বিজ্ঞাপন

ব্যাংক খুললে বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা, পুলিশের কঠোর বার্তা

July 24, 2021 | 10:51 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ১৪দিনের কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানী ঢাকা ছিল অনেকটাই ফাঁকা। তবে চলমান এই পরিস্থিতি সামাল দিয়ে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর বিধিনিষেধ পালনের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন ঢাকায় কোনো অফিস খোলা না থাকায় রাজধানী ফাঁকা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু রোববার (২৫ জুলাই) থেকে যখন ব্যাংকসহ কিছু অফিস খোলা থাকবে তখন এই ফাঁকা সড়ক আর থাকবে না। সড়কে গাড়ি চলাচল বেড়ে যাবে, রিকশার সংখ্যা বাড়বে প্রচুর। এই সুযোগে নানান শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন অজুহাতে বাইরে বের হবে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতই চেষ্টা করুক না কেন কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে।

বিজ্ঞাপন

অফিসগামী লোকজনের আশঙ্কা, রোববার ব্যাংকসহ কিছু অফিস যখন খুলে যাবে তখন যাতায়াত নিয়ে সবাইকে বিপাকে পড়তে হবে। পুলিশ রিকশা আটকাবে, চেকপোস্টগুলোতে তল্লাশির মুখে পড়তে হবে, কৈফিয়ত দিতে হবে, গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হতে পারে, হেঁটে যাওয়া লাগতে পারে। সব অফিসের যানবাহনের সক্ষমতা নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে মানুষ বিকল্প পথে অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃঞ্চপদ রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ তার আইনের মধ্যে থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে। আইন যতটুকু প্রয়োগ করা দরকার ততটুকুই করবে। নিয়ম ভঙ্গ করে যারা বাইরে বের হবে পুলিশ তাদের আইনের আওতায় আনবে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে সবকিছু পরিষ্কার করে বলা আছে। অফিস খোলা থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গাড়িতে যাতায়াত করবে। বাইরের কোনো যানবাহন গ্রহণযোগ্য হবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবকিছু বন্ধ করা হয়েছে। ব্যাংক কেন খোলা রাখা হয়েছে তা আমরা বলতে পারব না। তবে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। এতটুকু বলছি পুলিশ তার জায়গায় কঠোর থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ‘এবারের বিধিনিষেধ আগের চেয়ে কঠোর হবে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি আনসারসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করবে।’

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র ও সরকার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘লাইফ লাইন ওয়েটা সবসময় ঠিক রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকার ব্যাংক খোলা রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিক। এখন জনগণকেই সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। যারা জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংকে যাবেন তারা কতটুকু স্বাস্থ্যবিধি মানলেন সেটা দেখার বিষয়। এমনকি যাারা বাজারে যাচ্ছেন তারা কতটুকু স্বাস্থ্যবিধি মানছেন সেটাও দেখার বিষয়। নিজেদের সঠিক দায়িত্বটা পালন করতে হবে। তবেই সরকারের দায়িত্ব পালন আরও সহজ হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘একজন নামাজে যাবেন, গলিতে আরেকজনের সঙ্গে দেখা পেয়ে গল্পে মেতে উঠলেন; পাড়ার তরুণরা অলিগলিতে আড্ডা মারছে- এগুলো বন্ধ করতে হবে। অলিগলিতে কি সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাঠানো সম্ভব? তা তো সম্ভব নয়। আমরা নিজের জায়গায় কতটুকু দায়িত্ব পালন করছি সেটা দেখার বিষয়। ব্যাংক বা যেসব অফিস খোলা আছে, সেখানে যারা যাবেন তারা যদি স্বাস্থ্যবিধি মানেন, তাহলে পুলিশের তো কিছু বলার নেই। সমস্যা হলো- আমরা নিয়ম-কানুন কিছুই মানছি না। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, মাস্ক না পড়লে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আইন প্রয়োগ করবেন এটাই স্বাভাবিক।’

বিজ্ঞাপন

অফিস খোলার দিনগুলোতে কঠোর বিধিনিষেধ পালনে কতটা চ্যালেঞ্জ নিতে হবে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) মো. সোহেল রানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ সারাদেশে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কাজ করছে। আইনের ব্যত্যয় কেউ ঘটালে তাকে আইনের মাধ্যমেই মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বন্ধের দিনে মানুষ যেমন বাইরে কম বের হয়েছে, তেমনি পুলিশের সংখ্যাও কম ছিল। আবার যখন ব্যাংকসহ কিছু অফিস খুলবে তখন পুলিশের চেকপোস্টসহ সদস্য সংখ্যাও বাড়ানো হবে। কাজেই চ্যালেঞ্জ বাড়লেও সক্ষমতা রয়েছে পুলিশের।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউন বলি, শাটডাউন বলি আর কঠোর বিধিনিষেধ- যাই বলি না কেন? এগুলো দেওয়া হয় যাতে মানুষজন অকারণে বাইরে বের না হয়। সংক্রমণ এক জায়গা থেকে আরে জায়গায় ছড়িয়ে না পড়ে। ব্যাংক খোলা রাখতে হয়েছে অর্থনীতি সচল রাখতে, মানুষের প্রয়োজনে। টাকার দরকার সবারই রয়েছে। জরুরি পরিষেবা চালু রাখতেই হবে। এখন যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাবে, তারা যদি মুখে মাস্ক না পরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে সেক্ষেত্রে পুলিশ আটকাবে- এটাই তাদের কাজ। এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ বাড়লেও সেটা প্রতিপালন করতে হবে। তাই আমরা যেই বাইরে জরুরি প্রয়োজনে বের হই না কেন আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বের হতে হবে।’

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন