বিজ্ঞাপন

‘তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি আসবে না’ : মহিউদ্দিন আহমদ

March 28, 2018 | 4:33 pm

।। ঢাবি করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা:তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘বিএনপি সংসদে না থাকলেও তারাই কার্যকরভাবে প্রধান বিরোধী দল। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করা সত্ত্বেও বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভারসাম্যে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। জনগণের চোখে তারা একে অপরের বিকল্প। তৃতীয় কোনো শক্তি বা ধারা জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে নিকট ভবিষ্যতে আসবে বলে মনে হয় না’।

বুধবার (২৮ মার্চ) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আর সি মজুমদার মিলনায়তনে নাজমুল করিম স্টাডি সেন্টার আয়োজিত  ‘অনিশ্চিত পথে বাংলাদেশের রাজনীতি’ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপনে এসব কথা বলেন তিনি।

তিন বলেন,নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নড়বড়ে হয়ে গেছে। এ ধরনের মধ্যবিত্তের একটি দল দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলে দলের মধ্যকার সংহতির বাঁধনটা আলগা হয়ে যায়। বিএনপি সংসদে নেই। সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। তবে জাতীয় পার্টি সরকারের অংশ। মন্ত্রিসভায় এই দলের তিনজন প্রতিনিধি আছেন। তবে দলটি জনগণের কাছ থেকে এখনও কাঙ্খিত সমাদর পায়নি।

বিজ্ঞাপন

ব্যাকরণ মেনে বাংলাদেশের রাজনীতি হয় না মন্তব্য করেন মহিউদ্দিন আহমদ বলেন,  ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ নির্বাচন নিয়ে সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া বিপদজনক।

‘পরিবারকেন্দ্রিক নেতৃত্বের কারণেই বিএনপি টিকে আছে এবং এখনও এই দলটি আওয়ামী লীগের প্রবল প্রতিপক্ষ। তারা এবার নির্বাচনে অংশ নিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা মরিয়া। আরও এক দফা নির্বাচন বর্জন করার মতো বিলাসিতা বিএনপি নেতারা ভাবতেও পারেন না। তা হলে দল টেকানোই সমস্যা হয়ে যাবে’- বলেন মহিউদ্দীন আহমদ।

প্রবন্ধে বলা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হলো তারা সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ দৃশ্যমান হওয়া সত্ত্বেও সমাজে অস্থিরতা বেড়েছে, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কর্তৃত্ববাদী শাসন।

বিজ্ঞাপন

একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নাগরিকরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বিকল্পের সন্ধান করতে পারে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারা যে আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি ভালো হবে, সুশাসন নিশ্চিত করবে, তাদের অতীত রেকর্ড দেখে তা মনে হয় না। কিন্তু ভোটের ফলাফল যা-ই হোক না কেন তা মিনে নিতে হবে।

টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনমনে ক্ষোভ জন্মেছে। ক্ষমতার বাইরে গিয়ে তার মুখোমুখি হতে আওয়ামী লীগ স্বচ্ছন্দবোধ করবে না। সুতরাং আওয়ামী লীগ হারতে চাইবে না।

আর যদি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে পরাজয়ের সম্ভাবনা থেকেই যাবে। এমন একটি অবস্থায় যেখানে দুই দলই জিততে চায় এবং পরাজয় মেনে নেওয়ার মত মানসিকতা নেই সেখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের যেমন সম্ভাবনা আছে তেমনি আছে আবারও সহিংস রাজনীতির ঘুর্ণাবর্তে পড়ে যাওয়ার। কেউই চাইবে না তাদের প্রতিপক্ষ সরকারে আসুক। এ রকম একটি অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা অনিশ্চয়তার অন্ধকারে হারিয়ে যেতে পারে। সামনের দিনগুলো সহজ হবে না।

রাজনীতির মাঠে খেলোয়াড় বেশি হলে সেখানে নানা রকম সমীকরণ তৈরি হয়। বাংলাদেশে দ্বি-দলীয় রাজনীতি এমন একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যেখানে মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। দুই বড় দলের দ্বৈরথ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগ আছে চালকের আসনে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি নানা কারণেই বিপর্যস্ত। দলটির শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছে। একটি মামলায় তিনি ইতোমধ্যে নিম্ন আদালতে সাজা পেয়েছেন। পরবর্তী নির্বাচনে তিনি কি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ সব দলকে নিয়ে একটি অর্ন্তভুক্তিমূলক নির্বাচন হওয়া বা না হওয়ার সম্ভাবনা পেন্ডুলামের কাঁটার মতো দুলছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমিরিটাস অধ্যাপক ড.সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। স্বাগত ভাষণ দেন নাজমুল করিম স্টাডি সেন্টার এর পরিচালক অধ্যাপক ড. নেহাল করিম।

অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা অনিশ্চিত এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে আছি। আমরা জানি না আমাদের করণীয় কী। রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাস করলে রাজনীতি থাকে। আর রাজনীতি থাকলে ভোট হয়। কিন্তু আমাদের এখানে ভোট হলে একচেটিয়াভাবে হয়। দেশের মানুষ পরিবর্তনের জন্য ভোট দেয়। কিন্তু যখন পরিবর্তন হয়না তখন মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে। জাতিরাষ্ট্র কথাটা সঠিক নয়। রাষ্ট্র হবে গণতান্ত্রিক। এমন একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার ছিলো। যেখানে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা থাকবে। এগুলো সংবিধানে থাকলেও বাস্তবে নেই।

সারাবাংলা/আরএম/আইএ/এমএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন