বিজ্ঞাপন

সম্ভাবনার পথে বাংলাদেশি স্টার্টআপ, প্রয়োজন নীতি সহায়তা

June 6, 2021 | 7:27 pm

সারাবাংলা ডেস্ক:

বাংলাদেশে স্টার্টআপ এগিয়ে চলেছে সম্ভাবনার পথে। তরুণদের উদ্দীপনা এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন খাতের সহযোগিতার সমন্বয়ে এই খাত খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার দুয়ার। সারাবাংলা ডটনেট আয়োজিত ‘বাংলাদেশে স্টার্টআপ: সম্ভাবনা ও নীতিমালা-‘ শীর্ষক সারাবাংলা বিজক্যাফে অনুষ্ঠানে এমনই মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

আরিশা নুসরাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র অধ্যাপক ও প্রাইড গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন, স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনা জাবিন, বিডি জবস এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর এবং সেবা প্লাটফর্ম লিমিটেডের সিইও আদনান ইমতিয়াজ হালিম।

শুরুতেই স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের বর্তমান অবস্থা কি জানতে চাইলে স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনা জাবিন বলেন, বাংলদেশে স্টার্টআপ আসলে খুব বেশি পুরাতন নয়। গত ৬ বছরে এখানে স্টার্টআপ নিয়ে নানাধরনের কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে। সরকারের অবশ্যই এখানে একটি ভূমিকা আছে। সরকার এখানে বেশ কিছু প্লাটফর্ম এবং ইনিশিয়েটিভ নিয়েছে স্টার্টআপ উদ্যোগকে সহযোগিতা করতে। বর্তমানে আমাদের ইকোসিস্টেমে প্রায় দুই হাজার ৪০০ স্টার্টআপ আছে। এর মধ্যে এক হাজার স্টার্টআপ খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি বছরে প্রায় দুইশ করে স্টার্টআপ যাত্রা শুরু করছে। সব মিলিয়ে আমাদের ইকোসিস্টেম এখন অনেক ভালো অবস্থানে আছে। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের এখনো আরও অনেক কিছু করার আছে। যে পলিসি মেকার, যে একটি নতুন স্টার্টআপ শুরু করতে যাচ্ছে সে যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সে যেন একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ পায় সেসব বিষয়টা নিয়ে কাজ করছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ। এই উদ্দেশ্যে চলতি বছর আমরা একটি জাতীয় স্টার্টআপ নীতিমালা তৈরির চেষ্টা করছি।

বিজ্ঞাপন

বিডি জবস-এর প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বলেন, স্টার্টআপ বিষয়টা আসলে নতুন কোনো ‘টার্ম’ নয়। কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই শুরু থেকেই নামকরা প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে না। যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শুরুর দিককার বিষয়টাই হচ্ছে স্টার্টআপ। এরপর ধীরে ধীরে সেটি বড় হয়।

স্টার্টআপের জন্য আলাদা কোনো লাইসেন্স প্রয়োজন কি না- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাপারটা আসলে সেরকম কিছু না। বাংলাদেশের কোম্পানি আইনে বা ট্যাক্স আইনে যদি বলি তবে স্টার্টআপ নিয়ে আলাদা কোনো ডেফিনেশন নাই। স্টার্টআপ এই কাজগুলো করতে পারবে, এই কাজগুলি করতে পারবে না এমন কোনো ব্যাপারও নেই। যেকোনো ব্যবসা যেসব ক্রাইটেরিয়া মেনে করতে হয়, আমরা যাদেরকে স্টার্টআপ বলছি তাদের ক্ষেত্রেও নিয়ম একই।

তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্ন প্রতিবেশি দেশের কথা যদি বলি, সেসব দেশে স্টার্টআপ উদ্যোগের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বিশেষ প্রণোদনা এবং ইকোসিস্টেম বিল্ডআপ করার জন্য কিছু সাহায্য সরকারিভাবে করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও সেটি এখন শুরু হয়েছে। সেই জায়গাগুলোতে আসলে দেখা যায়, অন্য একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা যারা করছেন তাদের জন্য যেরকম নিয়ম-কানুন রয়েছে সে তুলনায় স্টার্টআপ যারা করছেন তাদের জন্য নিয়ম-কানুন অনেকটাই সহজ। কখনো কোনো স্টার্টআপ বিজনেসের জন্য আলাদা লাইসেন্স নিতে হবে সেটা কোথাও বলা হয়নি। এই ব্যাপারটাকে সবসময় সহজ করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এখানে একটা ব্যাপার আছে। যাদেরকে আমরা স্টার্টআপ বলছি তাদের বেশিরভাগই কিন্তু আসলে তরুণ উদ্যোক্তা। তরুণ বলতে কেউ হয়তো সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়েছে। সে হয়ত এত কিছু জানেও না যে কীভাবে ট্রেড লাইসেন্স করতে হয়, কীভাবে একটা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নস সাবমিট করতে হয়। তাই তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে যেন যারা নতুন উদ্যোক্তা তারা যেন তাদের এই ব্যাপারটাতেই ফোকাস করতে পারে। অন্যান্য লিগ্যাল বা ট্যাক্স নিয়ে যেন তারা প্রথমেই ব্যস্ত না হয়ে পড়ে। তাই বলা যায় স্টার্টআপের জন্য আলাদা কোনো লাইসেন্স নাই, আলদা কোনো কিছু নাই। কিন্তু ভবিষ্যতে এই ব্যাপারটা আরও সহজ করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে স্টার্টআপের কি কি পলিসি আছে বা আমাদের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের তুলনায় আমাদের দেশের পলেসি কতটুকু অনুকূল- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও আমাদের সরকার খুবই উদ্যোগী আমাদের স্টার্টআপের ইকোসিস্টেমটাকে বিল্ডআপ করার জন্য। আমাদের এখানে বেশ কিছু প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। আমরা বেশ কিছু স্টার্টআপের জন্য ফান্ডিং করছি। এটা হয়তো অন্যান্য দেশেও আছে। এর মাধ্যমে বেশ কিছু স্টার্টআপ তৈরি হয়েছে।’

‘ইকোসিস্টেম তো আর একদিনে তৈরি হবে না, সময় লাগবে। কিন্তু যে অনুষঙ্গগুলো দরকার, যে মানসিকতা দরকার, তরুণ প্রজন্মের যে উদ্যম দরকার, আস্তে আস্তে দেখতে পাচ্ছি সেই জিনিসগুলো হচ্ছে। এর ফলাফল হিসেবে অদূর ভবিষষ্যতেই আমরা হয়তো আরও অনেক সফল স্টার্টআপ দেখবো।’

টিনা জাবীন বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের স্টার্টআপ পলিসি বা এক্ট বলতে আসলে কিছু নেই। একটা পলিসি করার প্রসেসে আমরা আছি।’

আদনান ইমতিয়াজ হালিম বলেন, স্টার্টআপ বিজনেসের ক্ষেত্রে যেটা হয়, একটা আইডিয়ার উপর বিনিয়োগ করা হয় যার আসলে কোন নিশ্চয়তা থাকে না। তখন শুধুমাত্র যারা কি না ‘হাই রিস্ক টেকার’ তারাই সেটা করতে পারে। এখন এই ক্ষেত্রে আমরা যাদেরকে ‘অ্যাঞ্জেল’ বলি, ‘অ্যাঞ্জেল’ আসলে অ্যাঞ্জেলের মতই আক্ষরিক অর্থে। কারণ একজন উদ্যোক্তা যখন একটি কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করেন, যখন সেটির কোনো ভিত্তিই তৈরি হওয়া না বা আইডিয়াটি ফুল প্রুফ বলে বিবেচিত না তখন দেখা যায় যারা রিস্কটা নেয়, প্রথম যে টাকাটা লাগে সেই টাকাগুলো যারা ইনভেস্ট করে তাদেরকে আমরা অ্যাঞ্জেল বলি। অ্যাঞ্জেলরা মূলত ভরসার উপরে ভিত্তি করে বিনিয়োগ। অন্যদিকে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট হচ্ছে তারা যারা লজিক্যাল ওয়েতে হিসেব নিকেশ করে বিনিয়োগের মাধ্যমে ঝুঁকি নেয়।

বিজ্ঞাপন

ফাহিম মাশরুর বলেন, বিজনেস প্ল্যান তো থাকতেই হবে। কি করতে যাচ্ছি, কেন করবো এটাই তো বিজনেস প্ল্যান। বিজনেস প্ল্যানের গুরুত্ব যত বেশি, তার চাইতেও গুরুত্ব হচ্ছে সঠিক এজামশান বা অনুমান তৈরি করা। অনেকেই এটি করতে পারে না। আমি যে প্রোডাক্টটা তৈরি করবো সেটার কাস্টমার কারা, দাম কত হবে সেটা কিন্তু আমি মাথায় চিন্তা করে বসিয়ে দিলাম ব্যাপারটা সেরকম না। এই জন্য মার্কেট সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা উচিত এবং এই জিনিসটা যিনি ফাউন্ডার তারই করা উচিত।

আদনান ইমতিয়াজ হালিম আরও বলেন, স্টার্টআপ নিয়া কাজ করতে যেয়ে একটি সমস্যার জায়গা যেটা আমি দেখেছি, সেটা হচ্ছে ভুল প্রত্যাশা রাখা। অনেকেই ভাবছে স্টার্টআপ শুরু করার পরদিনই অনেকগুলো টাকা চলে আসবে, কয়েকদিনের মধ্যেই কোম্পানির মালিক হয়ে যাবে। এই ধারণাটা ভুল। এই জায়গা থেকে বের হয়ে কাজ করতে হবে। জিনিসটাতে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী আগানোর সময় দরকার। একই পরিকল্পনা বিভিন্ন জনের মাথায় থাকতে পারে। কিন্তু কাস্টমারের চাহিদা বুঝে যে যত দ্রুত সম্ভব সেবাটা পৌঁছে দিতে পারবে, সে-ই সফল হবে।

সারাবাংলা/এসএসএ/আরএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন