বিজ্ঞাপন

ফুটবলে মেয়েদের ধারাবাহিক সাফল্যের গল্প

April 3, 2018 | 8:05 pm

জাহিদ-ই-হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: দেশের ফুটবল নিয়ে উচ্চ বাক্য করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসবে মেয়েদের ফুটবলটা। দেশের গ্রাম থেকে শহরের চায়ের আড্ডায় স্থান পাচ্ছে মেয়েদের অসাধারণ ফুটবল নৈপূণ্য গাঁথা। ধারাবাহিক সাফল্য দেখিয়ে চলছে বাঘিনীরা। এর পেছনের রহস্য কি?

কি এমন যাদু মন্ত্রে উদ্ভুদ্ধ চ্যাম্পিয়ন মেয়েরা?

ফুটবলে যাদুমন্ত্রের স্থান নেই। পায়ে যাদুর দেখা তখনই পাবেন যখন কোনও খেলোয়াড় সেটার জন্য পরিশ্রম করে। সেটাই করেছে দুর্বার মেয়েরা।

বিজ্ঞাপন

নিয়মিত রুটিনে অনুশীলন ও খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনে দিচ্ছে টুর্নামেন্টের পর টুর্নামেন্ট সাফল্য। ঈর্শনীয় সাফল্যও বলতে পারেন। বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পাচ্ছে মারিয়া-কৃষ্ণা-শামসুন্নাহাররা।

গত বছরে অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে গিয়েছিল কৃষ্ণা-সানজিদারা। এরপর গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও অনূর্ধ্ব-১৫ মেয়েরাতো চ্যাম্পিয়নই হয়েছে হেসেখেলেই। সবশেষ হংকংকে প্রথমবারের মতো অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মারিয়ারা। গোলের পর গোল করে গেছেন। পুরো ম্যাচে অসাধারণ স্ট্যামিনার প্রদর্শন দেখিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সাফল্য ধরে রাখার মন্ত্রটা এসেছে ধারাবাহিক অনুশীলন ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তনের। খাবার নিয়ে রুটিন মেনে চলা। এগুলোই অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে মেয়েদের। স্ট্যামিনার বৈশ্বিক মাপকাঠিতে বিশ্বমানের হয়েছে মেয়েরা। এটা চারটি খানি কথা না।

দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার বাতিল করে বলতে পারেন ‘ইংলিশ’ খাবারে অভ্যস্থ করা হয়েছে তাদের। ভাতের উপর জোর কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

মেয়েদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের এই চিন্তাটা আসে প্রথমত পল স্মলির কাছ থেকে। বাফুফের টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টরের দায়িত্বে আছেন তিনি। ফুটবলের উন্নয়নের জন্যই এই খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের চিন্তা এসেছে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

পল স্মলি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়েদের নিয়ে বিশেষ ডেভলপমেন্ট চিন্তা রয়েছে। মেয়েরা যখন অনুশীলন করে, ম্যাচ খেলে তারা দমে যায়। তাদের রিকোভারি হচ্ছে কিনা এটা আমাদের নিশ্চিত করতে হয়। আমাদের নিশ্চিত করতে হয় তাদের খেলার যোগ্যতা বাড়ছে কিনা, অনুশীলনে বেশি সময় দিচ্ছে কিনা সেগুলোও নিশ্চিত করতে হবে।’

‘অনুশীলন বা খেলায় ইনজুরিতে পড়লে তাদের পুনর্বাসন সঠিকভাবে করা হচ্ছে কিনা সেটিও নিশ্চিত করতে হয়। প্রতিদিন পরিচর্যার মধ্যে রাখতে হয়। অনুশীলনে যে চাপের মধ্যে থাকে এবং শরীর থেকে যে পরিমাণ ঘাম বের হয় সেটার রিকোভারি করার চিন্তা করতে হয়। নিউট্রিশন নিশ্চিত করতে হয়।’ তিনি যোগ করেন।

দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো কী সেই প্রোটিন বা নিউট্রিশন দিতে পারছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে স্মলি জানান,‘ফুটবলাররা কি খাবার খেলে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও নিউট্রিশন শরীরে যোগ হবে সেটাও চিন্তা করতে হয়। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো খেলোয়াড়দের ঐ প্রয়োজনীয় নিউট্রিশন ও প্রোটিন দিতে পারছে না। ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের পেশি ইনজুরির রিকোভারিও এই দেশি খাবার দিয়ে হচ্ছে না। তাই এই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছি।’

সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই ভাতের বদলে বেশি করে শাকসবজি, ফলমুল, আঁশ জাতীয় খাবার, সবজি ও ভিটামিন জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ম্যালনিস, আপেল, কলা সরবরাহ করা হচ্ছে উচ্চ নিউট্রিশন নিশ্চিত করতে। আলু দেয়া হচ্ছে উচ্চ কার্বোহাইড্রেট যোগান দিতে। তাতে শরীরের পেশিগুলো মজবুত হয় বলে জানান স্মলি।

স্মলি আরও বলেন, ‘কোনো দেশই শুধু তাদের দেশীয় খাবার দিয়ে খেলোয়াড়দের নিউট্রিশন ও প্রোটিন নিশ্চিত করতে পারে না। নারী ফুটবলাররা দিনের তিনটি সেশনে অনুশীলন করে। তাই তাদের শরীরের উপর দিয়ে অনেক ঝক্কি যায়। সবকিছুর রিকোভারি দিতে এই উন্নত খাবার দিতে হয় তাদের। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনতে হয়। ইউরোপেও লিজেন্ড খেলোয়াড়রা তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে সফল হয়েছে।’

শুধু খাদ্যাভ্যাসই নয়, নারী ফুটবলারদের ঘুমের অভ্যাসেও পরিবর্তন এনেছেন পল স্মলি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একজন ফুটবলারকে দিনে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিৎ। রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমাবে, খুব সকালে উঠবে। কারণ ফুটবলাররা একইসঙ্গে খেলোয়াড় ও অ্যাথলেট। তাই তাদের ঘুমের অভ্যাসটাও নির্দিষ্ট হতে হবে। মেয়েরা রাত দশটায় ঘুমায়, ভোর ৬টায় অনুশীলনে ফেরে।’

এসবই বদলে দিয়েছে নারী ফুটবলকে। ফুটবলারদের জীবনটা হয় অনেক পরিশ্রমের। তাদের জীবনাচরণ হয় ভিন্ন। সেটাতে মানিয়ে নিয়ম মেনে চললেই সাফল্য ধরা দিবে স্বাভাবিকভাবেই।

সারাবাংলা/জেএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন