বিজ্ঞাপন

সেলফিতে সতর্ক থাকতে হবে পুলিশকেই!

March 21, 2018 | 10:42 am

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সব দোষই কি দায়িত্বরত কনস্টেবলদের? মোবাইল ফোন ব্যবহার এখন জীবনের অংশ। অথচ কাজের সময় আমাদের হাতে ফোন থাকতে পারবে না? কর্মকর্তারা পারবেন! কনস্টেবলরা পারবেন না! যেনো অপরাধ শুধু আমরাই করি!

এভাবেই ক্ষোভ ঝাড়ছিলেন পুলিশের নানা পর্যায়ে কর্মরত সাধারণ সদস্যরা। তারা বলছিলেন, আমরা তো অনেক বড় বড় কর্মকর্তাকেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেলফি তুলতে দেখেছি। তাহলে তাদের ওপরও তো ফোন বহনে নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারতো।

তবে যারা এসব কথা বলছিলেন, তাদের কেউ নাম প্রকাশে রাজি হননি।
একজন তো বলেই ফেললেন, ‘কপাল গুনে কনস্টেবল হয়েছি, করার কিছু নাই। যা নির্দেশনা আসবে তাই মাথা পেতে মানতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না- পুলিশের মহা-পরিদর্শকের তরফ থেকে এমন নির্দেশনা যাওয়ার পর ঢাকা মহানগর মাঠ পর্ায়ের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, এই নির্দেশনাই ঠিক আছে। তবে তারও স্রেফ সেলফি তোলার বিষয়ে এমন মত দিচ্ছেন। মোবাইল ফোন ব্যবহার এখন প্রতি মূহূর্তের প্রয়োজনে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় বলছেন, এমন নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকরভাবে প্রয়োগযোগ্য তাও ভেবে দেখতে হবে।

মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে যথাযথ দায়িত্ব পালন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, অন্যের নিরাপত্তা বিধান ও নিজের নামের ইস্যুকৃত অস্ত্র, গুলি ও সরকারি সম্পত্তি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে মর্মে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স থেকে সম্প্রতি মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর নিষেধাঙ্গা সংক্রান্ত নির্দেশনাটি জারি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

গত ১২ মার্চ পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. জাবেদ পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যগণ দায়িত্ব পালনকালে জরুরি প্রয়োজন ব্যতিরেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়নকালে কোন কোন পুলিশ সদস্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন তার মোবাইল নম্বর নামের পাশে উল্লেখ করতে হবে। পুলিশ সদস্যগণ কর্তব্যরত অবস্থায় সেলফি ও ছবি তোলাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা থেকে বিরত থাকবেন। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় মোবাইল ফোনে গেমস খেলা, ভিডিও দেখা, গান শোনা, ইউটিউব, ফেসবুক, অনলাইন পত্রিকা, নিউজ পোর্টাল অবলোকন ও পাঠ করা থেকে বিরত থাকবেন।

এ ব্যাপারে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের মিডিয়া শাখার সহকারি মহাপরিদর্শক (এআইজি) সহেলী ফেরদৌস সারাবাংলাকে বলেন, যারা মাঠ পর্ায়ে দায়িত্ব পালন করেন, তারা একটি গ্রুপে থাকেন। সেই গ্রুপের কেবলমাত্র একজন (যিনি ইনচার্জ) মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। দায়িত্ব পালনকারী গ্রুপের বাকী সদস্যরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেশের সকল পুলিশ স্টেশনে পৌঁছানো হয়েছে।

মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা মাঠ পর্ায়ে কতটা কার্যকর হবে? সে প্রশ্নে ডিএমপির দক্ষিণখান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল গণি সাবু সারাবাংলাকে বলেন, এরকম নির্দেশনা ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে আরও আগে থেকেই দেওয়া ছিল। ঢাকার বাইরের কিছু ঘটনার কারণে আইজিপি নতুন করে নির্দেশনা জারি করেছেন। এতে পুলিশ আরো বেশি সতর্ক থাকবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, মাঠ পয়ৃায়ে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশের সদস্যরা লুকিয়ে ফোন ব্যবহার করলেও তাদের শাস্তি অতীতেও দেওয়া হয়েছে। যেটা হয়তো বাইরে প্রকাশ হয়নি। দায়িত্ব পালনে এখন যাতে আরও বেশি মনযোগী হন পুলিশ সদস্যরা সেব্যাপারে তদারকি জোরদার থাকবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

দারুস সালাম থানার এএসআই আব্দুল হালিম সারাবাংলাকে বলেন, দায়িত্ব পালনের সময় গ্রুপ ইনচার্জ শুধুমাত্র যোগাযোগ রক্ষার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন বলে নতুন করে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন। এরপরেও দায়িত্বের সময় যদি কেউ ফোন ব্যবহার করেন তবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে।

মাঠ পর্ায়ের পুলিশ সদস্যদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে এএসআই বলেন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা থাকলে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন না। এটি নিয়ম ভঙ্গের শামিল। তাই হয়তো কেউ প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া দেখাবে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, পুলিশে চাকরি করে অর্ডার মানবেন না এমন পুলিশ নেই বললেই চলে।

পুলিশ সদস্যরা কিভাবে এই নির্দেশনা মেনে চলবেন, যেখানে মোবাইল ফোন অনেকটা জীবনেরই অংশ হয়ে উঠেছে এমন প্রশ্নে মাসুদুর রহমান বলেন, ডিউটির সময় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা মোবাইল ফোন থানায় রেখে যাবেন। তার জরুরি কোনো কিছু দরকার হলে গ্রুপ প্রধানের ফোন দিয়ে কথা বলতে পারবেন। কোন গ্রুপে কে দায়িত্ব পালন করছে, কে গ্রুপের ইনচার্জ আর কার কাছে কোনো নম্বর আছে তার সব কিছু ডিউটিতে যাওয়ার আগে থানায় লিপিবদ্ধ করা থাকবে। কাজেই খুব সহজে দায়িত্ব পালন করতে পারবে সবাই।

যে সকল পুলিশ সদস্য ডিউটিতে থাকবেন তারা পরিবারের সদস্যদের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবেন? পরিবারের কাছে কি কোনো নির্দিষ্ট নম্বর দেওয়া আছে? জানতে চাইলে ডিএমপি’র এই উপ কমিশনার বলেন, যে থানাতে যে সকল পুলিশ সদস্য চাকরি করেন, সেই থানার নম্বর প্রত্যেক পরিবারে দেওয়া আছে। জরুরি প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যরা থানায় যোগাযোগ করে ওই পুলিশ সদস্যের সাথে কথা বলতে পারবেন।

মাঠ পর্যায়ে ডিউটিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে কি করছে না, তা কিভাবে তদারকি হচ্ছে? জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজাহারুল ইসলাম বলেন, পুলিশের ডিউটি হয় গ্রুপ ভিত্তিক। গ্রুপ ইনচার্জকে বলা আছে, তিনি ওই গ্রুপের দেখভাল করবেন। ফোন ব্যবহার করছে কিনা তা তিনিই দেখবেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া আছে সবাইকে। ডিউটিতে যাওয়ার সময় তাদের ফোনগুলো নিয়ে থানায় রাখা হয় বলেও জানান তিনি।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় হয়তো কিছুটা খারাপ লাগবে। হাতে ফোন নেই। পরিবারের সাথে ইচ্ছা করলেই কথা বলতে পারছে না। তবে কিছুদিন গেলে সবাই ফোন ছাড়াই অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আগে যে ফোন ছিল না। তখন কিভাবে পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা হতো। আর একেবারেই তো ফোন করা বন্ধ হচ্ছে না।

সার্বিকভাবে, এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা প্রতিটি পুলিশ সদস্যের দায়িত্ব। এটি পুলিশের ভাবমূর্তির সাথে সম্পর্কিত। ফলে প্রত্যেক সদস্যকেই পুলিশ বিভাগের মর্যাদা সুরক্ষায় সচেষ্ট থাকতে হবে, এমন কথা সারাবাংলাকে বলেছেন প্রায় সকল কর্মকর্তা।

সারাবাংলা/ইউজে/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন