বিজ্ঞাপন

দলবদলের মৌসুমে এবারেও সবচেয়ে খরুচে ইপিএল

September 1, 2021 | 4:09 pm

সাহাবার সাগর, নিউজরুম এডিটর

বিস্ময় দিয়েই শেষটা হলো ২০২১/২২ মৌসুমের ইউরোপিয়ান ফুটবলের দলবদলের মৌসুম। ২০২০/২১ মৌসুমের শেষের পর থেকে শুরু হলেও মূলত আগস্টের শুরু থেকে জমে ওঠে ইউরোপিয়ান দলবদলের মৌসুম। এমন দলবদল বিশ্ব দেখেনি আর আগে কখনোই। কেননা ২১ বছর পর বার্সেলোনা ছেড়েছেন লিওনেল মেসি, ১২ বছর পর আবারও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরেছেন ক্রিস্টিয়নো রোনালদো। এদিকে কিলিয়ান এমবাপের জন্য রিয়াল মাদ্রিদের ২০০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাবেও সাড়া দেয়নি, ছিল ব্রিটিশ রেকর্ড পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে জ্যাক গ্রিলিশের ম্যানচেস্টার সিটিতে নাম লেখানো।

বিজ্ঞাপন

গোটা দলবদলের মৌসুম জুড়েই ছিল উত্তেজনা। ইউরোপের বড়বড় ক্লাবগুলো দলে ভিড়িয়েছেন নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড়গুলোকে। তবে কেউ কেউ পারেনি পছন্দের তালিকার খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে। এর ভেতর কিলিয়ান এমবাপে এবং হ্যারি কেইন অন্যতম। দীর্ঘদিন রিয়াল মাদ্রিদের রাডারে থাকা কিলিয়ান এমবাপে, ম্যানচেস্টার সিটির রাডারে থাকা হ্যারি কেইন কেউই যেতে পারেননি নিজেদের স্বপ্নের ক্লাবে।

এদিকে বরাবরের ন্যয় দলবদলের বাজারে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ-ইপিএল। এবারের দলবদলের মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো থেকে দলবদল করা খেলোয়াড়ের সংখ্যা ২৪৭। যাদের বিক্রি করে ক্লাবগুলো অর্জন করেছে প্রায় ৬৪৪ মিলিয়ন ইউরো। আর প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবে খেলোয়াড় যোগ দিয়েছেন মোট ২৪৮ জন। যাদের পেছনে ক্লাবগুলোর ব্যয়ের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ৩৫২ মিলিয়ন ইউরো।

বিজ্ঞাপন

প্রিমিয়ার লিগের বড় ক্লাবগুলো নিজেদের স্কোয়াড আরও বেশি শক্তিশালী করেছে। নিজেদের প্রয়োজনের জায়গাটা খেলোয়াড় দিয়ে পূর্ণ করেছে ক্লাবগুলো। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা ছয় ক্লাবগুলোর দিকে একবার নজর বুলিয়ে নেওয়া যাক।

ম্যানচেস্টার সিটি: ২০২০/২১ মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের রানার আপ ম্যানচেস্টার সিটির নজর ছিল অ্যাস্টন ভিলার ইংলিশ মিডফিল্ডার জ্যাক গ্রিলিশ এবং ইংল্যান্ড ও টটেনহাম হটস্পার্সের অধিনায়ক হ্যারি কেইনের প্রতি। দলের মধ্যমাঠ এবং আক্রমণভাগকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্য ছিল সিটিজেনদের।

বিজ্ঞাপন

অ্যাস্টন ভিলার সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়নি সিটির। ব্রিটিশ রেকর্ড পরিমাণ অর্থ প্রস্তাব দিতেই অ্যাস্টন ভিলা রাজী হয়ে যায় সিটিজেনদের প্রস্তাবে। ইংলিশ কোনো খেলোয়াড়ের জন্য রেকর্ড ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড বা ১১৭ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব গ্রহণ করে অ্যাস্টন ভিলা। এদিকে হ্যারি কেইনের সঙ্গে ব্যক্তিগত শর্তে সিটিজেন রাজী হলেও তার জন্য সিটির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসতেই রাজী হয়নি টটেনহাম হটস্পার্স। ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে কেইনের জন্য ১২৭ মিলিয়ন পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব করেছিল ম্যানসিটি। কিন্তু কেইনকে ধরে রাখতে সিটির কোনো প্রস্তাবেই সাড়া দেয়নি স্পার্স। তবে কেইনকে কিনতে না পারলেও ব্রাজিল থেকে তরুণ কাইকাইকে ১০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে উড়িয়ে এনেছে সিটি। এবারের দলবদলের বাজারে ১১৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে সিটি আর খেলোয়াড় বিক্রি করে উপার্জন ৩৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড: এদিকে স্বপ্নের মতো একটি দলবদলের মৌসুম পার করল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ইউনাইটেড। সবকিছুকে ছাড়িয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ঘরে ফেরাটাই কেড়েছে সকলের নজর। একটা সময় ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে প্রায় চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলেছিলেন, ঠিক তখনই ত্রাতা হয়ে এলেন কিংবদন্তি স্যার অ্যালেক্স ফারগুসন। তার একটি ফোন কলেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেললেন রোনালদো। আর শেষ পর্যন্ত ভিড়লেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। তার জন্য জুভেন্টাসকে ১৫ মিলিয়ন ইউরো গুনেছে রেড ডেভিলরা।

ঘরে ফেরার আনন্দ সমর্থকদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। রেড ডেভিল সমর্থক ও তার ভক্তদের উদ্দেশে সামাজিক মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে রোনালদো জানালেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য তার অসামান্য ভালোবাসার কথা। তবে সব ছাপিয়ে সাবেক বস অ্যালেক্স ফার্গুসনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশেষ বার্তা— ভক্ত সমর্থকদের আপ্লুত করে তুলেছে। রোনালদো লিখলেন, ‘স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন, এটা আপনার জন্য।’

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও গত কয়েক মৌসুম জুড়ে গুঞ্জন ওঠা জডান সানচোকে অবশেষে দলে ভেড়ালো রেড ডেভিলরা। ইংলিশ এই ফরোয়ার্ডকে দলে ভেড়াতে ৮৫ মিলিয়ন ইউরো গুনতে হয়েছে তাদের। এদিকে রক্ষণের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে রিয়াল মাদ্রিদের দীর্ঘদিনের ভরসার প্রতীক রাফায়েল ভারানকে দলে টেনেছে ইউনাইটেড। এর জন্য রিয়ালকে মাত্র ৪০ মিলিয়ন ইউরো প্রদান করতে হয়েছে ইউনাইটেডকে। এবারের দলবদলের মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তাই মোট খরচের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪০ মিলিয়ন ইউরোতে। আর খেলোয়াড় বিক্রি করে মোট উপার্জন ২৯ দশমিক ১ মিলিয়ন ইউরো।

চেলসি: গেল মৌসুমের শুরুটা খুব বেশি ভালো করতে না পারলেও মাঝপথে থমাস তুখেল দায়িত্ব নেওয়ার পর পাল্টে যায় চেলসির চিত্র। মৌসুমের মাঝপথে দায়িত্ব নিয়ে চেলসিকে দ্বিতীয়বারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জয় করেন তিনি। এরপর দলের দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সেটি পূরণ করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন তিনি। প্রথমে নরওয়ের তরুণ স্ট্রাইকার এর্লিং হালান্ডের দিকে নজর দেয় অল ব্লুরা। তবে এবারের মৌসুমে বরুশিয়া ছাড়ার কোনো ইচ্ছায় ছিল না হালান্ডের। আর একারণেই হালান্ডের দিক থেকে নিজেদের দৃষ্টি সরিয়ে ইন্টার মিলানের বেলজিয়ান স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকুর দিকে দেন। তবে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরাও গো ধরে বসে কিছুতেই লুকাকুকে হাতছাড়া করবে না তারা। কিন্তু তার জন্য চেলসির রেকর্ড গড়া অর্থের প্রস্তাবে আর না করতে পারেনি ইন্টার। শেষ পর্যন্ত ১১৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইন্টার ছেড়ে চেলসিতে নাম লেখান।

এরপর রক্ষণভাগের শক্তি বাড়াতে সেভিয়া থেকে ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার কুন্দেকে দলে ভেড়ারে উঠে পড়ে লাগে চেলসি। কিন্তু তাকে দলে ভেড়াতে হলে রিলিজ ক্লজের ৮০ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করে আনতে হত। তাই শেষ পর্যন্ত আর তাকে দলে ভেড়াতে পারেনি ব্লুরা। তবে কুন্দেকে দলে ভেড়াতে না পারলেও সাউল নিগুয়েজকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে দুই মৌসুমের জন্য ধারে নিয়ে এসেছে চেলসি। সব মিলিয়ে এবারের মৌসুমে খেলোয়াড়দের পেছনে ১২০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে চেলসি। আর খেলোয়াড় বিক্রি করে উপার্জন করেছে ১২২ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি।

আর্সেনাল: সমর্থকদের সমালোচনা খেলোয়াড়দের পেছনে অর্থ খরচ করছে না আর্সেনাল। এবার যেন সেই সমালোচনায় কানে গেল গানারদের। তাই তো এক মৌসুমেই দলের দুর্বল জায়গাগুলোতে নতুন সেনা এনে শক্তি বাড়াল তারা। রক্ষণভাগ থেকে শুরু করে মধ্যমাঠে এল নতুন খেলোয়াড়। এবারের দলবদলের মৌসুমে আর্সেনালের মোট খরচ তাতে গিয়ে দাঁড়াল প্রায় ১৬৬ মিলিয়ন ইউরোতে। যার মধ্যে বেন হোয়াইটের জন্য ৫৮.৫ মিলিয়ন ইউরো, মার্টিন ওডেগার্ডের জন্য ৩৫, অ্যারন রামসডেলের জন্য ২৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ করল গানাররা।

লিভারপুল: গেল মৌসুমটা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে অল রেডদের। খেলোয়াড়দের ইনজুরির কারণে ভুগতে হয়েছে গোটা মৌসুম জুড়ে। তাই তো রক্ষণভাগেই খেলোয়াড় ভেড়াল লিভারপুল। আরবি লাইপজিগ থেকে ৪০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে ভেড়ায় অল রেডরা।

টটেনহাম হটস্পার্স: দলের সেরা তারকা হ্যারি কেইনকে জোর করেই আটকে রাখল স্পার্স। কোনোভাবেই ম্যানচেস্টার সিটির প্রস্তাবে রাজী হয়নি স্পার্স। শিরোপা জয়ের ইচ্ছার কারণেই স্পার্স ছাড়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন কেইন। তাই তো শিরোপা জয়ের জন্য একটি শক্তিশালী দলই গড়ে তুলল স্পার্স। গেল মৌসুমের ইতালিয়ান সিরি আ’র সেরা ডিফেন্ডার ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোকে দলে ভিড়িয়েছে। এছাড়াও বার্সেলোনা থেকে রয়্যাল এমারসনকে ২৫ মিলিয়ন, সেভিয়া থেকে ব্র্যায়ন গিলকে ২৫ মিলিয়ন ইউরোতে দলে ভেড়ায় স্পার্স। এবারের দলবদলের মৌসুমে স্পার্স খরচ করেছে প্রায় ৬৭ মিলিয়ন ইউরো আর খেলোয়ার বিক্রি করে উপার্জন করেছে মোট প্রায় ৩৩ মিলিয়ন ইউরো।

সারাবাংলা/এসএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন