বিজ্ঞাপন

অপসংস্কৃতির ছোবলে যুবসমাজের অবক্ষয়

August 29, 2021 | 5:42 pm

আবির হাসান সুজন

জীবনের সাথে সংস্কৃতির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সমাজে বসবাসরত মানুষের প্রত্যেকটি কার্যকলাপ তাদের সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান। কোনো সমাজই তাদের সংস্কৃতিকে অস্বীকার করতে পারে না। মূলত সংস্কৃতি এবং জীবন একে অপরের পরিপূরক।

বিজ্ঞাপন

সংস্কৃতি সম্পর্কে মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে, মহৎভাবে বাঁচা’। অর্থাৎ বেঁচে থাকার জন্য মানুষের নৈমত্তিক প্রচেষ্টাই সংস্কৃতি, আর অপসংস্কৃতি হলো এর বিপরীত। অপসংস্কৃতি মানুষকে কলুষিত করে এবং জীবনের সৌন্দর্যের বিকাশকে স্তব্ধ করে দিয়ে শ্রী-হীনতার দিকে ঠেলে দেয়।

আজকের তরুণরাই দেশের আগামী দিনের অমূল্য সম্পদ। তারাই দেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু অপসংস্কৃতি তাদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশীয় সংস্কৃতির অনুষঙ্গকে এমন কিছু বিষয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে যা জীবনকে সুন্দর করে বিকাশের ক্ষেত্রে মোটেই সহায়ক ভুমিকা পালন করে না।

যুবসমাজের একটা বড় অংশকে সুকৌশলে করা হয়েছে আদর্শ পথভ্রষ্ট। সুন্দর জীবনের পথ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্ধকার জীবনের পথে। তারা তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে, অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে মাদকের নেশায়। বিপুল সংখ্যক তরুণের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে অস্ত্র, জড়িয়ে ফেলা হয়েছে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে। তারা লিপ্ত হচ্ছে অসামাজিক কাজে। হিংস্র-অশ্লীল চলচ্চিত্র, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিপন্থী বিকৃত রুচির নাচ-গান, রুচিগর্হিত পোশাক-পরিচ্ছদের প্রতি তারা আকৃষ্ট হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

পোশাক-পরিচ্ছদে আমাদের নিজস্ব একটি ঐতিহ্য আছে এবং থাকবে। বিদেশি সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচার ও চর্চা আমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরিচ্ছদে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। জিন্স, টি-শার্ট, স্কার্ট এখন যুব সমাজের খুবই প্রিয়। শাড়ি-লুঙ্গি কিংবা পাজামা-পাঞ্জাবি এখন আর তাদের কাছে তেমন গুরুত্ব পায় না। পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণের ফলে যুবসমাজ একদিকে যেমন আধুনিক জীবনের ধারাকে ধরতে পারে না তেমনি দেশীয় সংস্কৃতির সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তারা লক্ষ্যহীন হয়ে পড়ে।

বিদেশি সংস্কৃতির ফলে আমাদের নৈতিক শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। যুবসমাজ মাদক নেশা ও অবক্ষয়ে আক্রান্ত। বৈদেশিক সংস্কৃতির নির্বিকার গ্রহণ আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির জন্য এখন হুমকিস্বরূপ।

বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাবে যুবসমাজে খাদ্যাভ্যাসে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। কোনো খাবারের পুষ্টিমান বিবেচনা না করে টেলিভিশন চ্যানেলে খাবারের বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের নতুন প্রজন্ম তাতে আকৃষ্ট হচ্ছে। আমাদের সংস্কৃতির নতুন সংযোজন হচ্ছে ফাস্টফুড সংস্কৃতি। বর্তমানে তরুণ-তরুণীসহ শিশু-কিশোর এমনকি বয়স্কদের মাঝেও এ সংস্কৃতি চর্চা হচ্ছে। যা বাঙালির ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব খাবারগুলোকে ক্রমান্বয়ে অস্বীকার করার প্রবণতা তৈরি করছে

বিজ্ঞাপন

বিশ্বায়নের আর একটি প্রত্যক্ষ ও বাহ্যিক প্রভাব আমাদের তরুণ প্রজন্মের কথাবার্তার পরিবর্তন। বর্তমান শিশুরা বাবা-মাকে বাংলা ভাষায় সম্বোধন না করে বিদেশি ভাষা বিশেষত ইংরেজিতে পাপা, মাম্মি বা মম ডাকতে আগ্রহী। কথায় কথায় তারা অন্য ভাষার শব্দ ব্যবহার করে। বাংলা ইংরেজি, হিন্দি একসাথে মিলিয়ে পরস্পরের সাথে কথা বলে, একে তারা আধুনিকতা মনে করে। তাছাড়া বাংলা শব্দের বিকৃতি এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হচ্ছে।

প্রতিদিনের সংবাদপত্র আমাদের সামনে যে চালচিত্র তুলে ধরে, তাতে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন অতি স্পষ্ট। অশ্লীলতা, নোংরামি, খুন, ছিনতাই, প্রতারণা সবই অপসংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন নাম। অপসংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের গোটা জাতিকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। আকাশসংস্কৃতির যন্ত্রণায় এমনিতে পুরো জাতি অতিষ্ঠ।

পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুসরণ নেশার মতো। নেশা যেমন একটি ব্যক্তি, পরিবার,সমাজ বা রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে, ঠিক তেমনি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও একটি দেশকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয়। সিরিয়াল নাটকগুলো আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও পরিবার প্রথাকে ভেঙ্গে দিচ্ছে। এমনকি খুন-খারাবি বা সংসার ভাঙার ঘটনার সংবাদ পত্রিকার পাতায় মুদ্রিত হচ্ছে।

আমাদের যুব সমাজে পশ্চিমা সংস্কৃতির ভোগবাদ, পোশাক-পরিচ্ছদ, অশ্লীলতা আর বেলেল্লাপনার মহোৎসব শুরু হয়েছে। যে কারণে বাড়ছে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, বিবাহ-বিচ্ছেদ, অনৈতিক জীবনযাপনের অন্ধকারময় বিকৃত অনাচার।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় সংস্কৃতির এমন চরম পর্যায়ে যুবসমাজের সিংহভাগ যখন এক অনিশ্চিত গন্তব্যহীন জীবনের পথ বেছে নিচ্ছে, এই বস্তাপচা সংস্কৃতির প্রধানতম শিকার হয়ে যখন তারা নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তখন এই যুবসমাজেরই উচিত বিচারবুদ্ধি দ্বারা শত বাধা মোকাবিলা করে সামাজিক দায়বদ্ধতার শিক্ষাকে নিজেদের মাঝে সুচারুরূপে বপন করা। যুব সমাজকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। একদিনে এই অপসংস্কৃতির বিষ আমাদের সমাজে ঢুকে পড়েনি,ধীরে ধীরে সমাজে প্রবেশ করেছে।

এই বিষের প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সমাজের স্তরে স্তরে যে অসততা ও অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে তা রোধ করতে হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষিত সমাজকে সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। সমাজের সর্বস্তরে বাঙালির সার্বজনীন সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। সর্বোপরি তরুণ তরুণীদের সচেতন করতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন