বিজ্ঞাপন

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুপারিশ

September 4, 2021 | 7:43 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ধূমপানের ‘নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্তের পাশাপাশি সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র এবং গণপরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করার তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলছেন, দেশ শতভাগ ধূমপানমুক্ত করতে হলে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মার যৌথ উদ্যোগে ‘কোভিড-১৯ ও শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োজনীয়তা: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব সুপারিশ করেন।

সংসদ সদস্য, অর্থনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আয়োজিত এই ওয়েবিনারে বক্তারা আরও বলেন, তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে। ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস (এইচটিপি) সহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সংশোধনীর সুযোগ যেহেতু এসেছে—আমরা যদি আইনটির শিরোনামে নিয়ন্ত্রণের স্থলে নির্মূল কথাটি সন্নিবেশ করতে পারি তাহলে এটি প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণার সঙ্গে অধিকতর সংগতিপূর্ণ হবে।

বিজ্ঞাপন

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, তামাকপণ্যের খুচরা বিক্রয় বন্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব, এটি করতে হবে। আর আইন সংশোধনের পাশাপাশি তামাকের ক্ষতির বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।

খ্যাতিমান অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, তরুণরা ধূমপানকে চৌকস মনে করে কিন্তু এটার ক্ষতি অনেক। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো তামাক থেকে শুধু ট্যাক্স পাওয়ার বিষয়টি না ভেবে লক্ষ লক্ষ মানুষ তামাকের কারণে ক্যানসারে মারা যাবে এটিও চিন্তা করতে হবে। এজন্য আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি আরও শক্তিশালী করতে হবে।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, আইন সংশোধনের যে ছয়টি প্রস্তাব আজ তুলে ধরা হয়েছে এগুলো সমন্বয় করেই আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি সবগুলো প্রস্তাব নিয়েই আইনটি সংশোধন হবে।

বিজ্ঞাপন

বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং টিভি টুডে’র এডিটর ইন চিফ মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে হলে আইনটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধন করতে হবে।

দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, অনেকে ই-সিগারেটে কম ক্ষতি মনে করে কিন্তু এটিও অনেক ক্ষতিকর। আর আইনটি সংশোধনের পাশাপাশি তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

নিউজ টুয়েন্টিফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক কবি ও লেখক শাহনাজ মুন্নী বলেন, নারী এবং শিশুরাই অন্যের ধূমপানে ক্ষতির শিকার হয় বেশি। পাবলিক প্লেসগুলো শতভাগ ধূমপানমুক্ত করতে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার সুযোগ বন্ধ করতে হবে।

জনপ্রিয় মডেল ও ক্রীড়া সংগঠক মোহাম্মাদ ফয়সাল আহসান উল্লাহ বলেন, আমরা যদি তরুণ সমাজকে তামাকমুক্ত করতে না পারি তাহলে তারা তামাকের কারণে অসুস্থ হয়ে সমাজের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, একজন ধূমপায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তার গুরুতর অসুস্থ হওয়া এবং মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তামাক কোম্পানি শিশু-কিশোরদের টার্গেট করে বিক্রয়স্থলে তামাকপণ্য সাজিয়ে রাখে, এই অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলা হয়, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঝুঁকি থেকে জনসাধারণকে রক্ষার্থে প্যারাগুয়ে সম্প্রতি সকল আচ্ছাদিত পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান শতভাগ নিষিদ্ধ করেছে।

উল্লেখ্য, তামাকের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। তামাকজনিত এই ব্যাপক মৃত্যুরোধে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

ওয়েবিনারে আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন বিষয়ক প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার। প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ওয়েবিনারে অংশ নেন।

সারাবাংলা/জেআর/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন