বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য খাত নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এখন ফ্যাশন: মন্ত্রী

June 12, 2021 | 7:28 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সম্প্রতি উদ্বেগ জানালেও তাদের তুলে ধরা তথ্যকে মনগড়া হিসেবে অভিহিত করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনা করা বর্তমানে ‘ফ্যাশন’ হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির কথাটি এখন একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অথচ বেসরকারি হাসপাতালের টেস্টিং জালিয়াতি, একজন ড্রাইভার বা নিম্নপদস্থ কর্মচারীর দুর্নীতি বা বিচ্ছিন্ন কোনো কর্মকর্তার মাধ্যমে অস্বচ্ছতার খবর ছাড়া কেউ স্বাস্থ্য খাতের বড় কোনো দুর্নীতি দেখাতে পারেনি। এক্ষেত্রে যারাই স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম করেছে, তাদের সবাইকেই আইনের আওতায় এনে বিচার করা হয়েছে।

শনিবা (১২ জুন) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ‍মৃত্যুবরণকারী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদ মনোয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে থেকে টিআইবি স্বাস্থ্য খাত নিয়ে মনগড়া সমালোচনা করেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার দুঃসময়ে টিআইবি মাঠে নেমে কোনো কাজ করেনি। মাঠে কাজ করেছে দেশের স্বাস্থ্য খাতে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য ফ্রন্টলাইন যোদ্ধারা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে তারা মুখস্থ বিদ্যার মতো ঢালাওভাবে স্বাস্থ্যখাতের সমালোচনা করেছে।

বিজ্ঞাপন

টিআইবি’র করা কিছু সমালোচনার জবাব দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিআইবি বলেছে— দেশে কোভিড টেস্টিং সুবিধা বাড়ানো হয়নি। অথচ দেশে কোভিড টেস্টিং কেন্দ্র মাত্র একটি থেকে এখন ৫১০টি করা হয়েছে। টিআইবি বলেছে— হাসপাতালগুলোতে করোনা বেড বাড়ানো হয়নি। অথচ এখন দেশে করোনা বেড সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি। টিআইবি বলেছে— দেশে আইসিইউ বেড বাড়েনি। অথচ আগে দেশে মাত্র ২০০টির মতো আইসিইউ বেড ছিল। আর এখন আইসিইউ বেড সংখ্যা একহাজারেরও বেশি। টিআইবি ভারতের সঙ্গে ভাকসিন কেনার চুক্তিতে অস্বচ্ছতার কথা বলেছে, যা মোটেও সত্য নয়। ভারতের সঙ্গে চুক্তি থেকে শুরু করে সবকিছু ছিল স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার ও উন্মুক্ত। দেশের সব মানুষই জানে, ভারতের সঙ্গে কী কী ছিল চুক্তিতে এবং কেন ভারত চুক্তির অবশিষ্ট ভ্যাকসিন দিতে পারেনি।

বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার, ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির অগ্রাধিকার, বিদেশগামী যাত্রীদের সেবাদানের মতো বিষয়গুলো নিয়ে টিআইবি যা বলেছে, তা আগাগোড়াই মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মন্তব্য করেন জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এমনকি ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম যখন গোটা দেশেই প্রশংসিত হয়েছে, তখন টিআইবি সেটি নিয়েও সমালোচনা করেছে। অথচ দেশে মাত্র একটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা ছিল। সেটি এখন ১৩৪টি হাসপাতালে সম্প্রসারিত হয়েছে। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই করোনা চিকিৎসা পেয়েছে। ওষুধের কোনো ঘাটতি হয়নি, পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত রাখা হয়েছে। কোথাও কোনো দুর্নীতি হলে সেটিতে দ্রুত গতিতে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। সুতরাং স্বাস্থ্য খাতকে নিয়ে টিআইবির এই মনগড়া মিথ্যা রিপোর্টটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

স্বাস্থ্য খাত নিয়ে টিআইবি কেবল সমালোচনা করার জন্যই সমালোচনা করেছে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাত নিয়ে তারা (টিআইবি) কেবল সমালোচনা করার জন্যই সমালোচনা করেছে। কিন্তু করোনা কেন বাড়ছে, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। কারণ তারা করোনা নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রচারণা বা ভূমিকাই রাখেনি। দেশের হাসপাতালগুলোর সমস্যা গত ৫০ বছরের। রাতারাতি সব সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে— এমন প্রত্যাশা বিজ্ঞতার পরিচায়ক নয়। তারপরও গত একবছরে সাধ্যের সবটুকু দিয়ে হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসাবান্ধব করা হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য খাত প্রসঙ্গে ঢালাওভাবে অসত্য তথ্য তুলে ধরে জনমনে স্বাস্থ্যখাত সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ভ্যাকসিন নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, চীনের কাছ থেকে ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে দ্রুতই এ বিষয়ে পরবর্তী নেওয়া হবে বলে আশা করছি। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও ভ্যাকসিন ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

শহিদ চিকিৎসক ডা. মাহমুদ মনোয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর এই আয়োজনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীর জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদফদরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশিদ আলম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানাসহ অন্যরা।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন