বিজ্ঞাপন

২৪ ঘণ্টা পরও মেলেনি খোঁজ, বাবার ‘লাশের’ অপেক্ষায় ছেলে

August 26, 2021 | 6:12 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ‍ব্যুরো: ‘আব্বাকে হয়তো আর জীবিত ফেরত পাব না। ঘরে তো একথা বলতে পারছি না। আম্মা আর আমার বোন খুব কান্নাকাটি করছেন। আমি এখানে আছি। আব্বার লাশটা যেন পাই! উনারা (ফায়ার সার্ভিস) খুব চেষ্টা করছেন। আশা করছি আব্বার লাশটা পাব।’— মৌসুমি বৃষ্টিতে জলমগ্ন চট্টগ্রাম নগরীতে নালায় পড়ে প্রবল স্রোতে নিখোঁজ সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমদের ছেলে মাহিন আহমদ সারাবাংলাকে এভাবেই বলছিলেন, যিনি ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পিতার খোঁজে নগরীর নালা-খালের পাড়ে ঘুরছেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৫ আগস্ট) সকালে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে নগরীর মুরাদপুরে সড়ক ও ফুটপাতের সঙ্গে লাগোয়া একটি নালায় পড়ে নিখোঁজ হন প্রায় ৫৫ বছর বয়সী সালেহ আহমদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, আটকে থাকা বৃষ্টির পানিতে নালা ও ফুটপাত একাকার হয়ে যায়। নালার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পা পিছলে পড়ে যান তিনি। মুহূর্তের মধ্যেই প্রবল স্রোতে ভেসে যান তিনি।

ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নিখোঁজ সালেহ আহমদের সন্ধানে মুরাদপুর থেকে নদীর উজানের দিকে নালায় তল্লাশি চালাচ্ছে। রাতে আবারও ভারি বৃষ্টি শুরু হলে তল্লাশি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। তবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ফের শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত সময়ে নগরীর মুরাদপুর থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত এলাকায় কর্ণফুলী নদীর মুখ পর্যন্ত তল্লাশি চালানো হয়।

বিজ্ঞাপন

বিকেলে ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ স্টেশনের অফিসার শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুরাদপুর থেকে একেবারে কালুরঘাট কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নালা-খালে আমরা তল্লাশি চালিয়েছি। স্বাভাবিকভাবে আমরা তো এটা ধরে নিতে পারি যে, উনি আর বেঁচে নেই। আমাদের ডুবুরি দল যেসব স্থানে ময়লা-আবর্জনার মধ্যে লাশ আটকে থাকার সম্ভাবনা আছে সেখানেও তল্লাশি চালিয়েছে। এরপর রেসকিউ টিম নামানো হয়েছে। কোনোভাবে কোথাও লাশ ভেসে ওঠে কি না তারা সেটা দেখছে। তবে মুরাদপুর থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কয়েকটি স্থানে নালার ওপর বিল্ডিং আছে। সেখানে আমরা সেভাবে তল্লাশি চালাতে পারিনি।’

নিখোঁজ সালেহ আহমদের বাড়ি পটিয়া উপজেলার মনসা গ্রামে। নগরীর চকবাজার কাঁচাবাজারে নিজস্ব দোকানে তিনি সবজি বিক্রি করতেন। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে গ্রামে থাকেন। ছেলে পশ্চিম পটিয়া এ জে চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মেয়ে মনসা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়েন।

ঘটনাস্থলে থাকা সালেহ আহমদের ছেলে মাহিন আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার আব্বাই আমাদের সংসারে একমাত্র উপার্জন করার লোক ছিলেন। এখন কী হবে জানি না। আমার লেখাপড়াটা মনে হয় বন্ধ হয়ে যাবে। আল্লাহকে বলছি, আমার আব্বার লাশটা অন্তত ফেরত দেন।’

বিজ্ঞাপন

মাহিনের খালাতো ভাই ফাহিম উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, সালেহ আহমদ মাইজভাণ্ডার শরীফের ভক্ত ছিলেন। বুধবার সকালে তিনি দোকান থেকে বেরিয়ে মুরাদপুর দিয়ে ফটিকছড়িতে মাইজভাণ্ডারের মাজারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। সালেহ আহমদের শ্বশুরবাড়ি নগরীর আছাদগঞ্জে। তার স্ত্রী-সন্তানেরা তিনদিন আগে সেখানে বেড়াতে আসেন। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে তারা এবং আত্মীয়-স্বজনেরা বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন