বিজ্ঞাপন

‘বর্তমানের সেরা সাহিত্য সৃজনে নারীরাই এগিয়ে আছেন’

March 8, 2021 | 11:00 am

রাজনীন ফারজানা

এ যুগের বাঙালি সাহিত্যিকদের অন্যতম শাহীন আখতার। ছোটগল্প হোক আর উপন্যাস, তার নিপুন হাতের লেখনীতে চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব আর মানসিক ঘাত-প্রতিঘাত ফুটে ওঠে দারুণ মানবিক বৈচিত্র্যে।

বিজ্ঞাপন

১৯৬২ সালে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় জন্ম শাহীন আখতারের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক করে ভারতে চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে পড়ালেখা করেন। তবে পরবর্তী সময়ে আর চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহ পাননি। ধীরে ধীরে লেখালেখিতে ঝুঁকে পড়েন। বর্তমানে তিনি আইন ও শালিস কেন্দ্রের গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিভাগের সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।

শাহীন আখতারের সাহিত্যিক জীবনের সূচনা মূলত ১৯৯৭ সালে। ওই বছর তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘পালাবার পথ নেই’ রচনা শুরু করেন। এই বইতে  দু’জন নারীর একা শহরবাস বিষয়ক জটিলতা ও সংগ্রামের চিত্র উঠে এসেছে। এরপর ২০০৪ সালে রচনা করেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘তালাশ’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্যাতনের শিকার এক নারীর যুদ্ধ চলাকালীন ও যুদ্ধোত্তর জীবনের করুণ চিত্র তুলে ধরেন এই বইয়ে। এই বই তাকে এনে দেয় সে বছরের প্রথম আলো বর্ষসেরা বইয়ের পুরস্কার। ২০২০ সালে এই উপন্যাসটির জন্য তিনি এশিয়া লিটারারি অ্যাওয়ার্ডও লাভ করেন। তার লেখা কয়েকটি ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে— বোনের সঙ্গে অমরলোকে, পনেরটি গল্প, নারীর একাত্তর ও যুদ্ধ পরবর্তী ক্ষত কাহিনী ও আবারও প্রেম আসছে। ২০১৪ সালে তিনি ‘ময়ূর সিংহাসন’ উপন্যাসের জন্য আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই উপলক্ষে সারাবাংলাকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এই গুণীজন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলা ডটনেটের সিনিয়র নিউজরুম এডিটর রাজনীন ফারজানা

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: কীভাবে লেখালেখির জগতে এলেন? আমাদের দেশে এখনও কেন নারী সাহিত্যিকদের আলাদা করে দেখা হয়?

শাহীন আখতার: কীভাবে লেখালেখির জগতে এলাম? আসলে বাড়িতে সাহিত্য পড়া আর লেখার একটা পরিবেশ ছিল। বিশেষ করে আমার মা ছিলেন বইয়ের পোকা। বড় দু ভাই, ছোট মামা, মেজো খালাও লিখতেন। আমিও স্কুলে পড়ার সময় তাদের দেখাদেখি লিখতে শুরু করি।

শুধু আমাদের এখানে না, পৃথিবীর প্রায় সবখানেই নারী সাহিত্যিকদের আলাদা করে দেখা হয়। এ দেখার চোখটা ইদানিং মনে হয় পাল্টাচ্ছে। বলা যায় পাল্টাতে বাধ্য হচ্ছে। নারীদের উৎকৃষ্টমানের সাহিত্য সৃষ্টিই বাধ্য করছে। বর্তমানের সেরা সাহিত্য সৃজনে নারীরাই এগিয়ে আছেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: আপনার লেখার বিষয়বস্তু কি নারী কেন্দ্রিক? যদি তাই হয়, তবে সেটি কেন?

শাহীন আখতার: আমার লেখার বিষয়বস্তু পুরাটা নারী কেন্দ্রিক, তা মনে হয় বলা যাবে না। তবে নারীর জগতটা নিজের চেনা জগত বলে সাহিত্যে তার প্রতিফলন ঘটছে। আলাদা করে আমার তরফ থেকে কোনো চেষ্টা নেই এক্ষেত্রে। মানে কাজটা সচেতনভাবে করছি না।

সারাবাংলা: নারী জীবনের বিচিত্র যে রূপ আপনার লেখায় প্রকাশ পায় তার কতটুকু কল্পনা আর কতটুকু বাস্তব অভিজ্ঞতা?

শাহীন আখতার: আসলে পাল্লা ধরে ওজন করে তো বলা সম্ভব হবে না- কতটুকু কল্পনা আর কতটুকু অভিজ্ঞতা! আমার মনে হয় দুটোরই মিশেল, সাধারণত সাহিত্যের বেলায় যা হয় আরকি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: নারী দিবস নিয়ে আপনার ভাবনা সম্পর্কে বলুন।

শাহীন আখতার:  প্রতিটা দিবসের একটা মাহাত্ম আছে। সেই বিচারে নারী দিবসেরও আছে। তবে সেই দিনটিকে কীভাবে উদযাপন করছি, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নারী দিবসকে কেন্দ্র করে নানা স্রোত এসে মিশছে। করপোরেট দুনিয়াও জিনিস বিক্রির জন্য নানা আয়োজন নিয়ে হাজির হয়। সে গুঁড়া মশলা থেকে অনেক কিছু। নারীরা আরও বেশি রাঁধুনি হবেন। অনেক কিছু হতে হবে তাকে। দশভূজা। সেটা একটা চাপ। সবার পক্ষে তো বহু গুণে গুণান্বিত হওয়া সম্ভব নয়! আমি একটা উদাহরণ দিলাম।এ রকম অনেক ভেজাল আছে। দিবসটা যেন পণ্যের হাট। তবে অর্থপূর্ণ কিছু উদ্যোগ আয়োজনও থাকে। নারীদের নানা অর্জন তুলে ধরা, শোষন পীড়ন নিয়ে সোচ্চার হওয়া ইত্যাদি।

সারাবাংলা: অনেকেই মনে করেন একবিংশ শতাব্দীতে নারীদের জন্য আলাদা একটি দিবস অপ্রাসঙ্গিক। আপনি কী মনে করেন?

শাহীন আখতার: একবিংশ শতাব্দীতে নারীরা সমানাধিকার পেয়ে যায়নি যে, ৮ মার্চ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। আমি মনে করি, সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেও দিবসটা স্মরণ করার জন্য আমরা তা পালন করতে পারি।

সারাবাংলা: বিভিন্ন বয়সী নারীকে দেখা যায় তার কাজ-পোশাক-আচরণ সবকিছুর জন্য অন্যের বিচারের মুখে পড়তে হয়। এমনকি ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন ঘটলেও নারীর পোশাককেই দোষারোপ করা হয়। এটি কেন এবং আমাদের দেশের এই সংস্কৃতি আপনি কীভাবে দেখেন।

শাহীন আখতার: আমরা কি এ রকম মনোবৃত্তিকে ‘সংস্কৃতি’ বলবো? আমি যতদূর বুঝি ‘সংস্কৃতি’ একটি ইতিবাচক শব্দ।

কথায় বলে, খলের ছলের অভাব হয় না। এ প্রসঙ্গে আর কী বলা যায়! ধর্ষণের মতো একটি জঘন্য অপরাধের জন্য নারীকে, নারীর পোশাককে দোষারোপ করা, অপরাধীরই পক্ষ নেওয়া। মানে ধর্ষণকারীর পক্ষ নেওয়া। জানি না তার জন্য কী সাজা প্রাপ্য হতে পারে।

সারাবাংলা: দেশের একটি বড় অংশের পুরুষ এবং নারী মনে করেন ঘরের কাজ সামলানো ও সন্তান লালন-পালন একমাত্র নারীর কাজ। এমনকি নিজ যোগ্যতায় কাজ করছেন যেসব নারী সেই ক্রেডিটও পুরুষ সদস্য নিয়ে থাকেন ‘আমার স্ত্রী/বোন/বান্ধবীকে কাজ করতে দিচ্ছি’ বলে। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।

শাহীন আখতার: এ চর্চাটা অতি নিচুমানের। এত সস্তা দরের আত্মশ্লাঘা! ‘আমার স্ত্রী/বোন/বান্ধবীকে কাজ করতে দিচ্ছি’ পুরুষটি যখন বলেন, তখন স্ত্রী/বোন/বান্ধবীর জবাব কী থাকে, জানি না। বা প্রতিবাদ করার তাদের সুযোগ থাকে কিনা।

সারাবাংলা: বাংলাদেশের নারীদের বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনে নতুন প্রজন্মের করনীয় সম্পর্কে কোন পরামর্শ।

শাহীন আখতার: আমার মনে হয় সার্বিকভাবে আমাদের সাংস্কৃতিক মানোন্নয়নটা জরুরি। মননের চর্চা, সাহিত্য, সিনেমা, পেইন্টিং– এ বৃহৎ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নতুন প্রজন্মের বিচরণ জরুরি। এ ক্ষেত্রে আগের প্রজন্মের ঘাটতি পূরণ করতে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। সংবেদনশীল মনই ‘নারীদের বর্তমান অবস্থা পরিবর্তন’ সম্ভবপর করে তুলতে পারে।

সারাবাংলা: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

শাহীন আখতার: সারাবাংলাকেও ধন্যবাদ।

সারাবাংলা/আরএফ/

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন