বিজ্ঞাপন

রাস্তা দখল করে পশুর হাট, নেই স্বাস্থ্যবিধিও!

July 18, 2021 | 11:42 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাকালে ঢাকায় পশুর হাট বসাতে বিশেষ নির্দেশনা ছিল দুই সিটি করপোরেশনের। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কোরবানির পশুর হাটের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ১২ দফা সরকারি নির্দেশনাও। কিন্তু কোনো নির্দেশনাই আমলে নেয়নি ক্রেতা-বিক্রেতা এবং ইজারাদাররা। বরং সড়কের দুই পাশ দখল করে একদিকে হাট বসানো হয়েছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে যানবাহন এবং মাস্ক ও স্যানিটাইজ ছাড়াই চলছে পশুর হাটে বেচাকেনা।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৮ জুলাই) রাজধানীর রাজধানীর মেরাদিয়া, আফতাব নগর, শাহজাহানপুর, দক্ষিণ কমলাপুর, ধোলাইখাল ও ধুপখোলা পশুর হাট ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

গত জুনে যখন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ২৫টি পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত করা হয় তখন যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল- কোনো সড়ক দখল করা যাবে না এবং কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হবে। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারেও সড়কের দুই পাশ দখল করা হয়েছে। অন্যদিকে করোনার এই মহামারিতেও কোনো স্বাস্থ্যবিধির ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

রোববার (১৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টা। রাজধানীর রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে মুরগি টোলা মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক হাঁটতে হয়। দেখা যায়, সড়কের দুই পাশের অর্ধেক দখল করে হাট বসানো হয়েছে। বাঁশ, ত্রিপল আর সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে অস্থায়ী ঘর করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে বালুর স্তুপ। পশুর মলমূত্র আর খাবারের উচ্ছিষ্টাংশে সড়কে হাঁটা মুশকিল। এর ওপর সামান্য বৃষ্টির পানি কর্দমাক্ত করে তুলেছে। সব মিলিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিকশা আর গাড়িগুলোকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

গরুর ব্যাপারীদের কাছ থেকে জানতে চাইলে তারা জানান, এলাকায় থাকতেই ইজারাদার কর্তৃপক্ষ ফোন করে গরু আনিয়েছে। আনার পর দেখেন এখানে কোনো মাঠ নেই। বাধ্য হয়েই তারা সড়কের ওপর গরু বেঁধে রেখেছেন। গাড়ির হর্ন আর কোলাহলের কারণে গরু ঘুমাতে পারে না। গরু শুয়ে থাকবে তারও কোনো উপায় নেই। কারণ নিচে মলমূত্র আর কাদা পানি। পশুগুলো সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাদেরও বিশ্রামের প্রয়োজন।

অন্যদিকে, ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের সহকারী কাউন্টার ম্যানেজার এনামুল হক সারাবাংলাকে জানান, ধোলাইখাল হাটের নির্দিষ্ট কোনো মাঠ না থাকায় সড়কের ওপর পশুর হাট বসানো হয়েছে। সিটি করপোরেশন বিষয়টি জানে। করপোরেশনের কর্মকর্তা হাট পরিদর্শন করে যাওয়ার পর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। কোরবানির পরে সড়কে পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা হবে।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর মেরাদিয়া হাটেরও একই অবস্থা। দক্ষিণ বনশ্রীর এইচ ব্লাক ও কে ব্লকের মেইন রোডের দুই পাশে গরুর হাট বসানো হয়েছে। গরুর মলমূত্র আর বৃষ্টির পানি যেন নান্দনিক বনশ্রীকে ময়লার ভাগারে পরিণত করেছে। এ নিয়ে সচেতন বনশ্রীবাসীর অভিযোগের শেষ না থাকলেও প্রকাশ্যে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়।

দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা আকরাম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রত্যেকবার সড়ক দখল করে ক্ষমতাসীন দলের ছেলেরা গরুর হাট বসিয়ে থাকে। ঈদ শেষে পরিষ্কার করার কথা থাকলেও ঠিকভাবে করা হয় না। আবার কিছু জায়গায় সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে পরিষ্কার করলেও সড়ক খুঁড়ে একাকার করে যায়। তখন ভাঙ্গা সড়কে অনেকদিন যাতায়াত করতে হয়। যখন সড়ক মেরামত করা হয় ঠিক এর কিছুদিন পর আবারও হাট বসানো হয়। এভাবেই চলছে।’

মেরাদিয়া হাটের ইজারাদার কর্তৃপক্ষের সহকারী ম্যানেজার আলতাফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো বনশ্রীবাসীর জন্যই হাট বসিয়েছি। তাদের হাতের কাছে পশু এনে দিয়েছি। তা না হলে তাদের অনেক দূরে গিয়ে পশু কিনে আনতে হতো। এগুলো বুঝতে হবে সবাইকে।’

বিজ্ঞাপন

একই অবস্থা দেখা গেছে আফতাব নগরের হাটেও। আফতাব নগরের বেশ কয়েকটি সড়কে গরু ছাগলের হাট বসানো হয়েছে। এ কারণে কয়েকটি সড়কের বাসিন্দারা গত কয়েকদিন ধরে সড়কে হাঁটাচলা করতে পারছেন না। এমনকি প্রয়োজনীয় কাজেও তারা বের হতে পারছেন না।

আফতাব নগরের ৪ নম্বর সড়কের বাসিন্দা আফরোজা বিনতে হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার পরিবারে দুজন লোক অসুস্থ হয়েছিল গত দুদিন আগে। তাদের হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত আসতে পারেনি। পরে কোনোরকম ভ্যান ডেকে রোগীকে প্রধান সড়কে নেওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সড়ক বাদ দিয়ে পশুর হাট বসালে এরকম হতো না। আজ আমি বিপদে পড়েছি, কাল তো আরেকজনের পড়তে পারে। মেয়রের কাছে অনুরোধ, সড়ক দখল করে যেন পশুর হাট বসানো না হয়।’

এদিকে, রাজধানীর পশুরহাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ন্যূনতম কারও কোনো ধারণা নেই। হাটে আসা বেশিরভাগ লোকের মুখেই মাস্ক নেই। যাদের রয়েছে তাদের বেশিরভাগেরেই থুতনির নিচে। ইজারাদার কর্তৃপক্ষেরও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা থাকলেও কাউকেই দেখা যায়নি।’

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা পশুর হাট নিয়মিত তদারকি করছেন। নিজস্ব ভলান্টিয়াররা মাস্ক বিতরণ করছেন। মাস্ক ছাড়া হাটে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রয়োজন অনুযায়ী কোথাও কোথাও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কোনো প্রকার ব্যত্যয় ঘটতে দেওয়া হচ্ছে না।’

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন