বিজ্ঞাপন

‘জামায়াতমুক্ত’ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর নামে ২ স্থাপনা

April 1, 2021 | 10:12 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার পর চট্টগ্রামের বেসরকারি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মুজিব কর্নার’ ও ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রিসার্চ সেন্টার ফর ইসলাম অ্যান্ড ইন্টাররিলিজিয়াস ডায়ালগ (বিআরসিআইআইডি)’ স্থাপন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এ দু’টি স্থাপনার উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও ছিলেন।

সীতাকুণ্ডের কুমিরায় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ৪৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এ বিশ্ববিদ্যালয় গত ২৬ বছর ধরে ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে ট্রাস্টি বোর্ডে ঘুরে ফিরে জামায়াত ঘরানার লোকজনই থাকতেন। সর্বশেষ সময় পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর আ ন ম শামসুল ইসলাম ও তার অনুসারীদের। শামসুলই ছিলেন সর্বশেষ ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি।

গত বছরের ডিসেম্বরে সর্বশেষ দুই বছরের জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের দুই বছরের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর গত ১ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। এতে সভাপতি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীকে। ২১ জনের ট্রাস্টি বোর্ডের অধিকাংশই সরকারি ঘরানার লোকজন। নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আওয়ামী ঘরানার শিক্ষক আনোয়ারুল আজিম আরিফ। মূলত এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে জামায়াতের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এরপর ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর নামে দুই স্থাপনার উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, সেটি একটি সংগঠনের ব্যানারে হয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গ যুক্ত ছিল বিএনপি-জামায়াত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডব ইসলামের ওপর কালিমা লেপন করেছে। একটি অপশক্তি বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। ইসলাম কখনো এগুলো সমর্থন করে না, এই অপশক্তিকে রুখতে হবে।‘

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ইসলামের কথা বলে আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুরসম্রাট আলাউদ্দিন একাডেমি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভূমি অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনে হামলা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সৌরভ নাম বলায় এক সাংবাদিককে কালেমা পড়তে বলা হয়েছে, সে হিন্দু না মুসলমান নিশ্চিত হওয়ার জন্য। আরেক জায়গায় কাপড় খুলে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে সে হিন্দু নাকি মুসলমান। এগুলো ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনী করেছে, এখন এই কাজগুলো যারা করছে, তারা একাত্তরের গণহত্যাকারী অপশক্তির পরবর্তী প্রজন্ম।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘যে অপশক্তি বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখে, সেই অপশক্তিই এতদিন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় যুক্ত ছিল। তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জগদ্দল পাথরের মতো বসেছিল। সেই অপশক্তির হাত থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি উদ্ধার করা হয়েছে। আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়নি, আমাদের জাতীয় দিবসগুলো পালন করা হয়নি। আজ এখানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিব কর্নার ও রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে। আমি ট্রাস্টি বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’

প্রধান বক্তার বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেনি। কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সম্পদ নয় এটি। ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার মধ্য দিয়ে যারা সব ধর্মের মানুষকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন, তাদের প্রচেষ্টায় এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ এখানে এসেছে। যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আদালত বাতিল করেছে, তাদের কিছু ব্যক্তি এটাকে নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তির মতো এটাকে ব্যবহার করেছে। এটা কখনো কাম্য হতে পারে না।’

উপমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে। যারা দেশে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও অরাজকতা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত, তারা কোনোভাবেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় যুক্ত থাকতে পারে না। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের ওপর দায়িত্ব আছে এই আইনের বলে যারা এ ধরনের কার্যকলাপে যুক্ত, তাদের অপসারণের। তদন্তের মাধ্যমে সেই আইনি দায়িত্ব এখানে পালন করা হয়েছে। দালিলিক কাগজপত্র অনুসন্ধান করে দেখেছি, চট্টগ্রামসহ দেশ-বিদেশের অনেক অনুরাগী দানশীল ব্যক্তি সবসময় অনুদান দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আজকের পর্যায়ে এনেছেন। তাদের উত্তরসূরীরা আজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন, এটি আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়।’

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী, ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আহসান উল্লাহ, অধ্যাপক ছালেহ জহুর, শাহরিয়ার জাহান।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন