বিজ্ঞাপন

চন্দ্রিমায় জিয়ার লাশ নেই, বাক্স সরিয়ে ফেলুন— সংসদে শেখ সেলিম

September 16, 2021 | 4:10 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে কবরে জিয়ার লাশ নেই, তা ৪০ বছর আগেই প্রমাণিত। একটি বাক্স রয়েছে। সেটি সরিয়ে ফেলুন। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, লাশ থাকলে তার স্ত্রী-সন্তানকে কেন লাশ দেখানো হয়নি? ওই সময়তো ক্ষমতায় বিএনপি ছিল। তখনও বিএনপি লাশ থাকার প্রমাণ দিতে পারেনি। যদি লাশ থেকে থাকে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রমাণ দিতে হবে। ভবিষ্যতে সংসদে জিয়ার লাশ নিয়ে আর যেন কোনো কথা না হয়- সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্পিকারের কাছে দাবি তোলেন শেখ সেলিম।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার ( ১৬ সেপ্টেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে এসব কথা বলেন তিনি।

চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা-না থাকা নিয়ে সংসদে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির এমপিরা। ‘বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস বিল, ২০২১’ বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বিষয়টি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন প্রথম ইস্যুটি তোলেন। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির এমপিরা বক্তব্য, পাল্টা বক্তব্য দেন। সাংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জিয়ার লাশ থাকার বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাব করেন।

আরকাইভস বিল নিয়ে আলোচনাকালে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের লাশ সেখানে (চন্দ্রিমা উদ্যান) আছে কি নেই, সেটা বড় বিষয় নয়। সেখানে যে লাশ নেই, তা আপনারা (আওয়ামী লীগ) কীভাবে জানলেন? এত বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। এটা নিয়ে আগে কথা বলেননি কেন? এখন কেন বলছেন?’

বিজ্ঞাপন

এ সময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃতিতো বিএনপিও করে। তারা বলে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। এই বিষয়ে আমাদের সুপ্রিম কোর্টের নির্দশনা রয়েছে। আর তিনি (জিয়াউর রহমান) বেঁচে থাকতে কখনই বলতে শুনেনি, দেখিনি উনি নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেছেন। তাদের প্রথমে ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করতে হবে। তারপর আওয়ামী লীগ যদি ইতিহাস বিকৃতি করে থাকে, সেটা বন্ধের আহ্বান বিএনপি জানাতে পারে।’

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘সংসদ ভবন নিয়ে লুই কানের যে নকশা সেখানে কোথায় রয়েছে যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ দাফন করতে হবে। সেখানে লাশ আছে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিজ্ঞনিভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে তা নির্ণয় করা উচিত। আপনারা দলের নেতা ভেবে কাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। ওখানে কি কারও মৃতদেহ আছে? নাকি অন্য কারও মৃতদেহ আছে।’

কে এম খালিদ বলেন, ‘একজন সাংসদ বলেছেন, সঠিক ইতিহাস আসতে নাকি শতবছর লাগে। মৃত্যুর ৪০ বছর পরে সঠিক ইতিহাস বের হলে সমস্যা কোথায়? জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কি নেই, এটা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণের ব্যবস্থা আছে। আপনারা (বিএনপি) নিরপেক্ষ একটা কমিটি করেন। সরকার সহযোগিতা করবে। সত্য উদ্ঘাটনে ভয়ের কি আছে?’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আপনাদের দলের নেত্রীকে বলেন। যদিও তিনি সাজাপ্রাপ্ত। প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় সাজা স্থগিত নিয়ে বসবাস করছেন। আইনের সুযোগ থাকলে তার নেতৃত্বে কমিটি করেন।’

বিএনপি দলীয় সংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ তার বক্তব্যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ১৯৭৯ সালে সংসদ ছিল। সেখানে আওয়ামী লীগও ছিল। মানিক মিয়া এভিনিউয়ে যে জানাজা হয়েছিল, তাতে সাংসদরা উপস্থিত ছিলেন। শোক প্রস্তাবের ওপর সংসদে দীর্ঘ আলোচনায় তারা অংশ নিয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘কারো যদি অপমৃত্যু হয়, তাহলে ময়নাতদন্ত লাগে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। সামরিক আদালতে বিচারও হয়েছে। এটা অসত্য কিছু নয়। আজকে জেনারেল এরশাদ বেঁচে থাকলে তিনি লজ্জা পেতেন। লজ্জা পেয়ে মুখ ঢাকতেন।’

বিএনপি সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আরকাইভস যদি করতে হয়, তাহলে স্বীকার করতে হবে জিয়াউর রহমান ছিলেন রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন বীর উত্তম। তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। উনারা উনাদের কথা বলবেন, আমরা আমাদের কথা বলব। এইটুকু ধৈর্য্য যদি তাদের না থাকে তাহলে কী ইতিহাস লিখবে? কী চর্চা করবে?’

বিজ্ঞাপন

রুমিন বলেন, ‘ইতিহাস সবসময় জয়ীদের হাতে লেখা হয়। তাই আমাদের মতো দেশে প্রকৃত ইতিহাস জানতে শতবছর লাগে। যতদিন পর্যন্ত দলীয় চশমায় ইতিহাস লেখা হয়। তাতে আইন পাস করে কোনো লাভ হবে না। আজ ৪০ বছর পর কেন জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে এই বিতর্ক? কারণ একটাই; সেটা হলো- সরকারের ব্যর্থতা, ভোট চুরি, গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাট থেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এই বিতর্ক করা হচ্ছে।’ রুমিন ফারহানার বক্তব্যের শেষের দিকে সংসদে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাড়িয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘আজ ৪০ বছর পর লাশ নিয়ে লাফালাফি করা হচ্ছে। সংসদ ভবন এলাকায় জিয়াউর রহমানের লাশ রয়েছে বিএনপির এমপিরা তা সংসদে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেখানে যে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই সেটা ৪০ বছর আগেই প্রমাণিত।’

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর তার লাশ পরিবারের কেউ দেখেনি। খালেদা জিয়া দেখেননি। তারেক জিয়া লাশ দেখার জন্য কান্নাকাটিও করেছিল। শাহ আজিজ একটু চালাকি করেছিল। বলেছিল, লাশ পাওয়া যাক না যাক একটা বাক্স পাঠিয়ে দাও। সেই বাক্স পাঠানো হয়েছিল। জনমনে সন্দেহ ছিল কিসের জানাজা করছি। শুধু বাক্স? নাকি ওখানে জিয়াউর রহমানও আছে?’

বিষয়টি নিয়ে ওই সময় সংসদে দেওয়া বক্তব্য উদ্বৃতি করে শেখ সেলিম বলেন, ‘১৯৮১ সালের ২০ জুন। আমি সংসদের নতুন সদস্য। জিয়াউর রহমান তখন মারা গেছেন। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। সংসদে আমি সরকারের কাছে এটা জানতে চেয়েছিলাম। এটা প্রসেডিংস এ আছে। আমি সেদিন বলেছিলাম, আপনারা প্রমাণ করুন, ওই বাক্সে কোন লাশ আছে কি না? জনমনের সন্দেহের কথা সেদিন সংসদে বলেছিলাম। আমি দুই দিনের মধ্যে লাশের ছবি ছাপিয়ে জনমনের সন্দেহ দূর করতে বলেছিলাম। আর না পারলে জনমনের সন্দেহই প্রমাণিত হবে। আজ ৪০ বছরেও একখানা ছবি দেখাতে পারেননি। প্রমাণই করতে পারেননি। একখানা বাক্স দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। একটা বাক্স এনে বলেছেন জিয়াউর রহমন লাশ। এই বিভ্রান্ত দূর হয়ে গেছে। ওখানে যে বাক্সটা আছে তা সরিয়ে লুইকানের নকশা বাস্তবায়ন করতে হবে।’

স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সেখানে বাক্সটা যদি থাকে তা সরিয়ে দিন। জিয়ার লাশ জায়েজ করার জন্য তিন বড় রাজাকারকে সংসদ ভবন এলাকায় কবর দেওয়া হয়েছে। তাদের করবও সেখান থেকে সরিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে। মানুষ এসব বিভ্রান্তি মেনে নেবে না।’

বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সংসদে কোন বক্তৃতা দেওয়ার ইস্যু পেলেই জিয়াউর রহমানের লাশ। এখানে লাশ আছে প্রমাণ করুন। একমাস সময় দিলাম। ওই সময় সেনাপ্রধান এরশাদ সাহেবও লাশ দেখেননি। তাহলে কী দিয়ে প্রমাণ করবেন? লাশ নিয়ে আর রাজনীতি করবেন না। ওখানে কোনো লাশ নেই। কিছুই নেই। একটি বাক্স মাটি দিয়েছে। ৪০ বছর আগে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্ষমতায় থেকেও তারা প্রমাণ করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘দুই নম্বর রাজনীতি বহু করছেন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের চিনেছে। আর দুই নম্বর রাজনীতি কইরেন না। জিয়াউর রহমান যে অপকর্ম করেছেন তার পরিণতি দেখেন।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন