বিজ্ঞাপন

সেই ‘অকার্যকর ওষুধ’ দিয়েই মশার বিরুদ্ধে অভিযানে চসিক

August 4, 2021 | 8:54 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ‘প্রায় অকার্যকর’ রাসায়নিক দিয়েই চট্টগ্রাম নগরীতে ডেঙ্গু-চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে মশা নিধনের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। চসিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশ মেনে তারা ফগার মেশিনের পরিবর্তে স্প্রে মেশিন ব্যবহার করে ওষুধ ছিটাচ্ছেন। আর রাসায়নিকের মাত্রাও বাড়ানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তবে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, স্প্রে মেশিন ব্যবহার করেও চসিকে মজুদ বিদ্যমান ওষুধ প্রয়োগে মশার মৃত্যুহার শতভাগ হবে না। এজন্য হারবাল জাতীয় লার্ভিসাইড ও এডাল্টিসাইড প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু চসিক বলছে, তাদের কাছে বর্তমানে হারবাল ওষুধ মজুদ নেই। সেই ওষুধ পেতে আরও কমপক্ষে ২০ দিন লাগবে।

বুধবার (৪ আগস্ট) নগরীর শুলকবহর ওয়ার্ডের বিপ্লব উদ্যান সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু হওয়া এই মশা নিধন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। মেয়র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রতিদিন চারটি ওয়ার্ডে একযোগে রাসায়নিক ছিটাবেন চসিকের প্রশিক্ষিত ১৬৪ জন কর্মী। এভাবে ১০ দিনে ৪১ ওয়ার্ডে রাসায়ানিক ছিটানো হবে। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে আবারও ৪১ ওয়ার্ডে রাসায়নিক প্রয়োগ করা হবে। এছাড়া দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যারা এলাকায়-এলাকায় গিয়ে লোকজনকে সচেতন করছেন এবং কোথাও জমে থাকা পানি, ময়লা-আবর্জনা পেলে পরিষ্কার করছেন।

মঙ্গলবার মশার ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরিণ আক্তার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়াকে আহ্‌বায়ক এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক রাসেলের নেতৃত্বে একটি টিম এই গবেষণা সম্পন্ন করেন। চসিকের সরবরাহ করা পাঁচ ধরনের রাসায়নিক তারা পরীক্ষা করেন। এছাড়া নগরীর ৯৯টি স্পটের মধ্যে ১৫টি স্পটে তারা সর্বাধিক সংখ্যক এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি শনাক্ত করেন।

বিজ্ঞাপন

 

এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের ব্যবহৃত এডাল্টিসাইড ও লার্ভিসাইডের সঙ্গে কেরোসিন মিশিয়ে (প্রতি লিটারে ১৬ দশমিক ৯ মিলিলিটার) ফগার মেশিনের মাধ্যমে প্রয়োগের দুই ঘন্টা পর দেখা গেছে, মশার মৃত্যুহার মাত্র ১৪ শতাংশ। সরাসরি এডাল্টিসাইড প্রয়োগ করে দেখা গেছে, মৃত্যুহার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ। অর্থাৎ ওষুধ প্রয়োগের পরও ৮০ শতাংশের বেশি মশা অক্ষত থেকে যাচ্ছে। আবার হারবাল জাতীয় এডাল্টিসাইড যা সচরাচর চসিক ব্যবহার করে না, সেটি কোরোসিনের সঙ্গে মিশিয়ে (প্রতি লিটারে এক মিলিলিটার) ফগার মেশিনের মাধ্যমে প্রয়োগের দুইঘণ্টা পর দেখা গেছে, মাত্র ১৯ শতাংশ মশা মারা গেছে। সরাসরি এডাল্টিসাইড ব্যবহার করে ২৫ শতাংশ মশার মৃত্যুর প্রমাণ মিলেছে। অর্থাৎ ফগার মেশিনের মাধ্যমে হারবাল এডাল্টিসাইড ব্যবহার করার পরও ৮০ শতাংশ মশা অক্ষত থেকে যাচ্ছে। মোট ২০০টি মশার ওপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

৫০টি মশার ওপর লার্ভিসাইড স্প্রে করে পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, লার্ভিসাইড কেরোসিনের সঙ্গে মিশিয়ে (প্রতি লিটারে শূন্য দশমিক ১২৫ মিলিলিটার) দুইঘণ্টা পর দেখা গেছে, মাত্র ১৬ শতাংশ মশার মৃত্যু হয়েছে। এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি মাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার করেও শতভাগ মৃত্যু নিশ্চিত হয়নি, মৃত্যুহার ছিল ৮৪ শতাংশ।

তবে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে হারবাল জাতীয় লার্ভিসাইড কেরোসিনের সঙ্গে মিশিয়ে (প্রতি লিটারে ১৬ দশমিক ৯ মিলিলিটার) মশার ওপর ছিটানো পর দেখা গেছে, শতভাগ মশার মৃত্যু হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় হারবাল জাতীয় এডাল্টিসাইড কেরোসিনের সঙ্গে মিশিয়ে (প্রতি লিটারে ১৬ দশমিক ৯ মিলিলিটার) প্রয়োগের দুইঘণ্টা পর শতভাগ মশার মৃত্যু হয়েছে।

আর চসিক যে প্রক্রিয়ায় এডাল্টিসাইড ব্যবহার করে তার কার্যকারিতা তেমন পাওয়া যায়নি গবেষণায়। এডাল্টিসাইড কেরোসিনের সঙ্গে মিশিয়ে (প্রতি লিটারে এক মিলিলিটার) স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে প্রয়োগের দুইঘণ্টা পর মাত্র ৩৪ শতাংশ মশা মারা যাবার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি এডাল্টিসাইড প্রয়োগ করে সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ মশা মারা যাবার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

চসিক থেকে সরবরাহ করা আরও তিনটি রাসায়নিকের কার্যকারিতা পাওয়া গেছে মাত্র ৮ থেকে ১২ শতাংশ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বুধবার থেকে মশা নিধনের যে কর্মসূচি শুরু হয়েছে তাতে সেই লার্ভিসাইডই এলডিইউ’র (লাইট ডিজেল অয়েল) সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘গবেষণায় বলা হয়েছে, আমরা যে ওষুধ ব্যবহার করছি সেগুলোতে মশার মৃত্যুহার খুবই কম। তবে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে যদি মাত্রা বাড়িয়ে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় তাহলে মশার মৃত্যুহার ৮০ তেকে ৮৫ শতাংশ হবে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। আমরা ২০টি পাওয়ার স্প্রে মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করেছি। লার্ভিসাইড ওষুধের মাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। আশা করি আমরা ‍সুফল পাব।’

জানতে চাইলে চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, প্রতি লিটার এলডিইউতে ৬০ মিলিলিটার করে লার্ভিসাইড মিশিয়ে তারপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফগার মেশিনের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। এর পরিবর্তে ২০টি ডিজেলচালিত টু স্ট্রোক স্প্রে মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

হারবাল লার্ভিসাইডের মজুদ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাত্র গবেষক দল হারবাল ওষুধ প্রয়োগের সুপারিশ করেছে। মেয়র মহোদয় আজ (বুধবার) সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের অতি দ্রুততার সাথে ওষুধ সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। আশা করছি, ১৫-২০ দিনের মধ্যে আমরা হারবাল লার্ভিসাইড পাব’- বলেন মোরশেদুল আলম চৌধুরী।

এদিকে মশা নিধন কর্মসূচি উদ্বোধনের সময় চসিকের বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভপতি মোবারক আলী, কাউন্সিলর মোরশেদ আলম, শৈবাল দাশ সুমন, হাসান মুরাদ বিপ্লব, এসরারুল হক, হাজী নুরুল হক, আবদুস সালাম মাসুম, কাজী নুরুল আমিন, সংক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসী, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী যিশু, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু ছিদ্দিক, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদ আলম চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন