বিজ্ঞাপন

রেকর্ড ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বিদায়ী অর্থবছরে

July 5, 2021 | 8:40 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ (১ ডলার ৮৫ টাকা ধরে) ২ লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে এক অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স আর কখনোই পাঠাননি প্রবাসীরা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন বা এক হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের মধ্যে প্রবাসীরা আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। শতকরা হিসাবে এর পরিমাণ ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

অর্থ মন্ত্রণায় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে সবশেষ জুন মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৪ কোটি ৮ লাখ মার্কিন ডলার। বিদায়ী অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসই রেমিট্যান্স এসেছে ২ বিলিয়ন বা ২শ কোটি ডলারের বেশি করে। আর অর্থবছর শেষে দেখা গেছে, প্রতি মাসে গড়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলার।

আরও পড়ুন- এবারে ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ

বিজ্ঞাপন

চলতি অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। অন্যদিকে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসীদের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রফতানি আয় থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার এসেছে। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ।

এদিকে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্সের কারণেই অর্থবছরজুড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নতুন নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। সবশেষ ২৯ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৬ বিলিয়ন ডলারের সীমা অতিক্রম করে। আর আজ সোমবার (৫ জুলাই) এই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৬৪২ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, মূলত তিনটি কারণে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। প্রথমত, অনেক প্রবাসী বিদেশে চাকরি হারিয়েছেন কিংবা অনেকের চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। ফলে তারা তাদের সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, সরকার ২ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এই কারণে বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়ছে। তৃতীয়ত, করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশ থেকে দেশে আসা লোকের সংখ্যা কমে গেছে। ফলে এতদিন যারা হাতে হাতে টাকা পাঠাত, এখন তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ফলে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে।

২০২০-২১ অর্থবছরের ১২ মাসে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স

সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স প্রথমবারের মতো ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত জুলাই মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান, যা এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এরপর আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স কিছুটা কমে হয় ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে তা আবার বেড়ে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়। এরপর গত অক্টোবরে ২১১ কোটি ২০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২০৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার ও ডিসেম্বরে ২০৫ কোটি ৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।

নতুন বছরের শুরুতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমে যায়। চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ৫ লাখ ডলার, মার্চে ১৯১ কোটি ৬৬ লাখ, এপ্রিলে ২০৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলার, মে মাসে ২১৭ কোটি ১১ লাখ  ডলার এবং সর্বশেষ জুন মাসে ১৯৪ কোটি ৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১ হাজার ৬৩১ কোটি  ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।

পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবে রেমিট্যান্স

পঞ্জিকাবর্ষের হিসাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে ২০২০ সালে। আগের সব রেকর্ড ভেঙে গত বছর ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর আগে ২০১৯ সালে  ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।

রেমিট্যান্স প্রবাহের এমন ঊর্ধ্বগতিতে প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, প্রবাসী আয়ের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারার জন্য আমি প্রথমেই রেমিট্যান্স পাঠানো সব ভাই-বোনদের প্রতি কৃজ্ঞতা জানাই। রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ প্রণোদনার বিষয়টি রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতিতে ভূমিকা রেখে বলে আমরা বিশ্বাস করি। অনেকে সমালোচনা করে বলেছিলেন, এটি টেকসই হবে না। কিন্তু সব সমালোচনাকে পেছনে ফেলে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এ কারণে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

মন্ত্রী বলেন, প্রবাসী আয়ের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকার জন্য সরকারের প্রবাসী আয় পাঠানোর নিয়ামকানুন সহজ করে দেওয়া, সময়োপযোগী ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সংস্কারমুখী পদক্ষেপের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। আমাদের এ অর্জন দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের প্রত্যাশা এটি আরও বাড়বে। কারণ নতুন অর্থবছরেও এসব সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন