বিজ্ঞাপন

মাতারাবাড়িতে হচ্ছে এলপিজি টার্মিনাল, সমঝোতা সই শিগগিরই

March 10, 2021 | 8:37 am

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যয় কমাতে কক্সবাজারের মহেশখালীর গভীর সমুদ্রবন্দরে একটি মাদার টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে। দুটি বিদেশি কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চাশ হাজার মেট্রিকটন মজুত ক্ষমতার এই টার্মিনাল নির্মাণ করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ লক্ষ্যে শিগগিরই জাপানি কোম্পানি মারুবিনি এবং যুক্তরাজ্যের ভিটল পাওয়ারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে এই চুক্তি সইয়ে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই অনুমোদনের চিঠি সোমবার (৮ মার্চ) জ্বালানি বিভাগে পৌঁছেছে।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গেই ডেডিকেডেট এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিক  প্রক্রিয়া এখন চলমান। প্রস্তাবিত এলপিজি টার্মিনালের অপারেশন ক্ষমতা হবে বার্ষিক প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ মেট্রিক টন। টার্মিনালের জেটিতে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ নোঙরের ব্যবস্থা থাকবে। আর টার্মিনালের মজুত ক্ষমতা হবে ন্যূনতম ৫০ হাজার মেট্রিক টন। প্রায় দেড় হাজার থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ দিয়ে দেশের কোম্পানিগুলোকে এলপি গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে দুই থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন এলপিজি আমদানি করা হয়। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে ছোট আকারে জাহাজের পরিবহন খরচ টন প্রতি ১০০ থেকে ১১০ ডলার। টার্মিনাল নির্মাণ হলে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজে পরিবহন খরচ হবে ৬৫ থেকে ৭০ মার্কিন ডলার। এতে টন প্রতি ব্যয় কমবে ৪০ ডলার।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এলপিজির বড় সমস্যা হলো পরিবহন ব্যয়। পরিবহন ব্যয়ের কারণে গ্রাহকদের বেশি দাম দিয়ে গ্যাসটি কিনতে হয়। টার্মিনাল নির্মাণ হলে পরিবহন ব্যয় কমে যাবে। এছাড়া এতে সরকারের একটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ফলে ভোক্তারা কম দামে এলপি গ্যাস কিনতে পারবেন।’

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) তথ্য মতে, দেশে দিন দিন এলপি গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। ২০০৮ সালে দেশে গৃহস্থালি ও রান্নার কাজে এলপি গ্যাসের ব্যবহার ছিল মাথাপিছু শূন্য দশমিক ৩ কেজি, কিন্তু ২০২০ সালে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৬৩ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, দেশে বর্তমানে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১১ শতাংশ বা ৩৮ লাখ পরিবার এলপিজি ব্যবহার করে। অন্যদিকে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৩ শতাংশ রান্নায় প্রাকৃতিক গ্যাস বা এনজি ব্যবহার করে। দেশে রান্নার কাজের পাশাপাশি শিল্প, বাণিজ্য ও অটোমোবাইল খাতেও এলপি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে দেশে এলপিজির চাহিদা ১০ লাখ টন। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৫ বছরে এই চাহিদা দ্বিগুণ হবে।

বিপিসি সূত্র বলছে, মাতারবাড়িতে টার্মিনাল স্থাপন হলে অপেক্ষাকৃত কম দামে এলপি গ্যাসের কাঁচামাল (প্রোটিন ও বিউটেন) আমদানি করা যাবে। কারণ মাতারবাড়িতে এক লাখ টন বা তার বেশি ধারণ ক্ষমতার জাহাজ চলাচলের জন্য পানির গভীরতা রয়েছে। এতে বড় জাহাজে একসঙ্গে বেশি পরিমাণে গ্যাস আমদানি করা যাবে। এতে খরচও কম হবে। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন সাধারণত ১০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজে কাঁচামাল আমদানি করে। কারণ মোংলা বন্দরে এর চেয়ে বেশি ধারণ ক্ষমতার জাহাজ চলাচলের মতো পানির গভীরতা নেই। এ কারণে তাদের আমদানি মূল্য বেশি পড়ে। মাতারবাড়িতে বিপিসির টার্মিনাল নির্মাণ হলে বেসরকারি কোম্পানিগুলোও সেখান থেকে সহজে কাঁচামাল আনতে পারবে। এতে তাদের খরচও কমে যাবে।

বিজ্ঞাপন

মাতারবাড়িতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ হলে গ্যাসের পরিবহন খরচ কমে যাবে। এতে গ্রাহকরাও সাশ্রয়ী দামে এলপিজি ব্যবহার করতে পারবেন। সরকার এই চিন্তা থেকেই এ উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক সারাবাংলা বলেন, ‘টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান। মূলত মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গেই টার্মিনালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও এগিয়ে চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার তৈরির একটি কারখানা নির্মাণ হবে। ওই কারখানায় বছরে ২০ লাখ সিলিন্ডার তৈরি হবে। বিপিসি মালিকানাধীন কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেড এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।’

উল্লেখ্য, দেশের মোংলা ও সীতাকুন্ডে বর্তমানে এলপিজির ২৭টি বটলিং প্ল্যান্ট রয়েছে। এর মধ্যে ২০টির নিজস্ব জেটি রয়েছে। বাকি সাতটি প্ল্যান্ট অন্যের জেটির মাধ্যমে এলপিজি আমদানি করে। কিন্তু জেটিগুলো ছোট হওয়ায় বড় জাহাজ নোঙর করতে পারে না। দেশে আরও ছয়টি এলপিজি বটলিং প্ল্যান্ট খুব শিগগিরই উৎপাদনে আসবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন