বিজ্ঞাপন

‘গেজেট প্রকাশে বিব্রতকর অবস্থার অবসান’

December 12, 2017 | 2:06 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকুরি সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ হওয়ায় একটি বিব্রতকর অবস্থার পরিসমাপ্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে গেজেট নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃংখলা) বিধিমালা ২০১৭ রাষ্ট্রপতি প্রণয়ন করেছেন । গতকাল এটির গেজেট প্রকাশ হয়েছে। এই বিধিমালা প্রণয়নের বিষয়ে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে যা বর্ণিত আছে তা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে।  অর্থাৎ—  ‘বিচার বিভাগীয় কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ, কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান, ছুটি মঞ্জুরিসহ অন্যান্য শৃংখলা বিধান রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকিবে। সুপ্রিমকোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির কর্তৃক প্রদত্ত হবে।’”

তিনি বলেন, ‘এই গাইড লাইন অনুযায়ী সংবিধানের ১১৬ অনুযায়ী জুডিশিয়াল সার্ভিস রুল বিধিমালা প্রণয়ন হয়েছে। এর বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থাৎ অভিযোগ-অনুসন্ধান কীভাবে হবে? অনুসন্ধানের পরে এদের সাময়িক বরখাস্ত কীভাবে হবে? এবং এদের অপরাধের তদন্ত কীভাবে হবে? —সব ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে এই বিধিমালায় উল্লেখ করা আছে।’

বিজ্ঞাপন

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন স্তরে পদক্ষেপের ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করবেন এটি বিস্তারিত বলা আছে। এ ছাড়াও যদি সুপ্রিমকোর্ট মনে করে স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। তাহলে তারা রাষ্ট্রপতিকে জানাতে পারবেন। এবং এই পরামর্শের ধারাবাহিকতায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। কাজেই এটা এখন আর নিম্ন আদালতে যারা বিচারক আছেন বা যারা বিচার সংশ্লিষ্টকাজে নিয়োজিত আছেন তাদের শৃংখলার ব্যাপারে, তাদের অ্যাডমেনিস্ট্রেটিভ অ্যাকশনের ব্যাপারে কোনো রকম বাধা রইল না।’

নিম্ন আদালতের বিচারকাদের বিধিমালার গেজেট প্রকাশ হওয়ায় আপনি ভারমুক্ত হয়েছেন কিনা? —এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অবশ্যই। যেহেতু শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মাঝখানে আমাকেই অবস্থান নিতে হয়। যাকে বলে সেতুবন্ধন।’

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের একটি আগ্রহ ছিল গেজেট প্রকাশে এত দেরি হচ্ছে কেন? আর এ কারণে বার বার আমাকে সময় নিতে হয়েছে। সেটা আমার জন্য নিশ্চয় বিব্রতকর ছিল। এই গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে আমার সেই বিব্রতকর অবস্থার পরিসমাপ্তি হলো।’

বিজ্ঞাপন

নিম্ন আদালতের বিচারকদের অভিযোগগুলোর তদন্ত এবং সেটার ফয়সালা কীভাবে হবে? —এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু রাষ্ট্রপতি অ্যাপয়েন্টিং অথোরিটি। রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন বা তিনি যদি জ্ঞাত হন যে অসাদাচরণ হচ্ছে তাহলে সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই পদক্ষেপ নেবেন। অভিযোগ প্রমাণের পর দণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রেও সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ নেবেন।’

বিভিন্ন পর্যায়ে সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শের বিষয়টি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্নিত আছে। সেটারই প্রতিফলন এই বিধিমালায় ঘটেছে।

বিচার বিভাগের সঙ্গে যে একটা দ্বন্দ্ব ছিল এই গেজেটের মাধ্যমে তার অবসান হলো কি না? —জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারে আইনমন্ত্রী বলেছেন, কাজেই আামি আর কিছু বলতে চাই না।’

আগের খসড়া এবং এখনকার গেজেটের মধ্যে মূল তফাৎটা কি ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূল তফাৎটা ছিল প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যেটা চেয়েছিল, আমি যতদূর বুঝতে পেরেছি। সেটা হলো সমস্ত ক্ষমতাটা সুপ্রিমকোর্টের হাতেই থাকবে। সেটা তো সংবিধানবিরোধী একটা অবস্থান। সংবিধানে আছে রাষ্ট্রপতি করবেন কিন্তু সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে করবেন।’

বিজ্ঞাপন

আপনি কি বলছেন ওনার (প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি) অবস্থান ছিল সংবিধানবিরোধী? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘না, ১১৬ যে পর্যন্ত সংবিধানে আছে, এখন যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় তো সর্বময় ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের হাতে দিয়ে দেওয়া যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যেটা চেয়েছিলেন, যে এটা সম্পূর্ণ রূপে বিচার বিভাগের হাতেই থাকবে। সেটা তো হতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।’

সাবেক প্রধান বিচারপতির কারণেই গেজেট প্রকাশে দেরি হয়েছে কি না? —জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাননীয় আইনমন্ত্রী যা বলেছেন, আমি তার রিপিট করতে চাই না।’

প্রধান বিচারপতি নিয়োগসহ অন্যসব কিছুই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন দেন এক্ষেত্রে কি বলা যায় যে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ শাসন করত পারবে এবং তাতে মাসদার হোসেন মামলার মূল স্পিরিট ঠিক থাকল কি না? —জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘না, তা হবে কেন। একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি কোনো রকম অভিযোগ আসে এবং যদি তার বিচার করার প্রয়োজন হয়। আর তা যদি রাষ্ট্রপতি নিজে নিজেই করে ফেলতেন তাহলে বলা যেত সেখানে বিচার বিভাগকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। তা তো করা হচ্ছে না। যাই করা হোক না কেন সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করেই করা হবে।’

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচার বিভাগকে যে উচ্চতায় নিয়ে যেতে চেয়েছেন সেটি এই ‍শৃঙ্খলা বিধির কারণে বাধা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো উচ্চতা না। সংবিধান হলো সবার উপরে। সংবিধান অনুযায়ী সব কিছু হতে হবে। একজন ব্যক্তির ইচ্ছাই বড় না। ব্যক্তি থাকবে না, ব্যক্তি মারা যাবে। সংবিধান থাকবে। কোনো ব্যক্তি যদি মনে করেন তিনি সংবিধানের চেয়ে বেশি বোঝে সেটা কিন্তু ভুল।’

দ্বৈত শাসন বিরাজমান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, দ্বৈত শাসন কেন বলব? দ্বৈত শাসন যারা বলছেন, তারা ঠিক বলছেন না।’

সারাবাংলা/এজেডকে/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন