বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে আক্রান্ত বাড়ছেই, ‘লকডাউনের খড়গ’ কর্মজীবীদের ওপর

June 28, 2021 | 8:29 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হাসপাতালে সংকটাপন্ন রোগী যেমন বেড়েছে, তেমনি কমছে না করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুও। এ অবস্থায় সরকার ঘোষিত ‘সীমিত লকডাউনে’র মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও কলকারখানা খোলা থাকায় মানুষকে জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হতে হয়েছে। আর গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যথারীতি কর্মজীবীদের কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৮ জুন) জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার একদিনে চট্টগ্রামে এক হাজার ১৫১টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী সংক্রমণের হার ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময়ের মধ্যে করোনা শনাক্তের হার রোববার ছিল সর্বোচ্চ। এর আগে শনিবার ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৩০০ জনের। শনিবার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ, শুক্রবার তা ছিল ২৮ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ।

নগরীতে রোববার ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩২৭ জনের মধ্যে ২২৭ জন নগরীর, বাকি ১০০ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। উপজেলাগুলোর মধ্যে আনোয়ারায় সবচেয়ে বেশি ২০ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া রাউজানে ১৭ জন, হাটহাজারীতে ১৮ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১২ জন ও পটিয়ায় ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোতে করোনায় আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা ১০ জনের নিচে।

বিজ্ঞাপন

সোমবারের হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা যাওয়া সাত জনের মধ্যে ছয় জনই বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা বলে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ৯ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনো ব্যক্তি মারা যান।

চট্টগ্রাম জেলায় এই পর্যন্ত মোট ৫৭ হাজার ৯৯৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৪৫ হাজার ৩৫৭ জন, বাকি ১২ হাজার ৬৪০ জন বিভিন্ন উপজেলার। গত ১৪ মাসে করোনায় চট্টগ্রামে মারা গেছেন মোট ৬৮৮ জন। এর মধ্যে নগরীর ৪৬৯ জন, উপজেলার ২১৯ জন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে আক্রান্তের হার ক্রমশ বাড়ছে। মৃত্যুও হচ্ছে। সংকটাপন্ন রোগী বেশি হওয়ায় সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা এখন আর তেমন খালি নেই। সংক্রমণের হার কমাতে হলে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সরকারিভাবে যে সীমিত লকডাউন ও এরপর কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি পুরোপুরি মানতে হবে। ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।’

এদিকে, সরকারের ঘোষিত সীমিত লকডাউনের মধ্যেও সোমবার নগরীজুড়ে মানুষের অবাধ চলাচল দেখা গেছে। লকডাউনের প্রথম দিন বিভিন্ন অফিস, গার্মেন্টস, শিল্প কলকারখানা চালু থাকায় মানুষকে ঘর থেকে বের হতে হয়েছে। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মানুষেকে কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

সোমবার সকালে কয়েক পশলা বৃষ্টিও হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকায়। এর ফলে অফিসগামী মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ে। নগরীর কোতোয়ালি, নিউমার্কেট, টাইগার পাস, আন্দরকিল্লা, চাক্তাই, শাহ আমানত ব্রিজ, বারিক বিল্ডিং, ইপিজেড, পতেঙ্গা এলাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অফিসগামীদের জটলা তৈরি হয়। অনেককে পায়ে হেঁটেই কর্মস্থলে যেতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কোরিয়ান ইপিজেডের একটি কারখানায় কর্মরত সুমিত দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘অফিসগুলোকে নিজ দায়িত্বে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমার জানামতে অধিকাংশ কারখানা সেটা করেনি। অনেক কারখানা শুধু কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেছে। শ্রমিকদের রিকশায় করে বাড়তি ভাড়া গুণে কারখানায় যেতে হয়েছে।’

একটি বেসরকারি ব্যাংকের জিইসি মোড় শাখার কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিটি শাখার কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা তো সম্ভব নয়। আমাদের অফিস খোলা, অথচ গণপরিবহন বন্ধ। রিকশা ভাড়া দ্বিগুণ-তিন গুণ বেশি। সরকারি-বেসরকারি অফিসের বড় বড় কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি আছে। কিন্তু নিম্ন আয়ের কর্মচারী, কারখানার শ্রমিক— তাদের জন্য তো কোনো ব্যবস্থা নেই। এত অব্যবস্থাপনা নিয়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয় বলে সেটা কেউ মানে না।’

নগরীর বিভিন্ন সড়কে রিকশা মোটরসাইকেলের পাশপাশি ভ্যানেও যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে।

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন