমর্থন বাড়াতে সংসদে এবং রাজনীতির মাঠে সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে চায়। সম্প্রতি দলের যৌথ সভায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, সংসদের আগামী অধিবেশনে জাপা দলীয় সংসদ সদস্যরা সরকারের গুণগান না করে সংসদীয় ভাষায় সরকারের কড়া সমালোচনা করবে। প্রয়োজনে অধিবেশন থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করে প্রতিবাদ জনাবে। এছাড়া কারণে অকারণে যারা সরকারের গুণগান করবে তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাইরে জনসম্পৃক্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে ওই সভায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সরকারের লেজুরভিত্তিক হওয়ার কারণে ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে জাপার ৯০ ভাগ নেতাকর্মী বিএনপিতে যোগদিয়েছে বলে দলটির এক জরিপে উঠে এসেছে। এছাড়া জনসমর্থনও আগের চেয়ে কমে গেছে। আর এ জন্য নেতাকর্মীদের দলে ধরে রাখতে শীর্ষ নেতারা কৌশলের অংশ হিসেবে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংসদে সরকারের কড়া সমালোচনা করা; বিএনপির সংসদ সদস্যরা যদি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে সেক্ষেত্রে জাপার এমপিরা তার জবাব না দিয়ে চুপ থাকা। উল্লেখ্য, আগের অধিবেশনে বিএনপির সংসদ সদস্যরা সরকারের সমালোচনা করলে তার জবাব জাপার সংসদ সদস্যরা দিয়েছেন। এই জবাব দেওয়ার রেওয়াজ বন্ধ এবং সংসদে প্রায়ত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নয় বছরের শাসনামলের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা এবং সংসদে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে যৌক্তিক সংশোধনীসহ জনগণের পক্ষে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলা।

জানা গেছে, আগামী অধিবেশনে দলটির সংসদ সদস্যরা এসব বিষয় তৎপর হবেন। আর কারণে-অকারণে যারা সরকারের গুণগান করবে তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া জনসমর্থন বাড়াতে ও নেতাকর্মীদের ধরে রাখতে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে দলটি। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে শিগগরিই দৃশ্যমান কর্মসূচি পালন করবে তারা। তাদের প্রাথমিক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- মানবন্ধন, সারাদেশে বিক্ষোভ, ও গণতান্ত্রিক পন্থায় অন্যান্য কর্মসুচি পালন।’

বিজ্ঞাপন

এসব বিষয় নিয়ে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিরোধী দল যেভাবে সাংবিধানিক ভাষায় সংসদে এবং সংসদের বাইরে আচরণ করে থাকে আমরাও এখন থেকে ঠিক সেভাবেই ভূমিকা রাখব। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে।’ আগামী অধিবেশনের আগে আবার বৈঠক করে গাইডলাইন অনুযায়ী সংসদে ভূমিকা রাখার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জিয়া উদ্দিন বাবলু বলেন, ‘সংসদীয় রীতিনীতি মেনে সংসদে জাতীয় পার্টি কঠোর ভূমিকা পালন করবে। তবে টেবিল চাপড়িয়ে, অন্যকে হেয় বা কটুক্তি করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা ভূমিকা পালন করবেন না। অসাংবিধানিক আচরণের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন।’

তিনি বলেন, ‘রোববার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনকে কঠিন ভাষায় বলে এসেছি। এরপর আমরা দৃশ্যমান কর্মসুচিতে যাব।’

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলীয় এক সংসদ সদস্য বলেন, ‘দলটির অনেক সংসদ সদস্য রয়েছেন যারা চাচ্ছেন সংসদে যেন আমরা বিএনপির মতো ভূমিকা পালন করি, সংসদ থেকে বেরিয়ে যাই ইত্যাদি। আবার অধিকাংশ সংসদ সদস্য চাচ্ছেন, সরকারের অনেক সেক্টরে দুর্নীতি রয়েছে সেসব তথ্য-উপথ্য নিয়ে সংসদে কঠোরভাবে যেন আমরা সমালোচনা করতে পারি। আগামী অধিবেশন থেকে তাই হবে।’

জাতীয় পার্টির দলীয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলে আছি। সংসদে অসত্য কোনো সমালোচনা করব না। তবে সত্য ঘটনার সমালোচনা জোরে-শোরে করা হবে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন