বিজ্ঞাপন

‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’

April 12, 2021 | 7:00 pm

ফারহানা হোসেন শাম্মু

লকের ডাউন দিয়ে বেরিয়ে হয়ত আমরা বৈশাখে মাতার চেষ্টা করব। ফাঁকি দেব সর্বাত্মক কিংবা মারাত্মক প্রহরা। শুধু মনে যেন থাকে মায়ের দম যদি হার মানে যমের কাছে, যদি মানিব্যাগে টাকা কাগজ হয়ে পড়ে থাকে হাসপাতালে স্বামীর জন্য একটি বেডের অভাবে— তাহলে রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতা কিন্তু পিছু ছাড়বে না— ‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো/তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো’? তখন সরকারের বিশোদগারে যুক্তি মিলবে, মুক্তি মিলবে না।

বিজ্ঞাপন

আজকাল এব্রিভিয়েশনের যুগ।
I love you = ILU,
E123 = Easy as 123
Talk to you later = TTYL
IDK = I don’t know
NAGI = Not A Good Idea
PAW = Parents are Watching
P911 = Parent Alert
W8 = wait
QT = Cutie
W8 = wait
ICU = I See You

কোভিড কালের ICU কে কি আমরা ‘দেখা হবে’ ভেবে ভুল করছি?

দেখা হবে না কিন্তু আর! আমরা ভীষণ সাবধানে ছিলাম। আমার বাবা জানুয়ারি থেকে ছিলেন বিশেষায়িত একটি হাসপাতালের যত্নে। যেখানে ঢুকতে চার স্তর বিশিষ্ট কোভিড নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। সিসিটিভিতে রোগী দেখানো হতো। তবু সারা হাসপাতালের মধ্যে শুধু আমার বাবা করোনাক্রান্ত হলেন। আক্রান্ত হওয়া মাত্র কোনো ওয়ার্ডবয় তাকে ধরতে চাইল না। বাকিদের আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে হাসপাতাল দ্রুত তাকে সরিয়ে নিতে অনুরোধ করল। মাসিক দুই লাখ টাকার আয়ের উৎস হওয়া সত্ত্বেও আমার বাবাকে কোভিড হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়ার পর যেন তারা প্রাণে বাঁচল। পনেরটা হাসপাতালে ফোন দিয়ে কোভিড হাসপাতালের শেষ বেডটা পাওয়া গেল আমার বাবার জন্য।

বিজ্ঞাপন

তাহলে কিভাবে আমার বাবা কোভিড আক্রান্ত হলেন? জানা গেল, হাসপাতালের একজন ইলেকট্রিশিয়ানকে পাওয়া গেছে কোভিড পজিটিভ। হয়ত এই সেই মানুষটা, যিনি বিশ্বাস করেন, ‘গরীবের করোনা হয় না’। তার খেঁটে খাওয়া শরীর হয়ত টেরই পায় নাই। কিন্তু বিনা পয়সার আল্লাহর দেওয়া অক্সিজেন লাখ টাকা দিয়ে কিনেও আমার বাবাকে বাঁচানো গেল না।

আমার আশেপাশে আরেক শিক্ষিত গ্রুপ আছে। কোভিড উপসর্গ নিয়ে তারা ঘুরাফেরা করে, অফিসে যায়, বাজার করে, ব্যাংকে যায়। তারা কোভিড টেস্ট না করে নিজের বিবেককে শান্ত রেখে অহর্নিশ খুন করে চলে। তাদের জন্য একজন ব্যাংকার-সন্তান আকাঙ্ক্ষী মা সাড়ে পাঁচ মাসের অনাগত সন্তান নিয়ে আইসিউতে ছটফট করে। তার আলট্রাসাউন্ড করার জন্য একজন ডাক্তার পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়।

ঈদের কোথাও যাই না যাই, সবার জন্য চাই নতুন জামা। কিন্তু আমার বয়ে আনা করোনায় বাবার দম বেরিয়ে গেলে তা সরকারের অক্ষমতা। সিনিয়র চিকিৎসক স্বাস্থ্যগত কারণে চেম্বারে না বসলে ডাক্তাররা পিশাচ। শুধু প্রতিদিন মৃত্যুর খবর শুনতে শুনতে আমাদেরই মনে হয় ‘দ্বার বন্ধ করে আমরা সত্যটাকে রুখি’। আমরা কি জানি প্রতিদিন লাশের গন্ধে ভারি হওয়া ডাক্তার নার্সেরা মানসিকভাবে কেমন আছেন? বোবার কথা বলতে না পারা, অন্ধের চোখে দেখতে না পারা, একজনের গায়কের গান গাইতে না পারার মতো কষ্ট একজন ডাক্তারের রুগী দেখতে না পারার বাস্তবতা। এই কষ্ট যে গাউসিয়া ঘুরে ম্যাচিং কানের দুল না পাওয়া কিংবা ঘটা করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় ঘাটতি কিংবা দম বন্ধ লাগছে তাই চট্টগ্রাম সিলেট বেড়াতে না যেতে পারার চেয়ে মারাত্মক, এই বোধ আর বুদ্ধি আমাদের সবার হোক।

বিজ্ঞাপন

বছরের পর বছর ধরে আমরা বর্ষবরণের উৎসবে গাই, ‘মুছে যাক গ্লানি/ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’।বৈশাখের তাপে সব রোগ জরা ঘুচে পৃথিবী শান্ত হোক। মুমূর্ষুরে উড়ায়ে দিও না, স্রষ্টা, তাদেরকে সুস্থ করে দাও, বাঁচিয়ে রাখো প্রিয়জনের মাঝে। এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো।

১৪২৮ সবার জন্য মঙ্গলময় হোক।

লেখক: গ্রামীণফোন কর্মকর্তা

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন