বিজ্ঞাপন

বিদায় বেলায় যেসব বললেন মেসি

August 8, 2021 | 7:44 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

গত বছর নিজে থেকেই বার্সেলোনা ছাড়তে চেয়েছিলেন লিওনেল মেসি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মত পাল্টে খুব করেই চাইছিলেন প্রিয় ক্লাবে থেকে যেতে। কিন্তু মেসির ইচ্ছা পূরণ হলো কই, দুদিন আগেই বার্সেলোনার পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ছিঁড়ে যাচ্ছে বার্সা-মেসির ২১ বছরের বন্ধন। মেসি অবশ্য এতোদিন টু-শব্দটাও করেননি। আজ সেই নীরাবতা ভাঙলেন।

বিজ্ঞাপন

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ন্যু ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন ছয়বারের বিশ্বসেরা ফুটবলার। মেসির বিদায় বেলায় ন্যু ক্যাম্পে আগে থেকেই ছিল ভক্তদের ভীড়। অনেকের চোখ গড়িয়ে বেড়িয়েছে অশ্রু। মেসির সাবেক সতীর্থ জেরার্ড পিকে, সার্জিও বুসকেট, জর্ডি আলবারা উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। তিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন মেসির স্ত্রী আন্তোনেয়া রোকুজ্জোও। মেসি সংবাদ সম্মেলনে ঢুকতেই দেখা গেল, তার চোখ ভেজা। বুঝাই যাচ্ছিল কান্না চাপিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, কিন্তু সম্ভব হচ্ছিল না। স্ত্রীর কাছ থেকে টিস্যু চেয়ে নিয়ে অনবরত চোখ মুখতে হলো মেসিকে।

নিজেকে সামলে মেসি শুরুতেই বললেন, ‘এভাবে বিদায় নিতে হবে কখনো ভাবিনি। মনে হয় না কেউই ভেবেছে। চেয়েছিলাম মাঠভর্তি দর্শকের শেষ একবারের অভ্যর্থনার মধ্যে বিদায় নিতে।’ বলছিলেন, বার্সেলোনায় আবারও ফিরবেন তিনি, ‘দেড় বছর ধরে মাঠে আমাদের সমর্থকদের দেখতে পাইনি। তাঁদের না দেখে বিদায় নিতে হচ্ছে, এই ব্যাপারটাই বেশি কষ্ট দিচ্ছে। তবে আমি এখানে আবার ফিরব, এটা আমার ঘর। আমার সন্তানদেরও আমি কথা দিয়েছি, আমি আবার এখানে ফিরে আসব।’

বিজ্ঞাপন

বক্তব্য শেষ হতেই আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লেন মেসি। উপস্থিত সকলে তখন অভিবাদন জানাচ্ছেন, কারো কারো চোখ গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। তারপর শুরু হয় সাংবাদিকদের প্রশ্নত্তর পর্ব।

শুরুতেই জি্জ্ঞেস করা হলো বার্সায় সেরা মুহূর্ত কোনটি, এমন প্রশ্নের জবাবে মেসি বলেন, ‘এত এত মুহূর্তের মধ্যে কোনো একটি বেছে নেওয়া কঠিন। কত শত দারুণ মুহূর্ত কেটেছে, কিছু কঠিন মুহূর্তও ছিল। তবে একটি বেছে নিতে হলে আমি বলব, আমার অভিষেক। সেখান থেকেই সবকিছুর শুরু, আমার প্রথম স্বপ্ন পূরণ।’

বার্সেলোনায় এসেছিলেন ১৩ বছর বয়সে। তারপর এই ক্লাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন টানা ২১ বছর। এবার নতুন ক্লাবে গিয়ে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে মেসিকে। বলছিলেন, ‘এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি এই ক্লাবটা, এই জায়গাটা ছেড়ে যাচ্ছি। আমার জীবন পুরো বদলে যাচ্ছে। এখন আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। বড় বদল এটা, আমার পরিবারের জন্যও এই শহর ছেড়ে যাওয়া কঠিন হবে। তবে আমরা ঠিকঠাকই থাকব। কঠিন চ্যালেঞ্জ এটা, তবে এটা মেনে নিতেই হবে, নতুন করে শুরু করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে পিএসজির কথা। এই প্রশ্নে মেসির উত্তর, ‘পিএসজি একটা সম্ভাবনা। তবে সত্যি বলতে আজ পর্যন্ত কারও সঙ্গেই কিছু চূড়ান্ত হয়নি। (বার্সার পক্ষ থেকে মেসির চুক্তি নবায়ন না হওয়ার) বিবৃতি যখন এসেছে, এরপর থেকে অনেক ফোন এসেছে, অনেক ক্লাবই আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। আমরা এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বার্সেলোনা সমর্থকরা কিভাবে মনে রাখবে? এমন প্রশ্নে মেসির উত্তর, ‘বিনয়ী থেকে, সবাইকে সম্মান দেখিয়েই এই ক্লাবে বেড়ে উঠেছি আমি, চাইব মানুষ আমাকে সেভাবেই মনে রাখুক। পাশাপাশি মাঠে যা করেছি সেটাও মনে রাখুক।’

ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত জানতে চাইলে ক্লাব ছাড়ার এই মুহূর্তটার কথাই বলেছেন মেসি, ‘আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত এটা, কোনো সন্দেহ নেই। ক্যারিয়ারে অনেক অনেক কঠিন মূহূর্ত এসেছে, অনেক হার সয়েছি, কিন্তু ওসবের পর অনুশীলনে ফেরার, জবাব দেওয়ার সুযোগ থাকে। এখানে (এই কঠিন মুহূর্তের) তো পাল্টা জবাব দেওয়ার কিছু নেই। এই ক্লাবে আমার সময় শেষ। অবশ্যই এটা আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত।’

২১ বছর পর বার্সেলোনা ছাড়তে হচ্ছে। কিভাবে মানিয়ে নেবেন? মেসি বললেন, ‘বার্সা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাব, দারুণ একটা ক্লাব। খেলোয়াড় আসবে-যাবে। লাপোর্তা যা বলেছেন, যে কারও চেয়েই ক্লাব বড় – এটা সত্যি। সমর্থকেরা এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন, সব সময়ই এমনটা হয়েছে। ক্লাবে অনেক দারুণ খেলোয়াড় আছে, সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাকভাবেই চলবে।’

বিজ্ঞাপন

বিদায় বেলাতেও বললেন, খুব করেই চেয়েছিলেন বার্সেলোনায় থাকতে, ‘সবাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল যে আমি এখানেই থাকব, সবকিছু ঠিক হয়ে ছিল। সমর্থকদের সঙ্গে সব ব্যাপারে আমরা সব সময়ই সৎ থেকেছি, অন্তত আমার দিক থেকে আমি থেকেছি। আমি কখনোই ক্লাবের সমর্থকদের সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা করিনি। আমি শুধু জানি লা লিগার কারণে এটা (মেসির বার্সায় থাকা) সম্ভব হয়নি, ক্লাবের দেনার কারণে সম্ভব হয়নি। ক্লাবের পক্ষে দেনা আর বাড়ানো সম্ভব নয়। আমি থাকার জন্য যা করা সম্ভব সব করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হলো না।’

মেসি বলেছেন, সংবাদ সম্মেলন শেষে বাড়ি ফিরলে আরও খারাপ লাগবে তার, ‘সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর গত কয়েকদিন খুব বেদনার ছিল। এখন যখন আমি বাড়ি ফিরব, সবকিছু আরও খারাপ লাগবে। তবে এই মুহূর্তটাতে আমার পরিবারের আরও কাছে থাকা দরকার, যাঁদের ভালোবাসি তাঁদের সঙ্গ দরকার। ফুটবল খেলে যাওয়া দরকার, যে কাজটা আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। একবার ফুটবল খেলতে শুরু করলে সবকিছু আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

বার্সেলোনার পক্ষ থেকে বিদায়ী ম্যাচ আয়োজন করার চিন্তা করা হলে? মেসি বলেছেন তিনি সব সময়ই প্রস্তুত, ‘বিদায়ী ম্যাচ আয়োজিত হবে কি না? সমর্থকদের জন্য যে কোনো কিছুই করতে প্রস্তুত আমি।’

মেসি বার্সেলোনায় আরও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার আক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন, ‘আমি আরও দু-একটা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চাইতাম। লিভারপুলের বিপক্ষে সেমিফাইনাল (২০১৯), পেপের (গার্দিওলা) অধীনে চেলসির বিপক্ষে সেমিফাইনাল (২০১২)…। আমার কোনো আক্ষেপ নেই, সব সময় সব কিছু নিংড়ে দিয়েই চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের খেলোয়াড়দের যে দারুণ একটা প্রজন্ম ছিল, তাতে আমরা আরও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারতাম।’

মেসি বলেছেন, তাকে নিয়ে প্রচার হওয়া কিছু কিছু খবর সত্য নয়, ‘আমি বেতন ৫০ শতাংশ কমিয়েছি, সেটা নিয়ে দুই পক্ষের সম্মতি হয়েছে, এরপর তারা (বার্সা) আমার কাছে আরও কিছুর দাবি করেনি। অনেক কিছুই এখন (সংবাদমাধ্যমে) বলা হচ্ছে যেগুলো সত্যি নয়।’

শেষ সময়ে মেসি জানিয়ে গেলেন, ‘না, আমরা সম্ভাব্য সবকিছুই করেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেষ্টায় সফলতা এল না। আপনি যখন নিয়মিত কথা না বলবেন, আপনার ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হবে। কিন্তু সেসবের সবকিছু সব সময় সত্যি হয় না। আমি শুধু আমার দিক থেকে কী হয়েছে সেটা বলতে পারি। আমি সব সময় সৎ থেকেছি, কাউকে ধোঁকা দিইনি। এটা আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’

ক্লাব ইতিহাসের সেরা ফুটবলারটি খুব করেই চেয়েছিলেন থেকে যেতে, তবুও ক্লাব ছাড়তে বাধ্য হতে হলো তাকে। এই বিষয়টি হজম করতে নিশ্চয় কষ্ট হবে বার্সেলোনা সমর্থকদের।

সারাবাংলা/এসএইচএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন