বিজ্ঞাপন

আইডি কার্ড দেখানোর পরেও চিকিৎসককে হয়রানির অভিযোগ

June 27, 2021 | 12:16 am

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সোমবার (২৮ জুন) থেকে ‘সীমিত পরিসরে’ এবং বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ‘কঠোর লকডাউন’ পালনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ঠিক তার এক দিন আগে শনিবার (২৬ জুন) নিজের কর্মস্থলের পরিচয় পত্র (আইডি কার্ড) দেখানোর পরেও রাজশাহীর এক চিকিৎসক পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজশাহী সরকারি কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. মিজানুর রহমান নিজেই জানিয়েছেন যে, তাকে হয়রানি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তবে রাজশাহীর পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হয়রানির অভিযোগ সত্যি কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে ‘কঠোর লকডাউন’, এমনকি অন্য সময়েও চিকিৎসকদের কোনো মুভমেন্ট পাস চাওয়া হচ্ছে না। আইডি কার্ড দেখালেই তাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু ডা. মো. মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি রাজশাহী সরকারি কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত আছি। আজ জরুরি এক ফোন কল পেয়ে রিকশায় করে কারাগারের উদ্দেশে রওনা দিই। বিকেল পাঁচটার দিকে যখন বর্ণালীর মোড়ে পৌঁছাই তখন সেখানে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ও পুলিশ আমাকে থামান। আমাকে আটকানোর পর এক পুলিশ কর্মকর্তারা জিজ্ঞেস করেন, কোথায় যাব আমি? আমি আমার গন্তব্য জানাতেই আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমার ডিউটি কখন? তখন আমি বলি, আমাদের রোস্টার ডিউটি। তারপরও ইমার্জেন্সি কল আসলে হাসপাতালে যেতে হয়। যেহেতু দেশে মহামারি চলছে তাই আমরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করি।’

তিনি বলেন, ‘তিনি আমাদের ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের করার কথা শুনে বলেন— এভাবে তো চলবে না। এই তোমার নাম কী? তখন আমি আবার আমার আইডি কার্ড বের করে দেখাই উনাদের। তখন তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বলেন, মুখে নাম বলার জন্য। পরে আমি মুখেও নাম বলি। এরপরে আমাকে বসিয়ে রাখা হয়। তখন আমি জিজ্ঞেস করি, মহামারিকালে আমি কার্ড দেখানোর পরেও আবার আলাদাভাবে বসিয়ে রেখে এত জিজ্ঞাসাবাদ কেন? যদি সন্দেহ হয় জেল সুপার, ডিআইজি বা আইজি প্রিজনকে ফোন দিতে পারেন। সেটা না করে এভাবে হয়রানির মানে কী? তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন— কথা না বাড়ায়ে যান এখান থেকে।’

বিজ্ঞাপন

যারা আটকিয়েছেন তাদের পরিচয় জানতে চাইলে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেননি ডা. মিজানুর। তবে তিনি বলেন, ‘সেখানে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করি, তাদের অফিসারের নাম কী? তখন তারা আমাকে কিছু বলতে চায়নি। আরেকজন শুধু বলেন যে, তাদের সিনিয়র কর্মকর্তা রাজশাহী বোয়ালিয়ার এডিসি।’

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন বোয়ালিয়ার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তৌহিদুল আরিফ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে ছিলাম না। হয়তোবা তিনি ভুল বুঝেছেন বা তাকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে এ ধরণের ঘটনাও ঘটার কথা না। কারণ এই মহামারি মোকাবিলায় চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। উনাদের কোনো মুভমেন্ট পাস বা অন্যকিছুর জন্য এভাবে আটকানোর কথা না। আইডি কার্ড দেখালেই হয়ে যাওয়ার কথা। অথবা অ্যাপ্রোন থাকলেই তাদের রাস্তায় আটকানোর কথা না। হয়তোবা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু হয়েছে। কিন্তু সেখানে আমি ছিলাম না।’

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগের পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমনটা হওয়ারই কথা না। কারণ সকালেই ওয়ারলেসে সকলকে বলে দেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের আইডি কার্ড দেখালেই সাহায্য করার জন্য। যদি অ্যাপ্রোন পরা থাকে তবে তাকে না আটকানোর জন্য। আর তাই এমনটা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাও খোঁজখবর নিয়ে দেখব।’

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিস-এফডিএসআর’র মহাসচিব ডা. শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহামারিকালে নিজ নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনে যাওয়ার পথে চিকিৎসকদের আইডি কার্ড দেখানোর পরেও হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। এর আগেও দেখেছি এমন হয়রানি। এমনকি জরিমানা আদায়ের জন্য মামলাও দেওয়া হয়েছিল। আমরা এগুলোর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অনতিবিলম্বে এসব হয়রানি বন্ধ করে এই কর্মকাণ্ডে জড়িত অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

চিকিৎসকদের সংগঠন প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটির উপদেষ্টা মো. মুরাদ হোসেন মোল্লা সারাবাংলাকে বলেন, ’কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ফ্রন্টলাইনে থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের কর্মস্থলে যাওয়ার পথে হয়রানি বা আইডি কার্ড দেখার পরেও আটকে রাখার বিষয়টি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত, অগ্রহণযোগ্য।’

তিনি বলেন, ‘যে উদ্দেশ্যে লকডাউন, সেই চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাধা প্রদান, তা যে কারণেই হোক, অত্যন্ত গর্হিত। এমনকি চিকিৎসকরা যদি পারিবারিক জরুরি কাজে বের হয় তবে তাদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ ঘরের কাজটি সেরেই তাকে আবার হাসপাতালে যেতে হবে।’

এর আগে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ। এদিন একাধিক চিকিৎসক রাস্তায় হয়রানি হওয়ার অভিযোগ জানান। এদিন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে গাড়ি আটকানো হয় বলে জানান কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কর্মকর্তারাও। পরবর্তী সময়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট দুটি ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সড়কে পুলিশের কোনো সদস্য অপেশাদার আচরণ করলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন