বিজ্ঞাপন

৪ বছর ধরে আপিল শুনানির অপেক্ষায় রাজন হত্যা মামলা

August 29, 2021 | 8:44 am

কামরুল ইসলাম ফকির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সিলেটের শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলা প্রায় চার বছর ধরে আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ২০১৭ সালে রাজন হত্যা মামলায় চার আসামির মৃত্যদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। আলোচিত এই মামলায় হাইকোর্টের রায়ের পর চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আসামিদের চূড়ান্ত আপিল শুনানি শুরুই হয়নি। কবে আপিল শুনানি শুরু হবে, তা নির্দিষ্ট করে কেউই বলতে পারছে না।

বিজ্ঞাপন

সর্বোচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় আসামিদের সাজা কার্যকর করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মামলার দুপক্ষই এখন চূড়ান্ত আপিল শুনানির জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির সন্দেহে সদর উপজেলার কান্দিরগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের আজিজুর রহমানের ১৩ বছর বয়সী ছেলে সামিউল আলম রাজনকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ।

রাজনকে নির্যাতনের সময় দৃশ্যটি ভিডিওতে ধারণ করে নির্যাতনকারীরা। পরে ২৮ মিনিটের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞাপন

হত্যাকাণ্ডের পর মহানগরীর জালালাবাদ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মুহিত আলমসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গিয়ে হত্যাকারীদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার অভিযোগে বরখাস্ত হন জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন, এসআই জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।

হত্যাকাণ্ডের দুই দিনের মাথায় মামলার মূল আসামি কামরুল ইসলাম পালিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। পরে ভিডিও দেখে প্রবাসীদের সহযোগিতায় তাকে আটক করে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

রাজন হত্যার দেড় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে ওই বছরের ১৬ অগাস্ট ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) সুরঞ্জিত তালুকদার।

বিজ্ঞাপন

মাত্র ১৭ কার্যদিবসে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালত রাজন হত্যার দায়ে মূল আসামি কামরুলসহ ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- ময়না চৌকিদার, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল ও জাকির হোসেন পাভেল আহমদ।

এ ছাড়া ১৩ আসামির মধ্যে নূর মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, কামরুলে তিন ভাই মুহিত আলম, আলী হায়দার ও শামীম আহমদকে সাত বছরের কারাদণ্ড। এ ছাড়া দুলাল আহমদ ও আয়াজ আলীকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় ফিরোজ মিয়া, আজমত উল্লাহ ও রুহুল আমিন নামের তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।

বিচারিক আদালতের রায়ের দুদিন পরে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছে। পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন। তারপর ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়।

শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ মার্চ বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য ১১ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

বিজ্ঞাপন

২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন।

এ ছাড়া নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি নূর মিয়ার দণ্ড কমিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার প্রধান আসামি কামরুলের তিন ভাই মুহিত আলম, আলী হায়দার ও শামীম আহমদের সাত বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। অপর আসামি দুলাল আহমদ ও আয়াজ আলীর এক বছরের সাজাও বহাল রাখেন আদালত।

আসামিদের মধ্যে জাকির হোসেন পাভেল এবং কামরুলের ভাই শামীম আহমদ মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও বিলকিস ফাতেমা। আসামিপক্ষে ছিলেন এস এম আবুল হোসেন, বেলায়েত হোসেন শাহরিয়ার ও শহিদ উদ্দিন চৌধুরী। পলাতক দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন হাসনা বেগম।

হাইকোর্টে রাজন হত্যা মামলার রায় প্রকাশের পর পরই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। তবে কখন চূড়ান্ত আপিল শুনানি শুরু হবে তা সংশ্লিষ্ট কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না।

হাইকোর্টে আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এস এম আবুল হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটির হাইকোর্ট বিভাগে আসামিপক্ষে ছিলাম আমরা। তবে আপিল বিভাগের বিষয়টি আমি বলতে পারছি না।’

পলাতক দুই আসামির পক্ষে হাইকোর্টে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী ছিলেন হাসনা বেগম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটি এখন আপিল বিভাগে আছে। চূড়ান্ত আপিল শুনানি কবে শুরু হবে, তা বলতে পারছি না। তবে করোনার কারণে সব মামলার শুনানি হতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।’

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিশু রাজন হত্যা মামলার আপিল বর্তমানে কোন পর্যায়ে আছে, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে আপিল বিভাগে মামলার ধারাবাহিকতায় আপিল শুনানি হয়ে আসছে।’

নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শিশু রাজন হত্যা মামলার আপিল শুনানি শুরু হবে বলে জানান তিনি।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন