বিজ্ঞাপন

‘এস কে সিনহার দুর্নীতির তদন্ত চান বিশিষ্টজনেরা’

April 3, 2018 | 8:13 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ‘একটা স্বাধীন দেশের প্রধান বিচারপতিকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করাটা সরাসরি সংবিধান পরিপন্থী। অথচ এই দেশে সেটি হয়েছে। টেলিভিশনে এস কে সিনহাকে উদ্দেশ্য করে ‘তুই’ সম্বোধন করা হয়েছে। একজন বিচারপতি তিনিও একজন মানুষ, তিনি দুর্নীতি করতেই পারেন। কিন্তু তার দুর্নীতিটা কী? তা জনগণের জানার অধিকার হয়েছে। অবিলম্বে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ‘দুর্নীতি’র তদন্ত করতে হবে।’

মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘আইনের শাসন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোল টেবিলে এমন দাবি তোলেন বক্তারা।

সুজনের সহসভাপতি বিচারপতি কাজী এবাদুল হকের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনে ওই গোলটেবিলে বক্তব্য রাখেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম, বিচারপিত আব্দুল মতিন, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, সাংবাদিক গোলাম মর্তুজাসহ অনেকে।

বিজ্ঞাপন

ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। কেউ যদি ৩০০ আসন দখলে নিয়ে বলে যে, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ নয়, তবে তা কেউ মানবে না। সুতরাং যারা বলেন যে রাষ্ট্র কিংবা গণতন্ত্র সব শেষ হয়ে গেছে সেটি হয়তো পুরোপুরি ঠিক নয়। স্বাধীনতার পর সংবিধান কাটা-ছেড়া হয়েছে সত্যি, কিন্তু তা এখনও টিকে রয়েছে।

তার মতে, আইনের শাসন কখনোই সরকার কিংবা শাসক শ্রেণি নিশ্চিত করবে না, যতক্ষণ না রাষ্ট্রের মূল মালিক জনগণ নিস্ক্রিয় থাকবে। তাই আমাদের সক্রিয় হতে হবে।

ব্যরিস্টার আমির উল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আমাদের মূল বিষয় ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার। এর সঙ্গে ছিল ন্যায়ানুগ ও নিয়মানুগ সরকার গঠন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর অনেক কিছুই অনুপস্থিত।

বিজ্ঞাপন

 

 

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আইনের শাসন বলতে বোঝায় যেখানে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকবে, অন্যায়কারীরা থাকবে ভীত এবং রাষ্ট্রের সবচেয়ে দুর্বল মানুষটি থাকবে নিরাপদে। তার মতে, রাষ্ট্রের কম গণতন্ত্র গ্রহণ করা যায় কিন্তু আইনের শাসনের অনুপস্থিতি মেনে নেওয়া যায় না। কেন না, তা হলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশে আইনের শাসনের যে অনুপস্থিতি তা বুঝতে বেশি দূর যেতে হয় না। এ দেশে সবখানে কোটা প্রথা চালু হয়ে গেছে। এটা সংবিধানের কোথায় লেখা আছে? এটা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সিদ্ধ?

দেশে ভিআইপি-ভিভিআইপি প্রথার সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, এমন বিভাজন করার ক্ষমতা তাদের কে দিয়েছে? সরকারের টাকায় যারা ভ্রমন করে তারাতো থাকবে পেছনের সিটে। যারা নিজের টাকায় ভ্রমন করবে তাদেরই-তো সামনের সিটে বসার কথা। অথচ একটি শ্রেণি ফায়দা লুটতে এমন সংবিধান ও চেতনা বিরোধী ব্যবস্থা চালু করেছে।

তিনি বলেন, কোটা দেওয়া হয় পিছিয়ে পড়াদের জন্য, দরিদ্র কিংবা ক্ষীণকায়দের টিকিয়ে রাখার জন্য। সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা মোটেই পিছিয়ে পড়া নন। তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের কোটার আওতায় এনে সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে। তারাও এর থেকে মুক্তি চান।

রাষ্ট্র যখন সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ তখন আইন বা বিচার বিভাগ কি তাদের ওপর সংবিধান আরোপিত দায়িত্ব পালন করতে পারছে? এমন প্রশ্নে বক্তারা বলেন, কোনো কোনো যায়গায় তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছেন। বিশেষ করে জনগণ যখন ভোটাধিকার বঞ্চিত হচ্ছে তখন ব্যক্তি যেমন আদালতে যাচ্ছেন না তেমনি কোনো বিচারকও নিজ ইচ্ছায় রুল জারি করছেন না।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অপসারণ বিষয়ে ড. কামাল বলেন, একটি স্বাধীন দেশে একজন প্রধান বিচারপতিকে যেভাবে সরানো হয়েছে তাতে আমি উদ্বিগ্ন। এটা তারা করতে পারেন না।

সংবিধান কিংবা রাষ্ট্র বিরোধী এ কাজের বিরোধিতা হওয়া উচিত ছিল। আমি মনে করি এটা নিয়ে একটা ক্যাম্পেইন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

আইনের শাসনের বর্তমান প্রেক্ষিতের কড়া সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. আসিফ নজরুল বলেন, আইন প্রণয়ন হতে হবে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিদের দ্বারা। এর জন্য নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ ও অবাধ। ভোট ডাকাতি করাদের জনগণের জন্য আইন করার কোনো অধিকার নেই। সে আইন জনগণ মানতে বাধ্য নয়।

পরিবেশ আইনজীবী ড. রিজওয়ানা হাসান বলেন, আইনের শাসনের সবচেয়ে বড় শর্ত হল, আমার হ্যা বা না বলার অধিকার থাকতে হবে। এর মাধ্যমেই আমি কোনো সিদ্ধান্তকে গ্রহণ কিংবা বর্জনের অধিকার পাব। কিন্তু সেটি আজ অনুপস্থিত। কিন্তু সে কথা কে বলবে। একজন বিচারপতি সে কথা বলতে পারেন তাকে অপহরণ করা সিরিয়াস ব্যাপার। কিন্ত আমরাতো অপহরণ হই। তারপরও একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কথা বলতেই হয়।

সারাবাংলা/এমএস/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন