বিজ্ঞাপন

১ মিনিট ব্ল্যাক আউট,বিশ্বস্বীকৃতি আদায়ে এবার ‘গণহত্যা দিবস’ পালন

March 25, 2018 | 7:53 am

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : মানবসভ্যতার ইতিহাসে ভয়াল, বীভৎস ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কালরাত্রি ২৫ মার্চ। ২০১৭ থেকে দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবসের মর্যাদা নিয়ে পালিত হচ্ছে। ২৫ মার্চ রাতে বাঙালির জীবনে নেমে আসে এক নৃশংস ও বিভীষিকাময় অধ্যায়। বর্বর পাকবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে মুক্তিকামী বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বিশ্ববাসী পরের দিন প্রত্যক্ষ করেছিল মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক বর্বর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। গতবারের ন্যায় এবারও ২৫ মার্চ দিবসটি ১ মিনিট ব্ল্যাকআউট কর্মসূচির মাধ্যমে গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্য নানা কর্মসূচিতে পালন হবে।

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জাতি স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তানি শাসনের দুই যুগের ইতিহাসে বাঙালিদের প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ হয়। কিন্তু সম্ভাবনা নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে পাক সামরিক জান্তা। মার্চের শুরুতেই পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের আহূত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। তার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। পাকিস্তানিরা বাঙালিদের দমনে কৌশলী ভূমিকা নেয়। তারা আলাপ-আলোচনার আড়ালে বাংলাদেশে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক সামরিক কর্মকর্তারা অপারেশন সার্চলাইট শুরুর নির্দেশ দেন। সেদিন মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসসহ রাজধানীতে খুন, লুণ্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞের বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে। ২৫ মার্চ থেকে এই হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত থাকে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ অবধি চলতে থাকে। এই ৯ মাসে পাকবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর, রাজাকার ও আলশামসের সহযোগিতায় তারা ৩০ লাখ বাঙালি এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করে।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২০১৭ থেকে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে প্রতি বছর ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারও দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন হবে। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে দিনটি পালনের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে সর্ব সম্মতিক্রমে পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ ৫৬ জন সংসদ সদস্য এই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেয়। ২০ মার্চ ২০১৭ মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ দিবসটি পালনে ২১ মার্চ ২০১৭ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০১৭ থেকে বছর দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায়ে সরকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ২০১৫ সাল থেকে জাতিসংঘ ৯ই ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছে। বাংলাদেশ ২৫শে মার্চের কালরাত্রিকে গণহত্যার দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা করছে। মহান একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই ২৫ মার্চ গণহত্যার দিনটি একদিন ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করবে-এমন আশায় সরকারি বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

২৫ মার্চ। দিনপঞ্জির স্বাভাবিক নিয়মের হিসেবে একটি রাত। কিন্তু বাঙালী জীবনের এক কালো অধ্যায়। সেদিন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত গভীর হতে শুরু করে। তখনো কেউ জানে না কী ভয়ঙ্কর, নৃশংস ও বিভীষিকাময় রাত অপেক্ষা করছে বাঙালির জীবনে। ব্যস্ত শহরের মানুষগুলো ঘুমের দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হয়ত অনেকে তখন ঘুমিয়েও পড়েছে। রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভারী মারণাস্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তানের সৈন্যরা শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠে। মুহুর্মুহু ভারী অস্ত্রের নিধনযজ্ঞে বর্বর পাক বাহিনী সারারাত নিরস্ত্র বাঙালীর উপর বর্বরোচিত বুনো উল্লাসে হত্যাযজ্ঞ চালায়। মানুষের আর্ত আহাজারি-আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে ওঠে বাংলার আকাশ। লাশের শহরে পরিণত হয় ঢাকা। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে বাঙালি হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। মানব সভ্যতার ইতিহাসে রচিত হয় কালিমালিপ্ত অধ্যায়।

বিজ্ঞাপন

নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষের উপর হামলা চালিয়ে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় স্তম্ভিত হয় বিশ্ববিবেক। শুধু মানুষ নয়, সেই রাতে গণমাধ্যমও রেহাই পায়নি। রেহাই পায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বাঙালির মুক্তির আকাঙ্খাকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করতেই বর্বর পাক হানাদার বাহিনী মানব সভ্যতার ইতিহাসে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। সে রাতেই সোয়া ১টার দিকে এক দল সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির-৩২ নম্বরের বাড়ির দিকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ভিতরে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধু বীরের মতো বাড়ির দোতলার ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়ান। রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে এ বাড়ির টেলিফোনের লাইন কেটে দেয়া হয়। এরপর পাক হানাদার বাহিনীর দল স্বাধীনতার লালিত স্বপ্নকে চিরতরে নস্যাতের জন্য বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারের আগেই ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ইপিয়ারের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।

দিবসটি পালনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। এবার দিবসটি পালনে ২৫ মার্চ কালরাতের প্রথম প্রহর স্মরণ করে সারাদেশ এক মিনিট অন্ধকারের (ব্ল্যাক-আউট) কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি স্থাপনা ছাড়া ২৫ মার্চ রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশ অন্ধকারে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে ‘গণহত্যা দিবস পালন এবং স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে’ এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে এক মিনিট বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখাসহ দুটি দিবস পালনে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ইতিমধ্যেই চিঠি পাঠিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে এক বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিতে তিনি দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীসহ জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। এ ছাড়াও রোববার বিকেল ৪টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন