বিজ্ঞাপন

পানি পরিমিত ব্যবহার করুন, অপচয় যেন না হয় : প্রধানমন্ত্রী

March 27, 2018 | 11:51 am

।।সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : বিশ্ব প্রেক্ষাপটে পানি অমূল্য সম্পদ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশে দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে, আবাসন বাড়ছে। পানি বিশেষ করে সুপেয় পানির চাহিদা বাড়ছে। এই পরিস্থিতি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে পানির ব্যবহারে যেন অপচয় না হয়। পানি ব্যবহারে যাতে মিতব্যয়ী হওয়া যায় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

বিশ্ব পানি দিবসে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পানির অন্যতম উৎস নদী। আমরা সৌভাগ্যবান যে আমাদের অনেক নদী। বিশ্বের অনেক দেশ আছে তাদের বৃষ্টি নেই, খাবার পানি নেই, নদীও নেই। সারা বছর তারা বৃষ্টির দেখা পায় না। সে ক্ষেত্রে আমরা অনেক সৌভাগ্যবান।’

বিজ্ঞাপন

এই নদীগুলোকে রক্ষা করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ড্রেজিং করার সময় খেয়াল রাখতে হবে বন্যার পানির জন্য বাঁধ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে। আমাদের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, আমাদের আরও জায়গা লাগবে। ডুবোচরগুলো যেন আমরা ব্যবহার করতে পারি সেটা মাথায় রাখতে হবে।’

নিরাপদ পানি সরবরাহে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯ প্রণয়ন করি, বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩ প্রণয়ন করেছি। এরইমধ্যে ৬৪ লাখ হেক্টর জমি বন্যা নিয়ন্ত্রণ এলাকায় এনেছি।’

‘লবণাক্ত পানির ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানোর জন্য আমরা গড়াই নদী খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। নদী খনন করার পর পানির প্রবাহ বেগে যায়। তখন দেখি দক্ষিণাঞ্চলের লবণ পানি কমে যায়। ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি ক্ষমতায় এসে গড়াই নদী খনন প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছিল। পানি সম্পদ খাতে গত পাঁচ বছরে আমরা ১৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি।’

বিজ্ঞাপন

ঢাকার পুকুরগুলোয় দালানকোঠা উঠেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুভার্গ্যজনক পুকুরের মধ্যে দালানকোঠা উঠে গেছে। পুকুরগুলো রাখা দরকার ছিল। খেয়াল করে দেখবেন পুকুর পাড়ের বাতাস অনেক ঠাণ্ডা থাকে। এই পুকুরগুলোয় বৃষ্টির পানি জমা হয়। আমাদের ভূখণ্ড ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে পানি যত তোলা হবে পানির স্তর তত ফাঁক হয়ে যাবে। ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি আমাদেরই হবে।’

সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নদীপথে স্টিমার-লঞ্চ চলাচল করে। খাওয়া-দাওয়ার পর বর্জ্য সব নদীতে ফেলা হচ্ছে।  যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। প্রত্যেক বাসে ময়লা ফেলার জায়গা থাকতে হবে। হাসপাতালগুলোয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। আবাসিক এলাকায় অনেক হাসপাতাল আছে। কিন্তু হাসপাতালগুরোয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এগুলো জ্ঞানী মানুষেরাই করছেন। জ্ঞানী মানুষেরা অনেক সময় অজ্ঞানের মতো কাজ করছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ৮৭ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানির আওতায় এসেছে। শতভাগ মানুষ যাতে সুপেয় পানি পায় সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি কীভাবে আরো বেশি করে ধরে রাখা যায় তার পরিকল্পনা নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিষ্টি পানির অভাব রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। কিন্তু আমাদের সৌভাগ্য যে, বাংলাদেশে সেই সমস্যাটা নাই। আমরা নদীমাতৃক দেশ, পানির কিন্তু অভাব নেই।’

বিজ্ঞাপন

তারপরও সরকার পরিবেশ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করে পানির সুব্যবস্থা করার লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘দিনে দিনে পানির জায়গাগুলো সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। নগরায়ন ও আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির ক্ষতির বিষয়টা বিবেচনা করতে হবে। আমাদের দেশের এতগুলি নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর- সেগুলি কিন্তু সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কারণ উন্নয়নের নামে আমরা দেখি সবার আগে পুকুর ভরাট, খাল ভরাট বা নদী ভরাট- এই কাজগুলি থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে।’

বাংলাদেশে প্রায় ৭০০ নদী থাকার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এত নদী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে এ নদীগুলির ধারণক্ষমতা কমে গেছে। নদীর তলদেশগুলি আস্তে আস্তে উঁচু হয়ে যাচ্ছে। আমি সবসময় মনে করি, ড্রেজিং করে, নাব্যতা বাড়িয়ে, বর্ষাকালের পানি যতোটা বেশি আমরা সংরক্ষণ করতে পারবো তত বেশি আমাদের দেশের জন্য উপকার হবে।’

ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদ-নদীর গতিপথ ও নাব্যতা পুনরুদ্ধার করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

আন্তঃদেশীয় নদীর পানি ব্যবস্থাপনার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের সাথে একটা সমস্যা ছিল। ৫৪টা নদী ভারত থেকে এসেছে। এই নদীগুলি নিয়ে ভারতের সঙ্গে যথেষ্ঠ আলোচনা চলছে।

প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে ফসল উৎপাদন ও খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতির সাথে বসবাস করতে হবে। প্রতিনিয়ত নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

পানি সম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত সচিব কবির বিন আনোয়ার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন