বিজ্ঞাপন

গাজায় যুদ্ধবিরতি: স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হতে আহ্বান

May 21, 2021 | 2:58 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি হয়েছে গাজায়। ১১ দিনে দুই শতাধিক প্রাণহানির পর ইসরাইল ও হামাস— দুই পক্ষই মেনে নিয়েছে যুদ্ধবিরতি। তাতে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ২টার পর থেকে আর কোনো হামলার শব্দে কেঁপে ওঠেনি গাজা উপত্যকা। যদিও দুই পক্ষই জানিয়েছে, কোনো একটি পক্ষ শর্ত ভাঙলেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়তে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

বিজ্ঞাপন

যুদ্ধবিরতির এই সংবাদকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিশ্বনেতারা। এর মাধ্যমে গাজায় শান্তি আলোচনাকে কার্যকরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি হলো বলে মনে করছেন তারা। দুই পক্ষের সংঘাতের স্থায়ী সমাধান কিভাবে করা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে সবাইকে মনোযোগী হতেও আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি নেতাদের দায়িত্ব এই এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনা। শুধু তাই নয়, এই সংঘাতের মূল কারণ কী, সেটি নিয়ে তাদের আন্তরিকভাবে সংলাপ শুরু করা উচিত।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, গাজা ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফলে চলমান এই বিভক্তি মিটমাট করতে যতভাবে সম্ভব, সবভাবেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, গাজার নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গাজা পুনর্গঠনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোরদারেও আমরা কাজ করব।

বিজ্ঞাপন

বাইডেন বলেন, ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি প্রতিটি নাগরিকেরই নিরাপদে বসবাসের অধিকার আছে বলে আমি মনে করি। তাদের প্রত্যেকেরই স্বাধীনতা, উন্নতি ও গণতন্ত্রের প্রতি সমান অধিকার রয়েছে। আমার প্রশাসন সর্বোচ্চ দিয়ে নিরন্তর কূটনীতি চালিয়েযাবে। আমার বিশ্বাস, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতায় অগ্রগতির সত্যিকারের সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে। আমি এটি নিয়ে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। তিনি বলেন, অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছ থেকে ফোন পেয়েছি। ইসরাইল ও গাজার মধ্যে যে বিবদমান সম্পর্ক, তা কিভাবে শান্ত রাখা যায় তা নিয়ে আমরা মতবিনিময় করেছি। কূটনীতির মাধ্যমেই দুই পক্ষের মধ্যেকার বিবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব— এ বিষয়ে আমাদের মতের মিল রয়েছে।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যেকার ১১ দিনের যুদ্ধের পর যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জনগণের নিরাপত্তার যেকোনো সুযোগ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ গাজার পরিচালক ম্যাথিয়াস স্মেল বলেন, কী স্বস্তির এক খবর! অবশেষে যুদ্ধের কুৎসিত শব্দ থেকে নিষ্কৃতি মিলছে। এখন গাজার আকাশে কেবল সারভেইল্যান্স ড্রোনের শব্দ। এখন ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজটি হয়তো সহজেই হয়ে যাবে। কিন্তু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যাওয়া জীবনকে স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনা এবং ন্যায় বিচার ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এত সহজ হবে না। অগ্রাধিকারভিত্তিতে এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।

মধ্যপ্রাচ্যে জাতিসংঘের শান্তি বিষয় দূত টর ওয়েনেসল্যান্ড বলেন, গাজা ও ইসরাইলের মধ্যেকার যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানাই। এই সহিংস সংঘাতের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। শান্তি ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশর ও কাতার যে প্রয়াস চালিয়েছে, সে কারণে তাদের সাধুবাদ জানাই। ফিলিস্তিন গঠনের কাজ এখন থেকেই শুরু হতে পারে।

যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত লিনডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, আমাদের এখন টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কিভাবে অগ্রগতি করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। একইসঙ্গে গাজায় যে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন, সেটি নিয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, ইসরাইল ও গাজায় যুদ্ধবিরতির খবরকে স্বাগত জানাই। সব পক্ষকে এখন টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। সহিংসতার যে দুষ্টচক্র এবং বেসামরিক জনগণের প্রাণহানি ঠেকাতেও সবাইকে কাজ করতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব উদ্যোগ, তাতে সমর্থন দিয়ে যাবে যুক্তরাজ্য।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামউদ্দিন হুসেইন বলেন, ইসরাইলি হামলায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আরও সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এই সহিংসতার শিকার প্রত্যেকের প্রতি মালয়েশিয়া গভীর সমবেদনা জানায়। এখন ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত সহায়তার দিকে সবাইকে মনোযোগী হতে হবে।

পূর্ব জেরুজালেমকে ঘিরে উত্তেজেনাকে কেন্দ্র করে ১০ মে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। আল আকসা মসজিদেও অভিযান চালায় ইসরাইলি পুলিশ। এর জের ধরে রকেট হামলা চালায় হামাস, পাল্টা বিমান হামলা শুরু করেন ইসরাইল। দুই পক্ষের অব্যাহত আক্রমণে গাজায় ৬৫ শিশুসহ ২৩২ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে হামাসের হামলায় কমপক্ষে ১২ জন ইসরাইলি নাগরিকের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়।

যুদ্ধবিরতির আগের দিন বৃহস্পতিবারেও উত্তর গাজায় হামাসের স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে কমপক্ষে একশ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজা থেকেও হামাস তিন শতাধিক রকেট হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন