বিজ্ঞাপন

ইইউ’র নতুন কৌশলের সুবিধা নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ

June 24, 2021 | 8:41 am

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত ইইউ পররাষ্ট্রবিষয়ক কাউন্সিল গত এপ্রিলে বৈঠক করে তাদের আগামী দিনের উন্নয়নের কৌশলপত্র রচনা করেছে। যেখানে সুখী, সমৃদ্ধ এবং নিরাপদ বিশ্ব গড়তে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রাধ্যান্য দিয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে ইইউ’র কমিশন এবং উচ্চ-পর্য়ায়ের প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে যৌথভাবে বিস্তারিত ঘোষণা দিবে। তার আগে আগামী জুলাই মাসে বাংলাদেশের উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইইউ’র। ইইউ’র নতুন কৌশল থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করতে চায় বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, আগামী জুলাই মাসে বৈশ্বিক এই জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে ইইউ’র বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধির নিয়মিত বৈঠকও হচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক কৌশল বিবেচনায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান করছে। ইইউ’র নতুন কৌশল থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করতে বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইইউ কাউন্সিলরা গত এপ্রিলে ১০ পাতার ‘ইন্দো-প্যাসিফি অঞ্চলে সহযোগিতা বিষয়ে ইইউ’র কৌশলপত্র’ অনুমোদন করেছে। আগামী সেপ্টেম্বরে ইইউ’র কমিশন এবং উচ্চ-পর্য়ায়ের প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে যৌথভাবে বিস্তারিত ঘোষণা দিবে। ইইউ’র ১০ পাতার কৌশলপত্রে বলা আছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিশ্বের মোট জিডিপি’র ৬০ শতাংশ, চীন-জাপান-ভারতসহ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ৪ অর্থনীতির বাস, বৈশ্বিক উন্নয়নের (গ্লোবাল গ্রোথ) ৩ ভাগের ২ ভাগ এই অঞ্চলে, ডিজিটাল অর্থনীতি ও প্রযুক্তি উন্নয়নের অগ্রভাগে রয়েছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের ৯০ শতাংশ বা ২৪ বিলিয়ন নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান হবে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু হবে এই অঞ্চল। তাই ইইউ এই অঞ্চলের উন্নয়নে শীর্ষ বিনিয়োগকারী, উন্নয়নের ক্ষেত্রে শীর্ষ সহযোগী এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্যিক অংশীদার হতে চায়।

ইইউ বলছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ইইউ নতুন কৌশল নিয়ে শিগগিরই বৈঠকে বসবে। ইইউ চায় যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আঞ্চলিক শক্তিশালী সুশাসন কাঠামো, আঞ্চলিক অর্থনীতির উন্নয়ন, এই অঞ্চলের সমুদ্র ও আকাশ পথের নিরাপদ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হোক। গণতন্ত্র, উন্নয়ন এবং সুশাসনের স্বার্থে এই অঞ্চলে নাগরিক সমাজের বিকাশ, আন্তর্জাতিকমানের শ্রম আইন ও শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, মানসম্মত শিক্ষার উন্নয়ন, জলবায়ু, স্বাস্থ্য এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগী অংশীদার হিসেবে বিনিয়োগ করতে চায় ইইউ।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা এবং বেলজিয়ামের কূটনীতিকরা বলছেন, ইইউ’র নতুন কৌশলের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কাজ করছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতির চর্চা শুরু হয়েছে, বৈশ্বিক জলবায়ু ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ, শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে শ্রম আইন সংস্কার করেছে, দারিদ্র বিমোচন এবং নারীর ক্ষমতায়নেও বাংলাদেশের প্রচেষ্টা বিশ্বে প্রসংশিত হয়েছে। ইইউ’র নেওয়া নতুন কৌশল থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ।

বেলজিয়ামের কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশকে ইইউ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে চায়। উন্নয়নের পরিকল্পনা হিসেবে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সময়ভিত্তিক যে রোডম্যাপ দাখিল করেছিল তাতে ইইউ খুব একটা খুশি হতে পারেনি। শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশকে আরও কাজ করতে হবে। রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ইপিজেড এ শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার আইনগত সুযোগ দিতে হবে এবং সেখানে নিয়মিত যথাযথ কর্তৃপক্ষের পরিদর্শন নিশ্চিত করতে হবে, শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশকে শ্রম আইনে সংস্কার আনতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ওই কূটনৈতিক সূত্র আরও বলছে, বাংলাদেশ এখন ইইউ’তে যে জিএসপি সুবিধা পায় তা আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এরপর জিএসপি সুবিধা বহাল রাখতে বা নতুন করে পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে আগামী বছরের (২০২২ সাল) জুনের মধ্যে শ্রম আইন সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সকল সদস্য শ্রমিক নির্যাতন ও হয়রানির সঙ্গে যুক্ত তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এরই মধ্যে ইইউ’র পরামর্শ অনুযায়ী সময়ভিত্তিক উন্নয়নের রোডম্যাপ দাখিল করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ইইউ’কে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে যে বাংলাদেশ আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রম আইন সংস্কার করবে। ঢাকা আশা করছে ইইউ’র নেওয়া নতুন কৌশলে ২৭ দেশের এই জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সামনে আরও শক্তিশালি হবে।

সারাবাংলা/জেআইএল/এসএসএ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন