বিজ্ঞাপন

‘বাবা নাই, দোয়া করবেন যেন ছেলেটার মা ফিরে আসেন’

March 21, 2018 | 8:57 pm

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের চতুর্থ তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানম। তার অবস্থা শংকটাপন্ন, আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আইসিইউ’র সামনে জড়ো হয়েছেন আবিদ সুলতান এবং আফসানার আত্মীয়-পারিবারিক বন্ধুরা। সেখানেই বুধবার (২১ মার্চ) সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় তাদের কয়েকজনের।

গত ১২ মার্চ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার যে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়, তার পাইলট ছিলেন আবিদ সুলতান। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। গত ১৮ মার্চ স্ট্রোক করেন আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানম।

নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানিয়ে সারাবাংলাকে এই দম্পতির এক বন্ধু বলেন, আবিদ ভাই চলে গেছেন। আপনারা ওদের ছেলের জন্য দোয়া করবেন, যেন তার মা ফিরে আসেন।

বিজ্ঞাপন

উচ্চ পদস্থ এই সরকারি কর্মকর্তা জানালেন, এই দম্পতির একমাত্র ছেলে তামজিদ সুলতানের ও-লেভেল পরীক্ষা আগামী ১১ মে শুরু হবে। বাবাকে হারিয়েছে, এরপর মায়ের এই অবস্থা- ছেলেটা একেবারে চুপ হয়ে গেছে, কারও সঙ্গে তেমন কথা বলছে না। খুব লক্ষ্মী ছেলে, ছোট ছোট খেলনা গাড়ির খুব পছন্দ তার। ঘর ভর্তি গাড়ি। আবিদ ভাই যখন যেখানে যেতেন ছেলের জন্য গাড়ি নিয়ে আসতেন।

দুর্ঘটনার পর থেকে এই পরিবারটির পাশে বন্ধুরা ছায়ার মতো আছেন- বোঝা গেল তার কথাতেই। তিনি বলেন, গত শনিবার রাতেও আমি এবং আমার স্ত্রী ভাবির সঙ্গে দেখা করেছি। অনেকক্ষণ ছিলাম ওই বাসায়। তামজিদ আর আমার সন্তান একই ক্লাসে পড়ে। ওরা কয়েকজন বন্ধু রয়েছে যাদের সবকিছুই একসঙ্গে হয়। আমার বাসায় শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে। ছেলেটা গত ক’দিন ধরেই সব কিছু থেকে যেন দূরে সরে গেছেন। তামজিদের এই ঘটনার প্রভাব পড়েছে তার প্রতিটি বন্ধুর ওপর। ওরা সবাই যেন স্থির হয়ে আটকে গেছে একটা জায়গায়। সবাই বন্ধুকে (তামজিদ) নিয়ে চিন্তিত।

বিজ্ঞাপন

এই কিশোর বয়সে ছেলেটা বাবাকে হারাল, এখন মায়ের এই অবস্থা-ছেলেটার দিকে তাকানো যাচ্ছে না, গত শনিবার রাতেও ছেলেটার হাতটা-হাতের ভেতর নিয়ে বসেছিলাম। উনি (আফসানা) সেই ১২ তারিখ থেকে ঘুমাচ্ছিলেন না, খাওয়া যে ছেড়ে দিয়েছিলেন সে-তো বোঝাই যায়।

ছেলেকে পাইলট বানানোর স্বপ্ন ছিল আবিদ সুলতানের, তাকে বলেছিলেন- জানিয়ে বলেন, ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানকে বলা হতো, ‘ট্রেইনার অব দ্য ট্রেইনার।’ তিনে চাইতেন ছেলে পাইলট হিসেবে তাকেও ছাড়িয়ে যাবে। ছেলেকেও বলেছিলেন আবিদ সুলতান। ছেলেও জানতো বাবার ‘ড্রিম’ এর কথা। কিন্তু এখন সে ভাবনা আমাদের শঙ্কায় ফেলেছে, ওর মাও চাইছে না-ছেলে এই পেশায় যাক।

কিন্তু এখন চিন্তা তামজিদকে নিয়ে, কী করে এই অবস্থা ছেলেটা রিকভার করবে, ১১ মে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে- কী হবে ছেলেটা!
আফসানার আরেক বন্ধু জেসরিন চৌধুরী শিউলী। শিউলি বলেন, আমার সঙ্গে টপির (আফসানা খানম) সর্ম্পক প্রায় ১৮ বছরের, কিন্তু সব ছাপিয়ে আমি হয়ে উঠেছিলাম আবিদ ভাইর বোন। তিনি আমাকে ছোট বোনের মতোই দেখতেন, ভাবতেন। কত কত স্মৃতি আমাদের- বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ওঠেন শিউলী।

বিজ্ঞাপন

বলেন, আবিদ ভাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন, কখনো তাকে রাগতে দেখিনি, জোরে কথা বলতে শুনিনি। খুব সহজ সরল ছিল আমার আবিদ ভাই।

শিউলি থাকেন চট্টগ্রামে। কিন্তু এই পরিবারটির দুঃসময়ে তিনি ছুটে এসেছেন সেখান থেকে। কিন্তু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে প্রবেশে রয়েছে কড়াকড়ি। সেখানে যে কেউ চাইলেই যখন-তখন যেতে পারে না। তাই শিউলীকে দেখা যায়, আইসিইউতে- কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীকে অনুরোধ করছেন, অনুনয় করছেন। তিনি বলছেন, আমি কথা বলব না, আমি শুধু আফসানাকে একটু দেখব। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মী তার দায়িত্বে অনড়, তবুও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন শিউলি।

গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন, জানান তাদের ১৮ বছরের বন্ধুত্বের কথা। তার মোবাইল ফোন থেকে দেখান এই পরিবারের সঙ্গে তার ঘুরে বেড়ানোর ছবি। বলেন, এত সুন্দর একটা পরিবার, কোনো কিছুর ঘাটতি ছিল না। অথচ কী থেকে কী হয়ে গেল। আবিদ ভাই মারা গেলেন, আফসানা হাসপাতালের বিছানায়, ওদের ছেলেটার কী হবে!

শিউলী বলেন, আবিদ ভাই মারা যাওয়ার পর ও (আফসানা) কারো সঙ্গে কথা বলেনি বলে শুনেছি, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু সুস্থ ছিল। তবে সেটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি। কী করে পারবে, দু’জনের মধ্যে ভালবাসা ছিল খুব।
এদিকে বুধবার নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম জানিয়েছেন, আফসানার অবস্থা অপরিবর্তিত, লাইফ সার্পোট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

সারাবাংলা/জেএ/এটি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন