বিজ্ঞাপন

দাসপ্রথা ও বাণিজ্য, মানবসমাজের কলঙ্ক

August 23, 2021 | 4:57 pm

সাদিয়া আফরিন মৌরী

আন্তর্জাতিক দাস বাণিজ্য স্মরণ ও রদ দিবস ২৩ আগস্ট। অর্থাৎ দাসপ্রথা বিলোপ দিবস। ইউনেস্কোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর এই দিনেই আন্তর্জাতিকভাবে এই দিবসটি পালিত হয়। ১৭৯১ সালের ২২ ও ২৩ আগস্ট বর্তমান হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিক অঞ্চলে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্রিটেন ১৮০৭ সালে ও যুক্তরাষ্ট্র ১৮০৮ সালে তাদের আফ্রিকান দাসদের মুক্তি দেয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র যথাক্রমে ১৮৩৩, ১৮৪৮ ও ১৮৬৫ সালে আইন করে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে।

বিজ্ঞাপন

আধুনিক সভ্যতায় দাসপ্রথা শব্দটি শুনতে একটু অদ্ভুত বা রটানো গল্প মনে হলেও একটা সময় ছিলো যখন সমাজব্যবস্থায় দাস রাখাটা স্বাভাবিক ছিলো। আর সে সময়টা ছিলো মানবজাতির জন্য অন্ধকার একটা সময়।

একটা সময় অভিজাতরা তাদের আভিজাত্য প্রকাশের জন্য দাস রাখত। এবং তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলতো এই নিয়ে যে দাসের সংখ্যা বেশি কাদের। যাদের কাছে দাসের সংখ্যা বেশি তারাই বেশি বিত্তশালী, এটাই ভাবা হতো তখনকার সময়ে। এমনকি শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণির ঘরেও দাস থাকতো। দাস কেনা-বেচা করা হতো, দাসদের মানুষই ভাবা হতো না তখনকার সময়ে। দাস ছিল মনিবের সম্পদ, কখনো দাসদের প্রতিবাদ করার সুযোগ ছিলো না। সব অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতে হতো। বিনা পারিশ্রমিকে ক্রেতা দাসকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতো, দাসদের বলার কিছুই ছিলো না। সে সময়ে সাধারণত একটু নিচু নিম্নবিত্তের মানুষরা ঋণের বোঝা থেকে মুক্তির জন্য দাসত্ব মেনে নিতেন। বিভিন্ন চক্রে পড়ে ঋণের বোঝা এতোটাই বড় হয়ে যেত যে তারা নিজেদের সঁপে দিতো ঋণদাতার কাছে।

সবচেয়ে ভয়ংকর বিষেয়টি হলো, দাসের সন্তান-সন্ততিও দাস বলে গণ্য হত। অনেকক্ষেত্রে যুদ্ধে হেরে গেলে, হেরে যাওয়া পক্ষের লোকদের দাস বানিয়ে ফেলা হতো। অমানবিকভাবে সারা জীবন খেটে মরতে হত তাদের। এ চক্র থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না, যদি না তাদের মনিব তাদের মুক্তি দেন। দাসরা ছিলো সবচেয়ে অসহায় এবং পরাধীন। তাদের উপরে অকথ্য অত্যাচর করা হতো। এই অন্ধকার, অমানবিক দাসপ্রথার উদ্ভব গ্রিক সভ্যতা থেকে হলেও রোম সভ্যতা, বৌদ্ধযুগসহ সভ্যতার সকল পরতে-পরতে দাসপ্রথার উপস্থিতি ছিল।

বিজ্ঞাপন

প্রাচীন বাংলাসহ ভারত উপমহাদেশেও দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। ইংরেজ আমলেও এ দেশে দাসবাণিজ্য চলেছে। এ বাজারে আফ্রিকার নিগ্রোদের চাহিদাই অনেকটা বেশি ছিলো। প্রচন্ড শক্তি ও সুঠাম দেহই সে যুগে নিগ্রোদের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়। তখন বিপুল সংখ্যক নিগ্রোদের জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। তাদের বেশিরভাগকে বিক্রি করে দেওয়া হতো ইউরোপের বাজারে। তারপর তাদের দাসত্বের জীবন শুরু হতো।

এখনকার সময়ে দাসপ্রথাকে সবাই অমানবিক মনে করেন। দাসপ্রথার এসব কলঙ্কময়, আঁধারময় ইতিহাস বিশ্বের সব মানুষকে জানানোর জন্য পালন করা হয় আন্তর্জাতিক দাস বাণিজ্য স্মরণ ও রদ দিবস। বিশেষ এই দিবসের মাধ্যমে আরো স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় দাসব্যবসার করুণ পরিণতির বিষয়টিও। এই দাসপ্রথাকে উচ্ছেদ করার মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিল। সেই যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলো আব্রাহাম লিংকন এবং তিনি বিজয়ী হয়ে দাসপ্রথার বিলোপ ঘটিয়ে সারা বিশ্বের অসংখ্য নিপীড়িত মানুষের শ্রদ্ধা পেয়েছিলেন।

ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক দাস বানিজ্য স্মরণ ও রদ দিবস পালনের ঘোষণার মাধ্যমে সারাবিশ্বে বিশেষ এই বিষয়টি নিয়ে স্মৃতিচারণের সুযোগ করে দেয়। দিবসটি সর্বপ্রথম উদযাপন করা হয় ১৯৯৮ সালে, হাইতিতে। তারপরের বছর এটি সেনেগালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাপন করা হয়। এখন এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক দাস বাণিজ্য স্মরণ ও রদ দিবসে যেসব মানুষ এই ঘৃণ্য দাস ব্যবসা ও দাসত্ব থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন তাদেরকে এই দিবসের জন্য আমরা স্মরণ করতে পারি।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন