বিজ্ঞাপন

ফাইভজি’র তরঙ্গ বরাদ্দও এ বছরেই!

March 10, 2021 | 11:20 am

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (ফাইভজি) চালু করতে তরঙ্গ (স্পেকট্রাম) বরাদ্দের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ বছরই মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে এই তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা (আইসিটি) সজীব ওয়াজেদ জয় সময় দিলে এ বছরের ১৬ ডিসম্বেরের মধ্যেই হবে এই তরঙ্গের নিলাম। এর মধ্য দিয়ে একই সময়ে ফাইভজি’র যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে ফাইভজি প্রযুক্তি চালুর লক্ষ্য রয়েছ। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার একাধিকবার বলেছেন, দেশে ২০২১ সালেই ফাইভজি চালু করা হবে। এরই মধ্যে সোমবার (৮ মার্চ) অব্যবহৃত তরঙ্গের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফাইভজি’র তরঙ্গ নিলামের বিষয়টিও সামনে এসেছে।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে ফাইভজি চালুর লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। কিন্তু আমাদের মন্ত্রণলয় থেকে আমরা বলছি, ২০২১ সালের মধ্যেই ফাইভজি চালু করব। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ লক্ষ্যে বিটিআরসি তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্যেই আমরা ফাইভজি চালু করব। ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যেই ফাইভজি চালুর লক্ষ্য আমাদের। এ সময়ের মধ্যে সজীব ওয়াজেদ জয়ের শিডিউল পাওয়া গেলে ওই সময়ই নিলাম অনুষ্ঠিত হবে এবং ফাইভজি চালু হবে।’

মোবাইল অপারেটরদের সক্ষমতার বিষয়ে মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, ‘ফাইভজি’র জন্য আমাদের তরঙ্গ ফ্রি করা আছে। অপারেটরদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। এরই মধ্যে ররির সব সাইট ফোরজি’র আওতায় চলে এসেছে। গ্রামীণফোনের ৮০ ভাগ সাইট ফোরজি’তে চলে এসেছে। টেলিটকের সাইটগুলোও ফোরজি’তে আসছে। নতুন সব সাইট ফোরজি হচ্ছে। বাংলালিংকও ফোরজি’তে চলে আসবে। ২০২১ সালের মধ্যে সারাদেশ ফোরজি’র আওতায় চলে আসবে। আর একই সময়ে আমরা দেশে ফাইভজি চালু করব।’

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০২১ সালেই ফাইভজি চালু করা হবে। যেহেতু এ বছরই ফাইভজি চালু হবে, তার আগে এ বছরই ফাইভজি তরঙ্গের নিলাম করতে হবে। অর্থাৎ এ বছরই ফাইভজি’র তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি।’

জানতে চাইলে বিটিআরসির উপপরিচালক (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফাইভজি চালুর প্রাথমিক কাজগুলো আমরা এগিয়ে নিচ্ছি। গাইডলাইন, নীতিমালা তৈরি, অকশনসহ সময়উপযোগী ব্যবস্থা নিতে সব ধরনের কার্যক্রম চলছে।’

এদিকে, মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে তরঙ্গ বিক্রি করে সরকার তিন হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। ১৮০০ ও ২১০০ ব্যান্ডের ২৭ দশমিক ৪ মেগাহার্জ তরঙ্গ বিক্রি করে সরকারের এ আয় হয়েছে। সোমবার (৮ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তরঙ্গ বরাদ্দের ওই নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে দেশের চারটি অপারেটর অংশ নেয়। গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক তরঙ্গ কিনলেও রাষ্ট্রায়ত্ত মুঠোফোন অপারেটর টেলিটক কোনো তরঙ্গ নেয়নি।

বিজ্ঞাপন

প্রায় ১২ ঘণ্টার নিলামে গ্রামীনফোন ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে শূন্য দশমিক ৪ মেগাহার্জ, ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ৫ মেগাহার্জ এবং ৪৬ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ৫ মেগাহার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ পেয়েছে। এর ফলে ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে গ্রামীণফোনের বর্তমান তরঙ্গ ১৯ দশমিক ৬ মেগাহার্জ থেকে ২০ মেগাহার্জে এবং ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে বর্তমান তরঙ্গ ১০ মেগাহার্জ থেকে ২০ মেগাহার্জে উন্নীত হয়েছে।

রবি ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ২ দশমিক ৬ মেগাহার্জ ও ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হারে ৫ মেগাহার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ পেয়েছে। এর ফলে ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে রবির বর্তমান তরঙ্গ ১৭ দশমিক ৪ মেগাহার্জ থেকে ২০ মেগাহার্জে এবং ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে বর্তমান তরঙ্গ ১০ মেগাহার্জ থেকে ১৫ মেগাহার্জে উন্নীত হলো।

এদিকে, বাংলালিংক ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ৪ দশমিক ৪ মেগাহার্জ ও ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ৫ মেগাহার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ পেয়েছে। এর ফলে ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে বাংলালিংকের বর্তমান তরঙ্গ ১৫ দশমিক ৬ মেগাহার্জ থেকে ২০ মেগাহার্জ ও ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে বর্তমান তরঙ্গ ১০ মেগাহার্জ থেকে ১৫ মেগাহার্জে উন্নীত হলো।

অন্যদিকে, টেলিটক ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক নিলামে অংশগ্রহণ করেও শেষ পর্যন্ত কোনো তরঙ্গ কিনতে পারেনি। ফলে ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে টেলিটকের বর্তমান তরঙ্গ ১০ মেগাহার্জ ব্যবহার করেই সেবা দিয়ে যেতে হবে গ্রাহকদের।

বিজ্ঞাপন

সোমবার অনুষ্ঠিত ওই নিলামে ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডের শেষ ৫ মেগাহার্জ তরঙ্গ কিনতে ব্যাপক লড়াই চালিয়ে যায় গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটা। তবে শেষ পর্যন্ত গ্রামীণফোনের জয় হয়। এই ব্যান্ডের প্রথম তিনটি ব্লকের প্রতি মেগাহার্জ তরঙ্গ বিক্রি হয়েছে ২৯ মিলিয়ন ডলারে। দীর্ঘ নিলামে এই ব্যান্ডের শেষ ব্লকের প্রতি মেগাহার্জের দর ৪৬ দশমিক ৫০ ডলার পর্যন্ত হাঁকিয়েছিল রবি। তবে শেষ পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার দরে সেটি কিনে নেয় গ্রামীণফোন।

এর আগে, ২০১৮ সালে দেশে ফোর-জি তরঙ্গের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল। একইসঙ্গে তরঙ্গ নিলামের পর অপারেটরগুলোকে লাইসেন্স প্রদানের মধ্য দিয়ে ওই বছরই দেশে ফোর-জি সেবা চালু হয়েছিল।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন