বিজ্ঞাপন

আইনমন্ত্রী জ্ঞানপাপীর পরিচয় দিচ্ছেন: ফখরুল

August 18, 2021 | 10:50 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ চ্যাপ্টার’কে পুনরায় বির্তকের বিষয় হিসেবে তুলে এনে আইনমন্ত্রী জ্ঞানপাপীর পরিচয় দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। বিএনপির উদ্যোগে ‘ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রায়কে অবশ্যই প্রশ্নিবিদ্ধ করছে। কারণ ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন, যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অপরাধমূলক ঘটনা।’

‘কিন্তু ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে এজহার দায়ের করে তার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে সুদীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষী-সাক্ষ্য পর্য়ালোচনা করে বিচারকাজ সম্পন্ন করেছে। ওই বিচার প্রক্রিয়ার পর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ চ্যাপ্টার’কে পুনরায় বির্তকের বিষয় হিসেবে তুলে এনে আইনমন্ত্রী জ্ঞানপাপীর পরিচয় দিচ্ছেন’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের বক্তব্য থেকে প্রশ্ন জাগে- ওই বিচার প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণভাবে জড়িত থেকে আওয়ামী লীগের ভাষায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার পর এই ধরনের বক্তব্য কেন দিচ্ছে? এই ধরনের বক্তব্য কি ক্রিমিনাল এক্সিকিউশনের পর্যায়ে পড়ে না?’

মির্জা ফখরুল বলেন, “সত্য কথাটা উঠে আসুক এজন্য আজকে আমরা ‘ইতিহাস কথা কয়’ বলে এই অনুষ্ঠান করছি। আমাদের মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ একটি তাবেদার রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের সরকার একটা পতুল সরকার। তাদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই, জনগণ বিচ্ছিন্ন একটি সরকার। সেই কারণে তারা মিথ্যা দিয়ে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।”

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সম্পর্কে মিথ্যা কথা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ, জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষণাই দেননি, তিনি যখন যে দায়িত্ব পেয়েছেন তার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি চির ভাস্বর হয়ে আছেন।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রতিহিংসায় এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠার বহুমুখী প্রচারণা চালাচ্ছে। আজকে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে, মিথ্যা মামলার শিকারে পরিণত করা হচ্ছে। আর এই যে আক্রমণ এই আক্রমণের পাল্টা জবাব হিসেবে সত্য জানার অধিকার ও প্রকৃত ইতিহাস চর্চার সংস্কৃতিকে জীবন্ত রাখতে হবে।’

“সেই লক্ষ্যেই বিএনপি সরকারের ইতিহাস বিকৃতির লাগাতার সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘ইতিহাস কথা কয়’ শিরোনামে বিএনপি সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে সম্পৃক্ত করতে চায়। যতদিন বিকৃতির তৎপরতা চলবে ততদিনই এই লড়াই চলবে। যখনই ইতিহাসের ঘটনাকে তারা দলীয় বয়ানে প্রতিষ্ঠায় লিপ্ত হবে তখনই ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হবে ‘ইতিহাস কথা কয়’। এই লড়াই চলমান ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ”- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরলে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। বাংলাদশের মৌলিক প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের উন্নয়ন, দেশকে স্বনির্ভর করা, দেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নেওয়া, মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য দেশকে প্রস্তুত করা- এসব কারা করেছে? সবগুলো জিয়াউর রহমান, বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়ার সফলতা। সেজন্যই তারা সত্য ইতিহাসকে ধামাচাপা দেবার জন্য, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য ইতিহাসকে বিকৃতি করছে।’

দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই শাসকগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের মহান শৌর্য-বীর্জের ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। তারা দেশবাসীকে বোঝাতে চায় যে, একটা ভাষণ দিয়েছেন তাদের নেতা এতেই দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। এই যে লক্ষ মানুষ জীবন দিল, একটি আধুনিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন পণ করে বিজয় ছিনিয়ে নিল এই কৃতিত্ব কাউকে দিতে চায় না তারা।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা তো একজন রাজনৈতিক নেতার মুখ থেকেই আমরা আশা করেছিলাম। তিনি বা তারা দিতে পারেনি, দিয়েছেন এক অখ্যাত মেজর জিয়াউর রহমান। এই কারণে কি তারা ক্ষিপ্ত? আমরা যেটা পারিনি, তুমি পারতে গেলে কেন? এই হীনমন্য থেকে তারা ইতিহাস বিকৃত করছে ১৯৭২ সাল থেকেই।’

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন তারা শুরু করেছে যে, জিয়াউর রহমান মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তারা ভেবেছে যে, ৫০ বছরের কাছাকাছি গত হয়েছে। সুতরাং এখন এই ধরনের মিথ্যাকে সত্য করার সময় এসে গেছে। মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে গোয়েবেলসীয় কায়দায় জিয়াকে একটা হত্যাকারী ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে জনগণের সামনে প্রমাণ করার জন্য তারা এই উদ্যোগ তারা নিয়েছে।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন