বিজ্ঞাপন

বিধিনিষেধ শিথিল হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে— আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

July 12, 2021 | 10:15 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। এই বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পুলিশের পাশাপাশি এবার মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রতিদিনই পথে ঘাটে চলছে ধরপাকড়। তারপরও বাড়ছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। মৃত্যুতে রেকর্ড হচ্ছে প্রায় দিনই। এমন পরিস্থিতিতেও ঈদুল আজহা সামনে রেখে বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, ১৫ ‍জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত খোলা থাকবে দোকানপাট, চলবে গণপরিবহন। ২৩ জুলাইয়ের পর থেকে ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১২ জুলাই) তথ্য অধিদফতরের তথ্য বিবরণী বলছে, বিধিনিষেধ শিথিল করার বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আর চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিধিনিষেধ শিথিল করলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। আক্রান্তের পাশাপাশি আরও বাড়বে মৃত্যুর মিছিল। পরিস্থিতি একেবারেই লাগামছাড়া হয়ে যেতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, বিশ্বে লকডাউন যাকে বলে, বাংলাদেশে তা কখনোই কার্যকর হয়নি। অসম্পূর্ণ বা আংশিক বিধিনিষেধ দিয়ে সংক্রমণের ধারা কমানো যায়নি কোথাও, যাবেও না। তারপরও যতটুকু বিধিনিষেধ আছে, সেটিও যদি শিথিল করা হয়, সংক্রমণের হার আরও বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে মৃত্যুর সংখ্যাও।

আরও পড়ুন- শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধ, প্রজ্ঞাপন মঙ্গলবার

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, হাসপাতাল এর মধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তখন হাসপাতালে জায়গা থাকবে না। তখন রাস্তায় পড়ে মানুষের মরে যাওয়ার পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। কিন্তু এমনিতেই আমরা বিজ্ঞানসম্মত বিধিনিষেধ দেইনি, যতটুকু দিয়েছি সেটিও কার্যকর করতে পারিনি। এখন বরং সময় বিজ্ঞানসম্মত প্রকৃত লকডাউন দেওয়ার। এর বদলে বিধিনিষেধ শিথিল করলে একটি নারকীয় অবস্থা তৈরির আশঙ্কা দেখা দেবে।

এর আগে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ক্রমাবনতি দেখা দিতে থাকলে ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। সেটি প্রথমে ৭ জুলাই ও পরে ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বলবৎ রাখার কথা বলা হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য আরও কঠোর ব্যব্স্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছিলেন। কিন্তু এর বিপরীতে আজ সোমবার জানা গেল, বিধিনিষেধ ৯ দিনের জন্য শিথিল করা হবে। ২৩ জুলাইয়ের পর ফের বিধিনিষেধ জারি করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ডা. লেলিন বলেন, করোনাভাইরাস তো মানুষের ভাষা, আবেগ বোঝে না। ভারতে কুম্ভমেলা, দিওয়ালি ও নির্বাচন কেন্দ্র করে যে মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছিল, তা বিশ্ব দেখেছে। বাংলাদেশে যদি করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঢিলেঢালা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশেও ভারতের মতো অবস্থা হবে। ঈদের সময়টাতে মানুষগুলো যে আক্রান্ত হবে, মারা যাবে, তার দায়িত্ব কে নেবে? একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, মানুষকে দুইভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া যায়— একটি সরাসরি হত্যা করা, আরেকটি মৃত্যু হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করা। আমাদের কর্মকাণ্ডে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ঈদকে সামনে রেখে চলবে গণপরিবহন, খুলবে শপিং মল

এদিকে কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থাকলেও অধিকাংশ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কম দেখা যাচ্ছে। সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অলিগলিতে চায়ের দোকান খোলা থাকছে। সেখানে জটলা পাকিয়ে রীতিমতো আড্ডা বসে যাচ্ছে। মাস্ক পরার বালাই নাই। অনেকেরই মাস্ক থুতনিতে।

চলমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, করোনা থেকে মুক্তি পেতে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই। মাস্ক পরতেই হবে। মাস্ক পরা থাকলে সংক্রমণ কম হবে। তবে গরুর হাটে যাওয়া যাবে না। অনলাইনে গরু কেনাকাটা করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে সবাইকে। কোরবানি দেওয়ার জন্য জড়ো হওয়া যাবে না। আমার মনে হয়, আরও সাত দিন আমরা যদি নিজেদের ঘরবন্দি করে রাখতে পারি, তাহলে হয়তো সংক্রমণ কমে আসবে।

সড়কে মানুষের অহেতুক চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও চেকপোস্টে তল্লাশি চলে আসছে বিধিনিষেধ জারির শুরু থেকেই। কিন্তু গত দু’দিনে এই তল্লাশিওতেও দেখা গেছে ঢিলেঢালা ভাব। মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানতে দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যেই করোনা সংক্রমণ ও করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ডও হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গণপরিবহন ও শপিং মল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মানুষকে ঘরে রাখতে পারলে সংক্রমণ সহজে কমানো যায়— এটি প্রমাণিত। কিন্তু মানুষের মধ্যেও সে চিন্তা থাকতে হবে, যা এখন অধিকাংশের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। রাস্তাঘাটে মাস্ক ছাড়া বেরিয়ে পড়ছে সবাই। এ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। তবে মানুষজনকে ঘরে রাখতে খেটে খাওয়া মানুষের বাড়িতে সব পর্যায় থেকে খাবার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান সারাবাংলাকে বলেন, ১২ দিন হলো কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। এর মধ্যে মৃত্যু কিংবা সংক্রমণ কোনোটিই কমানো যায়নি। তারপরও যদি বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়, তাহলে এখন যে বিধিনিষেধ চলছে তার সুফলও পাওয়া যাবে না। এই যে ১৪ দিনের বিধিনিষেধের পর ঈদ সামনে রেখে বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে, এই কয়েকদিনে যে সংক্রমণ ছড়াবে তা পরে আবার কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না।

বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কার বিপরীতে সরকার বলছে, জীবনের পাশাপাশি জীবিকার ভেবে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে গরু ব্যবসায়ী, দোকান মালিকসহ সবার জীবন ও জীবিকার কথা ভেবে যা করা প্রয়োজন, তা বিবেচনা করেই সরকার বিধিনিষেধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন