বিজ্ঞাপন

সুন্দরবনের বাঘ বাঁচাতে অ্যাকশন প্ল্যান

June 28, 2021 | 10:59 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান নামে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এরইমধ্যে টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান অনুমোদন করেছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে আগামী ১০ বছর একটানা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে সরকার।

২০২২ সালে রাশিয়ায় বাঘ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। এর আগেই বাংলাদেশ বাঘ জরিপ, সহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ চলমান আইন সংশোধন করে কঠিন ধারা সংযোজন করা হচ্ছে। আইনটি সংশোধন করার জন্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অঞ্চল ঢাকা অফিস থেকে একটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান বাঘের বংশবিস্তার সংরক্ষণ, বাঘের খাদ্য হরিণ, শূকর বৃদ্ধি, সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থল উন্নত করা এবং বয়স্ক বাঘের গলায় রেডিও জিপিএস স্থাপন, প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে ভাইরাস ছড়ায় কিনা তা পরীক্ষা করতে বাঘ , হরিণ ও শূকরের রক্ত মল পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সুন্দরবনে বাঘের বর্তমান আবাসস্থল ২৩ ভাগ। এটিকে বাড়িয়ে ৫২ ভাগ করা হচ্ছে। বাঘের বংশ বিস্তারের জন্য নেওয়া হচ্ছে বৈজ্ঞানিক অনেক পদক্ষেপ। জেলে সেজে ফাঁদ পেতে হরিণ ও বাঘ শিকার যারা করে তাদের তালিকা করে সচেতন করা হবে। পাশাপাশি শিকার বন্ধ করতে কঠিন অ্যাকশনে যেতে গঠন করা হয়েছে এলিট ফোর্স।

সূত্রটি জানায় ২০১৫ ও ১৮ সালে সুন্দরবনের বাঘ জরিপ করা হয়। জরিপ অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা বর্তমানে ১১৪টি। এই সংখ্যা বেড়ে কত হয়েছে তা দেখার জন্য চলতি বছর শীত মৌসুমে বাঘের জরিপ কাজ শুরু হবে।

সূত্র জানায়, বাঘের শক্তিশালী প্রজন্ম বৃদ্ধির চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় বাঘেদের একই উত্তরসূরীদের মধ্যে প্রজনন সম্পর্ক তৈরি হয়। এটি বন্ধ করার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। একই উত্তরসূরীদের মধ্যে প্রজনন সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় তাতে অসুস্থ-বিকলাঙ্গ বাচ্চা জন্মের আশঙ্কা থাকে। এই বিষয়টিও সরকার বিবেচনায় রেখেছে।

বিজ্ঞাপন

অ্যাকশন প্ল্যান সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় একজন কর্মকর্তা জানান, বয়স্ক বাঘগুলো একপর্যায়ে হরিণ শিকার করতে পারে না। এরা তখন লোকালয়ে ঢুকে পড়ে হরিণ-ছাগল শিকার এবং মানুষকে আক্রমণ করে। জনগণ ওই বয়স্ক বাঘকে বিভিন্নভাবে আটকে মেরে ফেলে। বয়স্ক বাঘগুলো লোকালয় ঢুকতে গেলে যেন সংকেত পাওয়া যায় সে জন্য বাঘের গলায় রেডিও জিপিএস বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বাঘ যখন লোকালয়ে ঢুকবে বা ঢুকতে যাবে তখন আগাম সংকেত পাওয়া যাবে। এতে স্থানীয় জনসাধারণ সচেতন হবে।

সুন্দরবন পশ্চিমের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘৫/৬ দিন পর কোনো বাঘ একটি হরিণ শিকার করে। একটি বাঘ বছরে ৫২ থেকে ৬০ টি হরিণ খাদ্যের জন্য শিকার করে। ১০০টি বাঘ বছরে ৬ থেকে ৭ হাজার হরিণ খাদ্যের জন্য শিকার করে থাকে। বাঘের খাদ্য ঠিক রাখতে হবে। আর তা না হলে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সে জন্য সুন্দরবনের ভেতরে চারণভূমিতে হরিণের খাদ্য ঘাস কেওরাসহ নানা ধরনের গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘হরিণ এবং বাঘ শিকার বন্ধে বর্তমানে বন প্রহরী ছাড়াও একটি এলিট ফোর্স গঠন করা হয়েছে। তারা রীতিমতো সুন্দরবনের ভেতরে টহল অব্যাহত রেখেছে।’

তিনি আরও জানান, বাঘের আক্রমণে কোনো মানুষ মারা গেলে তার পরিবারকে আগে দেওয়া হতো এক লাখ টাকা। এই টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এই বন কর্মকর্তা বলেন,‘মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে যেন বাঘ নিধন না করে। এখন সচেনতা অনেকটা বেড়েছে। কোনো বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়লে জনগণ সম্মিলিতভাবে বাঘটিকে তাড়িয়ে আবার জঙ্গলে পাঠিয়ে দেয়। এতে করে মনে হয় বাঘ এবং মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয়েছে।’

ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘বাঘের ওপর যেসব হুমকি আছে তা বন্ধ করতে হবে। আগামী দশ বছরের জন্য  সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণ শিকার বন্ধের জন্য নেওয়া হয়েছে কঠিন পদক্ষেপ। সুন্দরবন সংরক্ষণের জন্য সুরক্ষা প্রকল্প এবং বাঘ হরিণ শিকার বন্ধে টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান পদক্ষেপ বাস্তবায়ন পড়তে সরকার বদ্ধপরিকর।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন