বিজ্ঞাপন

সৌরবিদ্যুৎ: ২০ বছরে টার্গেট ৩০ হাজার মেগাওয়াট

March 25, 2021 | 9:04 am

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এরই মধ্যে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ – স্রেডা এ সংক্রান্ত একটি অনুমোদিত রোডম্যাপ বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠিয়েছে। সেই রোডম্যাপে সৌরবিদ্যুৎ থেকে ২৯ হাজার ৪৫৪ মেগাওয়াট উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দেশে এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসছে ৫৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ২০২১-৪১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ৩০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্রেডা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হলে রিসোর্স ম্যাপিং বেশি জরুরি। তার এখন সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে রোডম্যাপিং করছেন। ইতোমধ্যেই সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে রোডম্যাপ পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুতের প্রধানতম সোর্স হলো সৌর বিদ্যুৎ, তাই এখন এই খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধি সময় সাপেক্ষ বিষয়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন সাড়ে তিন একর জমির প্রয়োজন। ফসলী জমি দীর্ঘ সময় আটকে রাখা সম্ভব হয় না। ফলে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জমির পাওয়া। কিন্তু, এখন বিশ্বে জমির বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। জমিতে সোলার প্যানেল স্থাপন করে তার নিচেই ফসল উৎপাদন হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিচে হাঁস-মাছ চাষ করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে স্রেডা’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে যে টার্গেট ধরা হয়েছিলো, তা শুধুমাত্র জমির সংকটের কারনে পূরন করা যায়নি। জমি জটিলতা দেখে তারা বাসা-বাড়ি-অফিস-আদালতের ছাদ ব্যবহারের চিন্তা করেছিলেন। সেই উদ্যোগে ব্যক্তি মালিকানা থেকে কেউ নিজ থেকে এগিয়ে এসেছেন, আবার অনেককেই আজঅ বোঝানো যায়নি। কারণ নিজের ছাদে কী করবেন তা মালিকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সেখানে তো ফোর্স করা যায় না। এখন নদ-নদী খননের পর তীরবর্তী স্থান এবং সরকারি দফতরগুলোর ছাদ পরিপূর্নভাবে যদি ব্যবহার করা যায়, সেখান থেকে কিছু চাহিদা পূরণ হবে। রোডম্যাপে এসবের ব্যাপারে বলা আছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার বিদ্যুৎখাতে এমন পরিবর্তন আনতে চায়, যেখানে কম খরচে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। সে জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহারও কমিয়ে আনার চিন্তা করছে তারা। পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হবে দেশের শেষ কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে, পরিকল্পনায় থাকা সকল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করার বিষয়ে একটি সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকার কেনো সরে আসছে সে প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিনিয়োগকারী পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া পরিবেশের কথা চিন্তা করেও পুরাতন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসছে।

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। সকলেই পরিবেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে পরিবেশের ক্ষতি। আবার তেল-গ্যাস ব্যয়বহুল। তাছাড়া বিশ্বে তেল-গ্যাসের অফুরন্ত মজুতও নেই। তাই জ্বালানি ফ্রি বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকেই ঝুঁকছে সকলে। বাংলাদেশকেও এ বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশের কাতারে দাঁড়াবে। বাড়বে ব্যবসা বাণিজ্য শিল্প কারখানা। এ সব বিষয় মাথায় রেখে সরকার নতুন করে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। সে পরিকল্পনায় ২০৪১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬০ হাজার মেগাওয়াট। যার অর্ধেকই আসবে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআর/একেএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন