বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রথমবারের মতো একজন মন্ত্রী পাঠাচ্ছে মিয়ানমার

April 3, 2018 | 9:41 pm

।। এম এ কে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সমাজকল্যান মন্ত্রী ড. উইন মায়াত আতায় আগামী ১২ এপ্রিল তিনদিনের সফরে বাংলাদেশ আসছেন। প্রতিবেশি দেশটির সঙ্গে রোহিঙ্গা সঙ্কট সৃষ্টির পর প্রথমবারের মতো এই ইস্যুতে একজন মন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরে পাঠাচ্ছে মিয়ানমার।

এর আগে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসলেও তার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাখাইনে মুসলমান রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে দেওয়া বসত ভিটায় বাংলাদেশের বৌদ্ধ উপজাতি পরিবারদের যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করছে নেপিডো। এরই মধ্যে বান্দবানের থানচি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ৫৫ উপজাতি পরিবারকে রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৌদ্ধ উপজাতিদের খাবার, বাসস্থান এবং উন্নত জীবনযাপনের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে মিয়ানমারে নিয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

থানচির স্থানীয় কাউন্সিলর মুই শৈ থুই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, ‘গত মার্চে অত্যন্ত দরিদ্র ২২টি বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান ধর্মীয় উপজাতি পরিবার তাদের গ্রাম ছেড়ে রাখাইনে চলে গেছে। দরিদ্র উপজাতি পরিবারগুলোকে উন্নত জীপনযাপনের নিশ্চয়তার কথা বলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছে।’

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, ‘বিনামূল্যে বসতবাড়ি এবং কমপক্ষে ৭ বছর বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হবে, এই বলে ৫৫টি বৌদ্ধ ধর্মীয় উপজাতি পরিবারকে রাখাইনে নিয়ে গেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, মিয়ানমারের সমাজকল্যান মন্ত্রী ড. উইন মায়াত আতায়-এর সফরে এই বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেপিডোর পক্ষ থেকে এখনো আন্তরিক কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তবে বিভিন্ন অজুহাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অকার্যকর করতে মিয়ানমারের নেওয়া কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করার মতো।

প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা কয়েকমাস আগেই ঢাকা থেকে নেপিডোকে দেওয়া হয়েছে। তালিকাটি দেওয়ার পর এতো বড় তালিকা কেন, এই বলে নেপিডো থেকে ঢাকাকে নেতিবাচক বার্তা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ঢাকা থেকে যথাযথ জবাব দেওয়া হলে নেপিডো ওই তালিকা গ্রহণ করে এবং জানায় যে, তারা এই তালিকা যাচাই-বাছাই করবে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের তালিকা থেকে দুই দফায় মাত্র ৫৫৬ জন রোহিঙ্গার ফেরত নেওয়ার তথ্য ঢাকাকে জানিয়েছে নেপিডো।

নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে এই কার্যক্রমে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনকে (ইউএনএইচসিআর) অনেক আগেই যুক্ত করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত করতে গড়িমসি করে। শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে নেপিডো থেকে ঢাকাকে জানান হয় যে, প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত করবে মিয়ানমার।

বিজ্ঞাপন

এ দিকে, গত ২ এপ্রিল মস্কোতে এক প্রেস কনফারেন্সে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সমাজকল্যান মন্ত্রী আগামী ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে জানিয়েছে নেপিডো। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে শতভাগ আন্তরিক। কিন্তু মিয়ানমারের কার্যকর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো মিয়ানমারের সৃষ্ট এই সঙ্কট বাংলাদেশের উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে।

ঢাকা এবং নেপিডোর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের সমাজকল্যান মন্ত্রী ড. উইন মায়াত আতায়-এর ঢাকা সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক করা। তিনি ১১ এপ্রিল দিবাগত রাতে নেপডো থেকে ঢাকা আসবেন। পরদিন কক্সবাজারের একাধিক রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যাবেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ড. উইন মায়াত আতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফর শেষে ১৪ এপ্রিল ঢাকা ছেড়ে নেপিডো যাওয়ার কথা মিয়ানমারের সমাজকল্যান মন্ত্রীর।

গত বছরের আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর নির্যাতন শুরু হলে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বর্তমানে কক্সবাজারের একাধিক শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন