বিজ্ঞাপন

সুজনের অনিয়ম খুঁজবেন রেজাউল

April 25, 2021 | 9:11 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে ছয় মাসের দায়িত্ব পালনের সময় খোরশেদ আলম সুজন জায়গা বরাদ্দে কোনো অনিয়ম করেছেন কি না— সেটা জানতে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, করপোরেশনের বেহাত জায়গা উদ্ধার করেছিলেন তিনি। এরপর সেগুলো সবধরনের নীতিমালা মেনেই বরাদ্দ দিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৫ এপ্রিল) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ পরিষদের তৃতীয় সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। করোনা মহামারির কারণে প্রথমবারের মতো এ সভা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে কাউন্সিলর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।

সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করেও মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে পাওয়া যায়নি। এমনকি সভায় উপস্থিত বেশিরভাগ কাউন্সিলর বিষয়টি নিয়ে বলতে রাজি হননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিকবার নির্বাচিত দুজন কাউন্সিলর সারাবাংলাকে জানান, সাবেক প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন দায়িত্ব পালনের সময় সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন জায়গা নানাজনকে ইজারা দিয়েছেন। কি পরিমাণ জায়গা ইজারা দেওয়া হয়েছে এবং এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না— সেটা যাচাইবাছাই করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মেয়র নিজেই এই কমিটি গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

করোনা মহামারি ‍শুরুর পর গত বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। সেসময়কার মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন পরিষদের মেয়াদও শেষ হয়ে গেলে সরকার গত বছরের ৬ আগস্ট থেকে ছয় মাসের জন্য খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সুজনের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে বিজয়ী রেজাউল করিম চৌধুরী।

খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। রেজাউল করিম চৌধুরী একই কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি করপোরেশনের বেশকিছু বেহাত জায়গা উদ্ধার করেছি। এসব জায়গার কোনো হদিস ছিল না, করপোরেশনের রেকর্ডপত্রেও ছিল না। আমি খুঁজে বের করে সেগুলো করপোরেশনের সব নিয়মনীতি মেনে অস্থায়ী ভিত্তিতে স্বল্প মেয়াদের জন্য কাউকে ছয় মাস, কাউকে এক বছরের জন্য ইজারা দিয়েছি। করপোরেশনের আয়ের খাত মজবুত করার জন্যই করেছি। স্পষ্ট করে বলতে চাই, এতে করপোরেশনের নিয়ম-নীতির কোনো ব্যত্যয় হয়নি। যারা সর্বোচ্চ দর দিয়েছে, তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি করপোরেশন মনে করে, কোনোটাতে নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে, তারা চাইলেই বাতিল করতে পারে। কারণ সেগুলো অস্থায়ী ভিত্তিতে ইজারা দেওয়া।’

বিজ্ঞাপন

তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সুজন বলেন, ‘আমি খুব খুশি। সঠিকভাবে যদি তদন্ত হয়, তাহলে আমি অভিনন্দন জানাই। আর একটি তথাকথিত অনলাইন পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে যদি তদন্ত হয়, যে পত্রিকার সম্পাদক একজন সাবেক ছাত্রশিবির নেতা, যার মাসহ পুরো পুরিবার জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত, তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক। কারণ এই পত্রিকা শুধু আওয়ামী লীগের জাতীয় ও স্থানীয় নেতাদের টার্গেট করে চরিত্র হনন করে। সুতরাং চরিত্র হননের জন্য যদি তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে আমার ‍দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই বলার নেই।’

এদিকে সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় ১৯টি স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা আড়াই বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।

কমিটির সভাপতি হিসেবে যেসব কাউন্সিলর দায়িত্ব পেয়েছেন তারা হলেন- অর্থ ও সংস্থাপন কমিটিতে মো. ইসমাইল, শিক্ষায় নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, স্বাস্থ্যে জহরলাল হাজারী, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মোবারক আলী, নগর পরিকল্পনায় ওয়াসিম উদ্দীন চৌধুরী, নগর অবকাঠামো নির্মাণে গাজী মো. শফিউল আজিম, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে আবুল হাসনাত মো. বেলাল, ক্রীড়ায় আতাউল্লাহ চৌধুরী, পরিবেশে শৈবাল দাশ সুমন, আইনশৃঙ্খলায় নাজমুল হক ডিউক, যোগাযোগে আব্দুল বারেক, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কমিটিতে মো. ইলিয়াসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া হিসাব ও নিরীক্ষায় কাজী নুরুল আমিন, সমাজকল্যাণ ও কমিউনিটিতে আবদুস সালাম মাসুম, বাজার ব্যবস্থাপনায় মো. আব্দুল মান্নান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জহুরুল আলম জসিম, দরিদ্র হ্রাসকরণে মো. সলিমউল্লাহ, পানি ও বিদ্যুৎ কমিটিতে মো. মোর্শেদ আলম, নারী ও শিশু বিষয়ক কমিটিতে জেসমিন পারভীন জেসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সাধারণ সভা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত সচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ, অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোশেদুল আলম চৌধুরী।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন