বিজ্ঞাপন

সময় গেছে ৫ বার, শেষ হয়নি মানিকছড়ি থানার নির্মাণ কাজ

May 29, 2021 | 8:36 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

খাগড়াছড়ি: কাজ শেষ হওয়ার কথা ১৮ মাসে, কিন্তু পাঁচবার সময় বাড়ানো হলেও এখনও শেষ হয়নি মানিকছড়ি থানা ভবনের নির্মাণ কাজ। কাজ শেষ না হওয়ায় মানিকছড়ির জনপ্রতিনিধি, জনসাধারণ ও পুলিশ সদস্যরা ভোগান্তিতে পড়লেও ঠিকাদার চলছেন ‘ধীরে চলো’ নীতিতেই! তবে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ না হলে ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্তিসহ লাইসেন্স জব্দ করার কথা বলছে গণপূর্ত বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

খাগড়াছড়ি গণপূর্ত অফিস সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে ১০১টি জরাজীর্ণ থানা ভবন ‘টাইপ প্ল্যানে’ নির্মাণ করার জন্য ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ পায় খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগ। তারপর খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়, লক্ষিছড়ি ও মানিকছড়ি থানার উন্নয়ন কাজে হাত দেয় সংস্থাটি। নিয়োগ করা হয় ঠিকাদার। শুরু হয় খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়, লক্ষ্মীছড়ি ও মানিকছড়ি থানার নির্মাণ কাজ।

এরইমধ্যে ২০১৯ সালের জুন মাসে ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয় রামগড় থানার। গত ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখে রামগড় থানা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। রামগড় থানা পুলিশ ভবন বুঝে নিয়ে অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু করলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি জেলার অপর দুই থানা লক্ষ্মীছড়ি ও মানিকছড়ির।

তবে লক্ষ্মীছড়ি থানার ৯৭ শতাংশ আর মানিকছড়ি থানার ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করার দাবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।

বিজ্ঞাপন

ছয়তলার ভিতসহ চারতলা বিশিষ্ট মানিকছড়ি থানা ভবনের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। মানিকছড়ি থানা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের  ১ সেপ্টেম্বর মো. নাজির হোসেন অ্যান্ড নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় গণপূর্ত বিভাগ। আর এ কাজটিতে ঠিকাদারী করছেন জেবিল হোসেন রয়েল নামক চট্টগ্রামের এক ব্যক্তি।

২০১৫ সালে মানিকছড়ি থানায় আগুন লেগে পুড়ে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দুই কক্ষ অস্থায়ী স্থাপনায় কাজ করছে পুলিশ। দায়িত্বপালনের জন্য যে পরিবেশ দরকার তার কোনটিই নেই অস্থায়ী এসব স্থাপনায়। মানিকছড়ি থানা কমপ্লেক্সের কাজ শেষ করে তা দ্রুত বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও এলাকাবাসীর।

মানিকছড়ির গচ্ছাবিল এলাকার মাগ্য মারমা, রাজবাড়ি এলাকার পার্সিবেল সাইন লংকেশ, বাজার এলাকার আবদুল মান্নান, তিনটহরী এলাকার মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘মানিকছড়ি থানায় আইনি সেবার জন্য গিয়ে লোকজনকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। জনগণের জন্য বিশ্রামাগার দূরে থাক, পুলিশের বসার জন্য পর্যাপ্ত কক্ষ নেই, ব্যারাক নেই। কোনোরকম খুঁড়িয়ে চলছে থানা।’

বিজ্ঞাপন

যদিও সরকার মানিকছড়ি থানাকে মডেল থানায় রূপান্তরের সব ব্যবস্থা নিয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৭ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে কিন্তু আজ পর্যন্ত ৫ বছর শেষ হলেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। যিনি কাজ পেয়েছেন, তিনি তা না করে রয়েল নামের একজনকে সাব ঠিকাদার নিয়োগ করেছেন। তাঁর অহেতুক গাফিলতির কারণে কাজ শেষ হচ্ছে না। যার ফলে পুলিশ ও জনগণ সবাই ভোগান্তির মাঝে পড়েছে।

মানিকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘২০১৫ সালে মানিকছড়ি থানা পুড়ে যাবার পর ২০১৬ সালে এই ভবনের কাজ শুরু করেন। আজ পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সেবাগ্রহীতা এলাকাবাসী এসে বসার বা অপেক্ষা করার কোনো কক্ষ নেই। পুরো থানার কার্যক্রম চলে দু’টি কক্ষে। অফিসার ইনচার্জসহ অন্যান্য সব পুলিশ কর্মকর্তারা এক কক্ষে বসেন। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলার পর্যন্ত সুযোগ নেই।’ থানার নির্মাণ কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার দাবি জানান তিনি।

মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘মাঝেমধ্যে ছোটোখাটো সমস্যা সমাধানের জন্য থানায় যেতে হয়। কিন্তু এখানে এসে বসার কোন জায়গা পাওয়া যায় না। থানা ভবনের কাজ শুরুর পর ৫ বছর অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত ৫ বার সময় বাড়িয়েও নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় মানিকছড়িবাসী এবং মানিকছড়ি থানা পুলিশের ভোগান্তি চরমে।’ তিনিও ভবনের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।

সাব ঠিকাদার জেবিল হোসেন রয়েল জানান, তারা গণপূর্তের নির্দেশনা মেনেই কাজ করছেন। কাজ শেষ হতে বিলম্ব হওয়ার সব দোষ ঠিকাদারের নয়। পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বিলম্ব হচ্ছে। তারা কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছেস। কাজ শেষ হলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে, এই বিষয়ে ধারণা দিতে পারেননি ঠিকাদার মনোনীত এই এজেন্ট।

বিজ্ঞাপন

খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফয়সাল রহমান বলেন, ‘২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে শুরু হওয়া রামগড়, মানিকছড়ি এবং লক্ষ্মীছড়ি থানার শেষ হওয়ার কথা ১৮ মাসের মধ্যে। কিন্তু প্রায় পাঁচবার শোকজ ও পাঁচবার সময় বাড়ালেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারেনি। লক্ষ্মীছড়ি থানা চলতি মাসেই বুঝিয়ে দেওয়া হবে এবং মানিকছড়ি থানার ডেড লাইন ১৫ জুন পর্যন্ত । এরমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে না পারলে কালো তালিকাভুক্তিসহ তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’

সারাবাংলা/এমও/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন