বিজ্ঞাপন

হ্যাটট্রিক জয়ের মিশনে ঠাকুরগাঁও আসছেন শেখ হাসিনা

March 29, 2018 | 8:19 am

।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঠাকুরগাঁও থেকে: টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হ্যাটট্রিক আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বার্তা নিয়ে ভোটের মাঠে ছুটছে। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসভায় অংশ নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) উত্তরের জনপদ ঠাকুরগাঁও’এ দেড় যুগ পর বিভিন্ন উন্নয়ন উপহার নিয়ে নৌকায় ভোট চাইতে আসছেন শেখ হাসিনা। তিনি সেখানে ৩৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরের উদ্বোধন করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ঠাকুরগাঁও শহর নতুন রূপে ব্যানার-ফেস্টুন-তোরণে সুসজ্জিত করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও প্রবেশের দ্বারপ্রান্তগুলোও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন-তোরণ ও উন্নয়ন বার্তায় সজ্জিত করা হয়েছে। শহর থেকে উপজেলা, ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ডে এই সাজ সাজ আলোকসজ্জা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে উত্তর জনপদের শহরটি উৎসব আলোকে নতুন আলোয় সেজেছে।

বিজ্ঞাপন

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আখতারুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও সফর আসছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ঠাকুরগাঁও সফরকালে কলেজ ভবন, ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তা-ঘাটসহ মোট ৩৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর শুভ উদ্বোধন করবেন। বিকেল ৩টায় ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড়মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে এক জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ইতিমধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন ও জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনগুলো ঠাকুরগাঁও জেলাকে সাজিয়েছেন এক নতুন সাজে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর জনসভাটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৭ বছর পর এই প্রথম ঠাকুরগাঁও সফরে আসছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে নানা প্রাপ্তি ও প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছে দলমত নির্বিশেষে ঠাকুরগাঁওয়ের সর্বস্তরের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফর নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে অভিমত জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার রায় সারাবাংলাকে জানান, উত্তরের অবহেলিত জেলা ঠাকুরগাঁও। এই অঞ্চলের ৮০ ভাগ মানুষ কৃষিকাজের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এই জেলায় ভারী কোনো শিল্পকারখানা স্বাধীনতার পর থেকেই গড়ে ওঠেনি। রাজধানীর সাথে সরাসরি রেল পথে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকলেও তা অদৃশ্য কারণে আটকে রয়েছে। কৃষি ভিত্তিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে দীর্ঘদিন যাবত বঞ্চিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষের চাওয়া পাওয়ার প্রতি গভীর আন্তরিক। তাই তিনি এবার জাতীয় নির্বাচনের আগে ঠাকুরগাঁবাসী বিভিন্ন উন্নয়ন উপহার দিতে আসছেন।

এর আগে জাতীয় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে ২০০১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও আসেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে টার্গেট নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জনসভা করেন। ২২ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় অংশ নেন। এরপর ৩ মার্চ খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের জনসভা, ২২ মার্চ চট্টগ্রামে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জনসভায় অংশ নেন। এছাড়াও আগামী ১ এপ্রিল চাঁদপুরে জনসভায় অংশ নেবেন।

বিজ্ঞাপন

গত ৩০ জানুয়ারি ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’র দেশ হিসেবে খ্যাত সিলেট থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ের মিশন নিয়ে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন। সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনার জন্য জাতীয় নির্বাচনে নৌকায় ভোট আহ্বান করেন। সেদিন শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা জানেন, আমরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে চার বছর মেয়াদ পূর্ণ করে পাঁচ বছরে পদার্পণ করেছি। সামনে আমাদের জাতীয় নির্বাচন। ২০১৮ সালের শেষের দিকেই নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা নির্বাচনী প্রচার পাঁচ বছরে পদার্পণ করার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করেছি। আর শুরুটা করলাম সিলেট থেকে। যেখানে হজরত শাহ জালাল, শাহ পরাণের পুণ্যভূমি; সেই সিলেট থেকেই আমরা এই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করছি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ হাত পেতে চলবে না। বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। বাংলাদেশ উন্নত হবে, সমৃদ্ধিশালী হবে। বাংলাদেশের মানুষ সবাই বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাথে এগিয়ে যাবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আগামীতে যে নির্বাচন ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে হবে, সেই নির্বাচনেও আমরা আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। নৌকা সমৃদ্ধির পথ দেখিয়েছে। নৌকা উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আপনারা ওয়াদা করেন, হাত তুলে ওয়াদা করেন, নৌকায় ভোট দেবেন আপনারা?

এর ধারাবাহিকতায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও শরিক জোটের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে পুনরায় সরকার গঠনের জন্য ভোটারদের কাছে ওয়াদা চান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। আপনাদের এই এলাকায় এর আগেও আমি এসেছি। আপনাদের এই এলাকার উন্নয়নের জন্য আমরা ওয়াদা করেছিলাম- আমরা এই বরিশালের সার্বিক উন্নয়ন করব। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই আমরা দেশের উন্নয়ন করেছি। এই বছরে (২০১৮) ডিসেম্বরে আবার নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আপনাদের কাছে আমার আকুল আবেদন থাকবে, উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করবেন এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন। আজকে নয় বছরে বাংলাদেশকে আমরা যেভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছি সেই ধারাটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। তাই আজ আপনাদের কাছে আমি ওয়াদা চাই, আপনারা ওয়াদা করেন। আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।

এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর জনসভায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন বার্তা তুলে ধরে তৃতীয় মেয়াদে পুনরায় সরকার গঠনের জন্য রাজশাহীবাসীর কাছে ভোট আহ্বান করেন শেখ হাসিনা। খুলনায় জনসভাতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সরকারের গঠনের সুযোগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের সুযোগ চান শেখ হাসিনা। সেই ধারাবাহিকতায় ঠাকুরগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের জনসভাতেও সরকারের উন্নয়ন পদক্ষেপ ও আগামী দিনের লক্ষ্য প্রত্যাশায় নৌকায় ভোট চাইবেন এমনটাই মনে করছেন নেতারা।

সারাবাংলা/এনআর/টিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন