বিজ্ঞাপন

স্বীকৃতির উদযাপনে একনিষ্ঠ শ্রোতা প্রধানমন্ত্রী

March 23, 2018 | 8:00 am

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : হাজারো কর্মব্যস্ততা। নির্মল আনন্দ-উৎসবের সুযোগ নেই। একদিকে রাষ্ট্রীয় গুরু দায়িত্ব অন্যদিকে দলীয়ভার। সেই তিনি স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতির উদযাপনে জমকালো উৎসমুখর আনন্দ আয়োজনের অনুষ্ঠান টানা কয়েকঘণ্টা একনিষ্ঠ শ্রোতা হিসেবে উপভোগ করেন। তিনি আর কেউ নন। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের আনন্দ আয়োজন করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন শেখ হাসিনা। তবে বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে সরকার প্রধান হিসেবেও তিনি কেবল ছিলেন ভিভিআইপি নীরব শ্রোতা। এদিন তিনি টানা কয়েকঘণ্টা ছোট বোন শেখ রেহানার সঙ্গে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

বিজ্ঞাপন

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন শেখ হাসিনা। এরপর বাংলার আহবমান সংস্কৃতির বিভিন্ন পরিবেশনা উপভোগ করেন শেখ হাসিনা। ৭টা ২৫ মিনিটে প্রদর্শিত হয় লেজার শো। এসময় স্টেডিয়ামের আকাশ বর্ণিল আলোকচ্ছটায় ছেয়ে যায়। উপস্থিত দর্শনার্থীরা চোখ ধাঁধানো লেজার শো মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে বরণ করেন। এরপর শুরু হয় জমকালো আতশবাজি। উৎসব আনন্দে মেতে উঠে স্টেডিয়াম। জয়বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় স্টেডিয়ামপাড়া।

এরপর ‘আনন্দলোকে-মঙ্গল আলোকে’ সঙ্গীতের সুরে নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীরা। বর্ণিল আতশবাজির সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুই নাতি-নাতনীর সাথে খুনসুঁটিও করতে দেখা যায়। এসময় সরাসরি সম্প্রচারের দায়িত্ব সংশ্লিষ্টরা প্রধানমন্ত্রীকে কয়েকবার ক্যামেরার ফ্লাশব্যাকে দেখান। শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলের এই দুই সন্তানকে এসময় মিটিমিটি হাসতে দেখা যায়, যা দেখা স্টেডিয়ামের বড় ডিসপ্লেতে ভেসে ওঠে।

প্রধানমন্ত্রী আসার আগে বিকেল ৫টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরতেই বাংলার আবহমানের ইতিহাস সংস্কৃতি ঐতিহ্য তুলে ধরে গানে গানে, বাদ্য-বাজনায় স্টেডিয়ামের চারপাশ প্রদক্ষিণ হয়। এরপর মঞ্চে সংগীতসহ বিভিন্ন ডিসপ্লে প্রদর্শন করে শিল্পীরা। আর লেজার শোতে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চেও ভাষণ, ২৫ মার্চের ভয়াল কাল রাত্রির খণ্ডচিত্র প্রদর্শিত হয়। মঞ্চে কখনো একশো দোতরা শিল্পী, কখনো ১২০জন বংশীবাদক সুরের মূর্ছনা তোলেন। কখনো একঝাঁক শিশু নৃত্যশিল্পী গানের তালে তালে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা করেন। লাঠিনৃত্যে ফুটে উঠে গ্রাম বাংলার শাশ্বত ঐতিহ্য। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনায় ফুটে ওঠে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য।

বিজ্ঞাপন

স্টেডিয়াম ছিল হাজার হাজার মানুষের কানায় কানায় পূর্ণ। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে এ আনন্দঘন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থিত না থাকলেও শেষ পর্যন্ত উপভোগ করেন। ঘোষণামঞ্চ থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে অনুষ্ঠানে সমাপ্তি ঘোষণা হয়। তার আগে নগর বাউল জেমস একে একে তিনটি গান পরিবেশন করেন। জেমসের শেষ গানে পর অনুষ্ঠান শেষ মনে করে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিআইপি লাউঞ্জে বসা অতিথিরা অনুষ্ঠান শেষ বলে উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার আসনেই বসেই ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর স্থির বসে থাকা দেখে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ অন্যান্য একটু অবাক হন। এসময় ঘোষণা মঞ্চ থেকে অনুষ্ঠানে আরও পরিবেশনার ঘোষণা আসে-এই চিত্র সরাসরি সম্প্রচারের টিভি পর্দায় দেখা যায়।

অনুষ্ঠানের ঘোষণা মঞ্চ থেকে কয়েকবার দীর্ঘসময় ধরে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান উপভোগ করে শিল্পীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানানো হয়। মনোমুগ্ধকর শৈল্পিক পরিবেশনা প্রধানমন্ত্রী ও হাজার হাজার দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রেজোয়ান সিদ্দিকী ববি ও তার স্ত্রী এবং দুই সন্তানও দীর্ঘক্ষণ ধরে উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে একাধিক মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ, সাহিত্যিক, শিল্পীরা ভিআইপি গ্যালারিতে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

বিজ্ঞাপন

 

বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা, মমতাজ, নগর বাউল জেমসসহ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশাত্মবোধক, লোক ও পল্লীগীতি এবং নৃত্যনাট্য পরিবেশন করে। আগত দর্শকরা আনন্দ ও উত্তেজনার ভেতর মোহাচ্ছন্ন আবেশে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে ফাঁকে ফাঁকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারণকৃত ভাষণের খণ্ডচিত্র বাজানো হয়। কখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়ন নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা বিশ্ব নেতাদের মন্তব্যের সঙ্গে তুলনা করে অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের তুলনাচিত্র প্রদর্শিত হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাজধানীর নয়টি স্থান থেকে ৫৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্থ দপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রা করে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একনাগাড়ে কয়েকঘন্টা কোনো অনুষ্ঠানে নিবিষ্ট শ্রোতা হিসেবে উপভোগ করেননি শেখ হাসিনা। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনে স্বীকৃতির এই আনন্দ আয়োজন হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে উপভোগ করলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ঐতিহাসিক সাফল্য উদযাপন উপলক্ষ্যে কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তার আগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক (ইভিআই) এই তিন শর্ত পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠে। সেই যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি উদযাপন করে বাংলাদেশ।

সারাবাংলা/এনআর/টিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন